গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো - পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিত? জেনে রাখুন?

আজকে আমরা জানবো যে নারীদের জন্য গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো তাদের শরীর ও নিজের বাচ্চাদের জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে নারীদের পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিত তাদের শরীর ফিট ও সুস্থ্য রাখার জন্য। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

একজন নারী যখন গর্ভবতি হয় তখন তাদের সেবাযত্ন বেশি করে করতে হয়। কারণ, গর্ভবতি মেয়েদেরকে বেশি ভারী কাজ করা নিষেধ করে থাকেন ডাক্তার। কেননা বেশি কাজ বা ভারী কাজ করলে তাদের ছেলের ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া ও তারা কীভাবে ঘুমাবে সেই বিষয় নিয়ে বাড়ির মানুষকে বিশেষ ভাবে সর্তক থাকতে হবে।

গর্ভবস্থায়-কোন-দিকে-ঘুমানো-ভালো
গর্ভবস্থায়-কোন-দিকে-ঘুমানো-ভালো 

তাই আসুন জেনে রাখি যে, নারীদের যখন গর্ভবতি হয় তখন গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো তাদের শিশুদের জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে মেয়েদের ক্ষেত্রে পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিত পুষ্টিকর। নিম্নে বিস্তারিত............।

গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালোঃ

গর্ভবস্থায় মেয়েরা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো। চিকিৎসকদের মতে, বাম দিকে ঘুমালে গর্ভবতী নারীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং গর্ভস্থ শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছায়। এটি মায়ের কিডনি থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল সরবারাহ করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ কোন দিকে মুখ করে ঘুমালে আপনার মন ও মাথা শান্ত থাকবে জেনে নিন?

বাম দিকে ঘুমানো গর্ভস্থ অবস্থায় শিশুর ওপর অতিরিক্ত চাপ কম পড়ে এবং হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব কমায়। অন্যদিকে, পিঠের ওপর শোয়া বা ডান দিকে বেশি সময় শোয়ার ফলে পেটের ওজন মায়ের শরীরের রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাম দিকে ঘুমানোর চেষ্টা করাই বেশি উপকারী এবং মায়ের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্য মাঝেমধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করা যেতে পারে। 

পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিতঃ

পেটে বাচ্চা আসার পর মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো তার সাথে এটাও খেয়াল রাখবেন যে গর্ভবস্থায় সঠিক পুষ্টি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। নিচে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য কিছু উপকারী খাবার উল্লেখ করা হলোঃ

১। ফল ও শাকসবজিঃ

  1. তাজা ফল যেমন, আপেল, কলা, কমলা, পেয়ারা এবং বেরি বেশি করে খাওয়া উচিত।
  2. শাকসবজি যেমন, পালং শাক, ব্রকলি, গাজর এবং টমেটো খাওয়া মায়ের জন্য ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সরবরাহ করে শরীরে।

২। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারঃ

  1. ডিম, মাছ, মুরগি, এবং লাল মাংস পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
  2. সয়াবিন, মসুর ডাল, ছোলা, এবং বাদামও প্রোটিনের ভালো উৎস।

৩। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারঃ

  1. দুধ, দই, পনির, এবং সয়া দুধ ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস।
  2. এগুলো শিশুর হাড় এবং দাঁতের গঠনে সহায়ক।

৪। আয়রনসমৃদ্ধ খাবারঃ

  1. আয়রনের ঘাটতি পূরণে পালং শাক, ডাল, লাল মাংস, এবং শুকনো ফল (যেমন কিশমিশ) খাওয়া দরকার।
  2. আয়রন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা রোধ করে।

৫। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ

  1. ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
  2. শাকসবজি, কমলা, এবং ডাল থেকে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

৬। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ

  1. মস্তিষ্কের বিকাশে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ।
  2. সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, এবং চিয়া বীজ এর ভালো উৎস।

৭। পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ

  1. প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  2. এটি ডিহাইড্রেশন রোধ করে এবং শরীরকে তরতাজা রাখে।

৮। যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিতঃ 

  1. কাঁচা মাছ বা মাংস, বেশি ক্যাফেইন, সফট ড্রিংকস, এবং অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  2. অতিরিক্ত লবণ এবং চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার মায়ের সুস্থতা এবং শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা মেনে চলা উচিত।

গর্ভবস্থায় বেশী শুয়ে থাকলে কি হয়ঃ

গর্ভবস্থায় অতিরিক্ত শুয়ে থাকা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে সারা দিন শুয়ে থাকা বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো সেটি মাথায় রাখবেন যাতে করে অতিরিক্ত শুয়ে থাকার ফলে রক্ত সঞ্চালন ধীর গতি হয়ে যেতে পারে।

