হালিম বানানোর রেসিপি - হালিম খেলে কি হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের মুখরোচ খাবারের জন্য হালিম বানানোর রেসিপি কীভাবে খুব সহজে তৈরি করবো। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই হালিম খেলে কি হয় আমাদের শরীরে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের যখন ভালো লাগে না বা মুখে কোনো খাবারের রুচ থাকে না। তখন আমরা সব সময় চটপটা বা মুখরোচ খাবার খুঁজি। যাতে করে আমাদের মুখে স্বাদ আসে খাবারের প্রতি। এই চটপটা খাবার বলতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের নাম বুঝায়। হালিম, চটপটি,ফুচকা আরো বিভিন্ন ধরনের খাবার।
![]() |
হালিম-বানানোর-রেসিপি |
তাই আসুন জেনে রাখি যে আমাদের মুখরোচ খাবারের বলতে এই হালিম বানানোর রেসিপি কীভাবে তৈরি করে আমরা হালাইম খেতে পারি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই হালিম খেলে কি হয় আমাদের শরীরে। নিম্নে বিস্তারিত............।
হালিম বানানোর রেসিপিঃ
হালিম একটি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে রমজান মাসে। আপনি চাইলে বাড়িতে সহজেই এই হালিম তৈরি করতে পারবেন। নিচে হালিম তৈরির করার সম্পূর্ণ রেসিপি দেওয়া হলো যেটি আপনি মেনে চললে ভাল মানের হালিম তৈরি করতে পারবেন। নিম্নে উদাহরণঃ
ডাল ও গমের মিশ্রণঃ
- গমঃ ১ কাপ দিতে পারেন
- মুগ ডালঃ ১/৪ কাপ দিবেন
- মসুর ডালঃ ১/৪ কাপ দিবেন
- তুর ডালঃ ১/৪ কাপ দিতে পারেন
- ছোলার ডালঃ ১/৪ কাপ দিতে পারেন
- ভুট্টার গুঁড়ো (ঐচ্ছিক) ২ টেবিল চামচ
- মাংসের জন্যঃ
- গরু কিংবা খাসির মাংসঃ ১/২ কেজি (ছোট টুকরো করে কাটা দিতে পারেন )
- আদা বাটাঃ ১ চামচ
- রসুন বাটাঃ ১ চামচ
- পেঁয়াজ বাটাঃ ২ চামচ
- হলুদ গুঁড়োঃ ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- তেলঃ ১/৪ কাপ
- লবণঃ স্বাদমতো
- মজাদার করার জন্য
- ভাজা পেঁয়াজঃ ১ থেকে ২ কাপ দিবেন
- ধনেপাতা কুচিঃ ২ চামচ
- কাঁচা মরিচ কুচিঃ ১-২ টি
- লেবুর টুকরাঃ ২-৩ টি
- তৈরি করার প্রক্রিয়াঃ
- সর্বপ্রথম মটর ডাল ধুয়ে ৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর প্রেসার কুকারে পানি দিয়ে ডালটি সেদ্ধ করে নিন। ভালো করে নরম না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন। (প্রেসার কুকার না থাকলে সাধারণ হাঁড়িতেও সেদ্ধ করা যাবে)।
- মাংস রান্না করাঃ
- কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- মশলা গুঁড়ো ও লবণ দিন এবং ভালো করে মসলা গুলো কষতে থাকুন।
- তারপরে মাংস যোগ করে ১০-১৫ মিনিট কষিয়ে নিন।
- পর্যাপ্ত পানি দিন এবং ঢেকে রান্না করুন যতক্ষণ না মাংস নরম হয়।
- হালিম বানানোর রেসিপি ক্ষেত্রে ডাল ও মাংস মিশ্রণঃ
- সেদ্ধ করা ডালের মধ্য মাংস গুলো মিশিয়ে নিন।
- একটি হাত ব্লেন্ডার দিয়ে সব গুলোকে ভালো করে মিহি পেস্ট করে নিন।
- ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন যেন মিশ্রণটি হালিমের মতো আকার ধারণ করে।
- পরিবেশনঃ
- তৈরি হওয়া হালিম একটি বাটিতে পরিবেশন করুন।
- উপরে ভাজা পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, এবং লেবুর টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
এই নিয়ম মেনে আপনি যদি হালিম রান্না করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার হাতে হালিম খেয়ে মানুষ আপনার প্রশংসা করতে লাগবে।
হালিম খেলে কি হয়ঃ
হালিম বানানোর রেসিপি এর সাথে সাথে এটাও জানুন যে হালিম খাওয়া কেন জরুরী। হালিম একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায় ও মুখে স্বাদ আনে। এতে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং প্রয়োজনীয় ফাইবার থাকে, যা শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। বিশেষত যারা রোজা রাখেন বা দীর্ঘক্ষণ উপবাস করেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
আরো পড়ুনঃ খাসির মাংস কীভাবে নরম করতে হয় ও কি কি মাংসে দিতে হয় জেনে রাখুন?
