মুখের ঘা ভাল করার উপায় - মুখে ঘা হলে কি খাবার খেতে হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে আমাদের মুখে অনেক সময় কিছু ভুলের জন্য ঘা দেখা দেয়। সেই মুখের ঘা ভাল করার উপায় কি কি রয়েছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আমাদের মুখে ঘা হলে কি খাবার খেতে হয় ও কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমরা সারাদিনে অনেক কিছু খাবার খেয়ে থাকি পেট ভরানোর জন্য বা মুখে রুচি ভাব আনার জন্য। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে এই বাইরের খাবার খেতে খেতে আমাদের কিছু খাবারের প্রতি এল্যার্জি চলে আসে। যাতে করে আমাদের মুখে ঘা দেখা দেয়। যেটির কারণে আমরা অনেক কিছু খাবার খেতে পারি না।

মুখের-ঘা-ভাল-করার-উপায়
মুখের-ঘা-ভাল-করার-উপায়  

তাই আসুন জেনে রাখি যে, কোনো খাবারের প্রতি আমাদের যদি এল্যার্জি চলে আসে যেটির কারণে আমাদের মুখে ঘা দেখা দেয়। সেই মুখের ঘা ভাল করার উপায় গুলো কি কি হতে পারে আজকে আমরা জনাবো। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে মুখে ঘা হলে কি খাবার খেতে হয় ও কি কি খাবার খাওয়া যাবে  না সেটি নিম্নে বিস্তারিত............। 

মুখের ঘা ভাল করার উপায়ঃ

মুখের ঘা ভালো করতে ঘরোয়া উপায় এবং সঠিক যত্ন খুবই কার্যকর। প্রথমত, ঘা হওয়ার সময় মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর মুখ কুসুম গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি জীবাণু ধ্বংস করে এবং ঘা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল ঘায়ে লাগালে তা প্রাকৃতিকভাবে ব্যাথা কমিয়ে দ্রুত সেরে ওঠে ঘা। মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি এর অভাব হলে আমাদের শরীরে কি কি রোগ হয় জেনে নিন?

তাই মধু সরাসরি ঘায়ে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া আপনি তুলসী পাতার রস বা নারকেল তেলও ঘা শুকানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। মুখে ঘা হলে আপনি কমলা লেবু বা পেয়ারা বেশি করে খাবেন। কেননা এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মুখের ঘা দ্রুত ভালো হতে সাহায্য করে। পানি বেশি করে পান করুন এবং মশলাযুক্ত ও গরম খাবার থেকে বিরত থাকুন।

মুখে ঘা হলে কি খাবার খেতে হয়ঃ

মুখে ঘা হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যেটি নরম, পুষ্টিকর এবং ঘা ভাল করতে সাহায্য করে। ঠান্ডা ও নরম খাবার মুখের ঘায়ের জ্বালাপোড়া কমায় এবং আরাম দেয়। নিচে মুখে ঘা হলে খাওয়ার জন্য কিছু উপযুক্ত খাবার উল্লেখ করা হলোঃ

১। ঠান্ডা এবং নরম খাবারঃ

  1. দইঃ দই মুখের ঘায়ে আরাম দেয় এবং সংক্রমণ রোধ করে।
  2. ঠান্ডা দুধ বা দুধের সঙ্গে কলাঃ এটি ত্বক শীতল করে এবং আরাম দেয়।
  3. জেলি বা পুডিংঃ এ ধরনের খাবার সহজে  মুখে আরাম দায়ক ভাব আনে।

২। তরল খাবারঃ

  1. স্যুপঃ চিকেন স্যুপ বা সবজির স্যুপ ঘা ভালো করতে সাহায্য করে এবং শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে।
  2. ফলের রসঃ বিশেষ করে কমলার রস বা লেবুর রস, যা ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
  3. নারকেলের পানিঃ এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং মুখের ঘা আরোগ্যে সহায়তা করে।

৩। নরম এবং সহজপাচ্য খাবারঃ

  1. মাড়ি ভাত বা নরম খিচুড়িঃ সহজে খাওয়া যায় এবং মুখের ঘায়ে চাপ পড়ে না।
  2. পাকা কলাঃ ঘায়ে আরাম দেয় এবং পুষ্টি সরবরাহ করে আমাদের শরীরে।
  3. সেদ্ধ সবজি বা ম্যাশ করা আলুঃ এটি ঘায়ে আরাম দেয় এবং সহজে খাওয়া যায়।

৫। যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেনঃ

  1. মশলাযুক্ত ও ঝাল খাবার।
  2. গরম খাবার বা পানীয়, যা ঘায়ের ব্যথা বাড়াতে পারে।
  3. শক্ত খাবার, যেমন বাদাম বা চিপস।

মুখে ঘা হলে পুষ্টিকর, নরম এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। ঠান্ডা ও তরলজাতীয় খাবার ঘায়ে আরাম দেয় এবং ঘা সারতে সহায়তা করে। তবে, দীর্ঘস্থায়ী ঘা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়ঃ

মুখের ঘা ভাল করার উপায় কি সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে পেয়েছি। এবার জানবো কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়। সাধারণত মুখে ঘা সাধারণত ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন সি এবং আয়রনের অভাবে হয়ে থাকে।

  • ভিটামিন বি-১২-এর অভাবঃ

ভিটামিন বি-১২ রক্তকণিকা উৎপাদন এবং নার্ভ সিস্টেম সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে মুখে ঘা, জিহ্বায় ব্যথা, এবং ত্বকে ফেটে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি সঠিক নিয়ম মেনে ব্লাড প্রেসার মাপবেন তার কৌশল জানুন?