গর্ভবস্থায়-বেশী-শুয়ে-থাকলে-কি-হয়
গর্ভবস্থায়-বেশী-শুয়ে-থাকলে-কি-হয় 

যা অক্সিজেন যাতায়াত বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডাক্তাররা সাধারণত গর্ভবতী নারীদের হালকা হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা প্রসবকালীন ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন, যা গর্ভাবস্থার জটিলতা কমিয়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়ক।

গর্ভবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকেঃ

গর্ভাবস্থায় গর্ভস্থ বাচ্চার অবস্থান পেটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয় হয়ে থাকে। সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বাচ্চা পেটের নিচের অংশে থাকে, কারণ তখন গর্ভাশয় ছোট থাকে। গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে গর্ভাশয় বাড়তে থাকে এবং বাচ্চা পেটের মধ্যভাগে অবস্থান নেয়। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে, অর্থাৎ তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, বাচ্চা সাধারণত মাথা নিচের দিকে এবং পায়ের অংশ উপরের দিকে অবস্থান করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা ডান বা বাম দিকে বেশি ঝুঁকে থাকতে পারে।

যা মায়ের শারীরিক গঠন, গর্ভাশয়ের আকার, এবং বাচ্চার নড়াচড়ার ওপর নির্ভর করে। বাচ্চার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করতে ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড বা এক্স-রে পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেন। গর্ভবতী মা যদি একপাশে চাপ অনুভব করেন বা কোনো অস্বস্তি অনুভব করেন, তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।

গর্ভবস্থায় কীভাবে বসে উচিতঃ

গর্ভবস্থায় সঠিকভাবে বসা মায়ের আরাম এবং গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় পেটের চাপের কারণে মায়ের শারীরিক ভারসাম্য বদলে যায়। তাই সঠিক ভঙ্গিতে বসা মায়ের জন্য স্বস্তি ও দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। সঠিকভাবে বসার জন্য মেরুদণ্ড সোজা রাখুন এবং চেয়ারের পিছনের অংশে পুরোপুরি ঠেস দিয়ে বসুন। পায়ের তলায় সম্পূর্ণ ভর দিয়ে মেঝেতে রাখুন এবং পা ক্রস করে বসা থেকে বিরত থাকুন। 

চেয়ার যদি খুব নিচু হয়, তাহলে একটি ছোট বালিশ বা কুশন ব্যবহার করে পিঠে সাপোর্ট দিন। বসার সময় পেটের উপর বাড়তি চাপ যেন না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যদি বসে কাজ করতে হয় তাহলে টেবিলের উচ্চতা এমনভাবে রাখবেন যাতে সামনের দিকে বেশি ঝুঁকতে না হয়। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন ও বসার পজিশন পরিবর্তন করবেন। যাতে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে।

গর্ভবস্থায় ঘুম না আসলে কি করণীয়ঃ

গর্ভাবস্থায় ঘুম না এলে শারীরিক এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখতে কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধ পান করুন, যা শিথিল হতে সাহায্য করে। শোয়ার আগে মন শান্ত রাখতে ধ্যান বা হালকা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। নরম এবং আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করতে পারেন যা পেট এবং পায়ের নিচে সাপোর্ট দেওয়ার কাজ করবে।

ঘুমানোর সময় ডান বা বাম কাত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করুন এবং পিঠের ওপর চাপ কম পড়ে। রাতের খাবার হালকা এবং ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে করে খাবার হজম হয়ে যায়। কোনো  কিছু করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম মা এবং শিশুর উভয়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়ঃ

গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো সেটি আপনি জানলেন এবার জানুন যে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া মা এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিভিন্ন জটিলতার কারণ হতে পারে। পানি শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং গর্ভাবস্থায় এটি আরও বেশি প্রয়োজনীয়, কারণ এটি মায়ের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শিশুর বর্ধনশীল চাহিদা পূরণ করে। পানি কম খেলে শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভবস্থায়-পানি-কম-খেলে-কি-হয়
গর্ভবস্থায়-পানি-কম-খেলে-কি-হয় 

পানি কম খাওয়ার কারণে মায়ের রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে, যা শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এটি প্রি-টার্ম লেবার বা শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়া, ডাবের পানি, ফলের রস, এবং তরলসমৃদ্ধ খাবারও পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন নারীদের জন্য গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুমানো ভালো তাদের বাচ্চাদের জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে পেটে বাচ্চা আসলে কি কি খাওয়া উচিত।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে। 

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................... www.stylishsm.com



আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url