এছাড়া, হালিমে ব্যবহৃত মসলা ও উপাদানগুলো যেমনঃ আদা, রসুন, এবং গরম মশলা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এটি শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতেও সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত তেল এবং মশলাযুক্ত হালিম নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণমতো খাওয়াই উত্তম শরীরের জন্য।
হালিমে কি কি ডাল থাকেঃ
হালিম তৈরিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ডালের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। যা এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বাড়াতে সাহায্য করে। হালিমে যে ডালগুলো সাধারণত ব্যবহার করা হয় তাহলোঃ
- মুগ ডাল
- মসুর ডাল
- ছোলার ডাল
- তুর ডাল (আরহার ডাল)
- মাটির ডাল (অপশনাল)
এই ডাল একসাথে মিশিয়ে সেদ্ধ করে পরে মাংস ও অন্যান্য মশলার সঙ্গে মিশিয়ে হালিম প্রস্তুত করা হয়। ডালগুলো প্রোটিন এবং ফাইবারের ভালো উৎস হওয়ায় হালিম একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত।
হালিম বানাতে কি কি লাগেঃ
হালিম বানানোর রেসিপি কি কি তা আমরা উপরের তথ্যকে জানতে পেরেছি। এবার জানবো যে হালিম বানাতে কি কি উপকরণ লাগে আমাদের ঘরোয়া উপায়ে। আসুন জানি?
আরো পড়ুনঃ কি করে জানবেন গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে জানতে ক্লিক করুন?
- প্রধান উপকরণঃ
- সর্বপ্রথম গম নিন ১ কাপ
- মুগ ডালঃ ১/৪ কাপ
- মসুর ডালঃ ১/৪ কাপ
- ছোলার ডালঃ ১/৪ কাপ
- তুর ডালঃ ১/৪ কাপ
- গরু বা খাসির মাংসঃ ১/২ কেজি (ছোট টুকরো করা)
- মশলা ও অন্যান্য উপকরণঃ
- পেঁয়াজ বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
- আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়োঃ ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- তেল বা ঘিঃ ১/৪ কাপ
- লবণঃ স্বাদমতো
- হালিম বানানোর রেসিপি সাজানোর উপকরণঃ
- ভাজা পেঁয়াজঃ ১/২ কাপ
- ধনেপাতা কুচিঃ ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ কুচিঃ ২-৩ টি
- লেবুর টুকরাঃ ২-৩ টি
- আদার ফালি (ঐচ্ছিক) সামান্য
এই উপকরণগুলো একত্রে ব্যবহার করে হালিম প্রস্তুত করা হয়। সঠিক পরিমাণ ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে মজাদার ও পুষ্টিকর হালিম তৈরি করতে পারবেন ও সবার মন জয় করতে পারবেন।
হালিমের স্বাদ কেমনঃ
হালিমের স্বাদ এক কথায় বলতে হলে অতুলনীয় একটি খাবার। এটি মশলাদার, মাংসের রসালো গন্ধ এবং বিভিন্ন ডালের মিশ্রণ থেকে তৈরি হওয়া একটি ঘন ও ক্রিমি টেক্সচারের খাবার। হালিম খাওয়ার সময় মশলার উষ্ণতা এবং মাংসের কোমলতা মুখে মাখনের মতো গলে যায়, যা এর স্বাদকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। ডাল, এবং মাংস একত্রে মিশে এমন একটি সমৃদ্ধ স্বাদ তৈরি করে।
![]() |
হালিমের-স্বাদ-কেমন |
যা একদিকে পূর্ণতার অনুভূতি দেয় এবং অন্যদিকে রসনা মনকে তৃপ্ত করে তোলে। হালিমের উপর থেকে ভাজা পেঁয়াজ, ধনেপাতা, লেবুর রস এবং কাঁচা মরিচ দেওয়ার ফলে হালিমে একটি অতিরিক্ত টক-মিষ্টি-মসলাদার ফ্লেভার আসে। এটি এমন একটি খাবার, যা রোজা বা বিশেষ উপলক্ষ্যে খেলে দীর্ঘ সময় ধরে মনে থাকে। হালিমের স্বাদে এত বৈচিত্র্য রয়েছে যে একবার খেলে তা বারবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।
হালিমে কত ক্যালোরি থাকেঃ
হালিমে থাকা ক্যালোরির পরিমাণ বুঝা যায় এর মাধ্যম এটি কীভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর ওপর। সাধারণত, এক বাটি (প্রায় ২৫০ গ্রাম) হালিমে প্রায় "৩৫০-৪৫০" ক্যালোরি থাকতে পারে।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত আনারস খেলে কি আমাদের শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতি হয় জেনে নিন?
ক্যালোরির উৎসঃ
- মাংসঃ প্রোটিনের প্রধান উৎস, যা ক্যালোরির একটি বড় অংশ যোগ করে হামিলে থাকা মাংস দ্বারা।
- ডাল ও গমঃ কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার সরবরাহ করে থাকে আমাদের শরীরে।
- তেলঃ চর্বি থেকে উচ্চ ক্যালোরি যোগ হওয়ার কারণ
- মশলা ও অন্যান্য উপকরণঃ এগুলোর ক্যালোরি কম হলেও স্বাদ ও পুষ্টিতে অবদান রাখে।
হালিম একটি পুষ্টিকর এবং শক্তি-সমৃদ্ধ একটি খাবার, যা শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য এনার্জি দেয়। তবে যারা ডায়েট অনুসরণ করছেন, তাদের জন্য হালিম খাওয়ার সময় পরিমাণে সচেতন থাকা জরুরি।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের মুখরোচ খাবারের জন্য হালিম বানানোর রেসিপি কীভাবে তৈরি করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে হালিম খেলে কি হয় আমাদের শরীরে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url