  • ভিটামিন সি-এর অভাবঃ

ভিটামিন সি ত্বক এবং টিস্যুর সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং মুখে ঘা বা ক্ষত দেখা দিতে পারে।

  • শরীরে আয়রনের অভাবঃ

আয়রনের অভাবে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় যা মুখে ঘা এবং জিহ্বার ব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি শরীরকে দুর্বল করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।

মুখের ভেতরে সাদা ঘা হয় কেনঃ

মুখের ভেতরে সাদা ঘা হওয়ার কারণগুলো হতে পারে যেমনঃ সংক্রমণ, ভিটামিনের অভাব, বা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি সাধারণত অ্যাপথাস আলসার নামে পরিচিত, যা শরীরের মেমব্রেনে ক্ষত তৈরি করে। ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন সি, এবং আয়রনের ঘাটতি মুখের ভেতরে সাদা ঘা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এছাড়া, অতিরিক্ত ঝাল বা মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, মুখ পরিষ্কার না রাখা, বা আঘাতের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। কখনও কখনও মুখের সাদা ঘা স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ফলেও দেখা যায়।

মুখের-ভেতরে-সাদা-ঘা-হয়-কেন
  মুখের-ভেতরে-সাদা-ঘা-হয়-কেন 

কিছু ক্ষেত্রে, এটি সংক্রমণ বা ভাইরাসের কারণে হতে পারে, যেমন ক্যানডিডা সংক্রমণ (মুখের থ্রাশ)। এছাড়া, অ্যালার্জি, হরমোনের পরিবর্তন, বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা থেকেও মুখের ভেতরে সাদা ঘা হতে পারে। তবিরেরেই রোগ বেশি দিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

মুখের ঘা এর এন্টিবায়েটিকঃ

মুখের ঘার চিকিৎসার জন্য সাধারণত সংক্রমণ ভাল করতে এবং ব্যথা কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে এটি ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া উচিত। যেমনঃ

আরো পড়ুনঃ আমাদের মাথা অতিরিক্ত ঘামে কেন তার কারণ জেনে নিন?

  • সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকঃ

  1. আমোক্সিসিলিন (Amoxicillin): ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে কার্যকর।
  2. মেট্রোনিডাজোল (Metronidazole): মুখের সংক্রমণ এবং ঘায়ের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
  3. ক্লিন্ডামাইসিন (Clindamycin): মুখের গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে কার্যকর।

  • স্থানীয় ব্যবহারের জন্য অ্যান্টিসেপটিক জেল বা মলমঃ

  1. ক্লোরহেক্সিডিন মাউথওয়াশঃ এটি মুখের ঘা পরিষ্কার রাখে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  2. বেঞ্জোকেইন জেল (Benzocaine Gel): এটি ঘায়ের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  3. ট্রাইঅ্যামসিনোলোন পেস্ট (Triamcinolone Paste): প্রদাহ ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।

  • সতর্কতাঃ

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না।
  2. মুখের ঘা যদি কয়েক দিনের মধ্যে না সারে বা ব্যথা বাড়ে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন

মুখের ভেতর সাদা ঘা হলে কি করণীয়ঃ

মুখের ঘা ভাল করার উপায় আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। এবার জানুন যে মুখের ভেতর সাদা ঘা হলে ঘরোয়া পদ্ধতি এবং মুখের যত্ন নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এর জন্য আপনাকে মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। গরম পানি নিয়ে মুখে কুল্কুচি করবেন কুল্কুচি করার সময় ১ চামচ বেকিং সোডা পানিতে ব্যবহার করতে পারেন, এটি মুখের পি,এইচ মান সঠিক রাখতে সক্ষম।

আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা করলে আপনি কি কি প্রদ্ধতি অবলম্বন করবেন তা জেনে রাখুন

তাছাড়া আপনি মধু বা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ঘায়ে লাগাতে পারেন। কারণ এগুলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং ব্যথা কমাতে কার্যকর। যদি ঘা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথা বাড়ে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের মুখে ঘা হলে মুখের ঘা ভাল করার উপায় গুলো কি কি হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে আমাদের মুখে ঘা হলে কি খাবার খেতে হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................... www.stylishsm.com



আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )





















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url