কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত - বাম দিকে ঘুমালে কি হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীর ফিট ও সুস্থ্য রাখার জন্য কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত রাতের সময়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে ঘুমানোর ক্ষেত্রে বাম দিকে ঘুমালে কি হয় আমাদের শরীরে। ঘুমানোর সঠিক নিয়ম কি আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমরা অনেক সময় দেখি যে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের শরীর ক্লান্তি হয়ে থাকে। আমরা সঠিকভাবে শরীরে শক্তি পাই না। কারণ কিছু ভুল থাকে আমাদের ঘুমানোর ক্ষেত্রে। আমরা হয়তো জানি না যে, ঘুমানোর সঠিক নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য।

কোন-দিকে-ঘুরে-ঘুমানো-উচিত
কোন-দিকে-ঘুরে-ঘুমানো-উচিত  

তাই আসুন জেনে রাখি যে, আমরা যে রাতে ঘুমায় তা কীভাবে ঘুমানো উচিত ও কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত আমাদের। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে শরীর ফিট রাখার জন্য বাম দিকে ঘুমালে কি হয় আমাদের শরীরে। নিম্নে বিস্তারিত.........। 

কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিতঃ

ঘুমানোর জন্য ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া সবচেয়ে উপকারী বলে মনে করা হয়। ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের জন্য ভালো। ডান দিকে ঘুমালে হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কম পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।

আরো পড়ুনঃ কোন দিক মুখ রেখে আপনি নামাজ পড়লে আপনার নামাজ আদায় হবে জেনে নিন?

বাম দিকে শোয়া কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারি শরীরের জন্য যেমন এটি হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং হজমে সমস্যা করে। এছাড়া, পিঠের বলে শোয়া বা উপুড় হয়ে শোয়া শ্বাসকষ্ট বা ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তাই সুস্থ্যতার ও আরামের জন্য ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া সবচেয়ে ভালো। 

বাম দিকে ঘুমালে কি হয়ঃ

বাম দিকে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে, যা শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তা বিস্তারিত নিম্নে জেনে নিন?

  • উপকারিতাঃ

  1. বাম দিক হয়ে ঘুমালে আমাদের পাকস্থলীর খাদ্য নিচের দিকে চলে যায়। যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
  2. গর্ভবতী নারীদের জন্য বাম দিকে ঘুমানো নিরাপদ, কারণ এটি রক্ত প্রবাহ সঠিক রাখে এবং গর্ভস্থ শিশুর উপর চাপ কম ফেলে।
  3. লিভারের ওপর চাপ না পড়ায় এটি কিছু ক্ষেত্রে লিভারের জন্য ভালো।

  • অসুবিধাঃ

  1. হৃদযন্ত্রের ওপর চাপঃ বাম দিকে ঘুমালে হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  2. ফুসফুসে চাপঃ বাম দিকে বেশি সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকলে ফুসফুসে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অস্বস্তিঃ কিছু মানুষ বাম দিকে ঘুমালে পেট এবং বুকের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করেন।

বাম দিকে ঘুমানো নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। আর ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের জন্য ভালো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানো উচিতঃ

পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানো উচিত "নয়" কারণ, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত। ভারতীয় আয়ুর্বেদ এবং শাস্ত্র অনুযায়ী, পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমালে শরীরে নেতিবাচক শক্তির প্রবাহ ঘটতে পারে। এটি মানসিক অস্থিরতা, খারাপ স্বপ্ন, এবং ক্লান্তি বাড়িয়ে তোলে শরীরে। বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানো ক্ষতিকারক একটি দিক।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবস্থায় কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত ছেলে ও মায়ের জন্য বিস্তারিত জেনে নিন?

পশ্চিম দিকে ঘুমালে এটি রক্তচাপ বাড়াতে এবং ঘুমের গুণমান কমাতে পারে। তাই, পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানো পরিত্যাগ করা উচিত।

কোন দিকে পা দিয়ে ঘুমানো উচিতঃ

কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত ও কোন দিকে পা দিয়ে ঘুমানো উচিত জানুন। পূর্ব বা উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো মানসিক শান্তির জন্য বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়। আয়ুর্বেদ এবং বাস্তব শাস্ত্র অনুযায়ী, এই দুটি দিকে পা দিয়ে ঘুমানো ভালো। কারণ এগুলো শরীরে পজিটিভ শক্তি প্রবাহে সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ব দিকে পা দিয়ে ঘুমালে মানসিক চাপ কমে এবং মন শান্ত থাকে। এটি জ্ঞান ও চিন্তা শক্তি বাড়ায়। 

অন্যদিকে, উত্তর দিকে পা দিয়ে ঘুমানো রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায় এবং ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি করে। এটি শরীরের শক্তি এবং ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সঠিক দিক নির্ধারণের জন্য আয়ুর্বেদ ও বৈজ্ঞানিক দিক বিবেচনা করে ঘুমানো উচিত।

ইসলামে ঘুমানোর সঠিক দিকঃ

কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত তা হলো ইসলামে ঘুমানোর জন্য ডান কাতে শোয়া এবং কিবলার দিকে মুখ করে ঘুমানোকে সুন্নত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘুমানোর সময় ডান দিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকতেন এবং এটাই ইসলামের আদের্শক্রমে ঘুমানোর সঠিক পদ্ধতি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন "তোমরা ডান কাতে শোবে এবং ডান হাতে মাথা রেখে ঘুমাবে।" (সহীহ বোখারি)।

ইসলামে-ঘুমানোর-সঠিক-দিক
ইসলামে-ঘুমানোর-সঠিক-দিক 

ডান দিকে শোয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে উপকার এর জন্য ভালো। এছাড়া, ঘুমানোর আগে ওযু করে পরিষ্কার বিছানায় শোয়া, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া সুন্নত। এটি শুধু আধ্যাত্মিক শান্তি দেয় না, বরং মানসিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই ইসলামে ঘুমানোর সঠিক দিক হলো ডান কাতে শুয়ে কিবলার দিকে মুখ করে ঘুমানো।

বাম কাত হয়ে শোয়ার অউপকারিতাঃ

কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত সেটি আমরা জানলাম এবার জনাবো যে বাম কাত হয়ে শোয়ার কিছু অসুবিধা রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ এবং আধুনিক বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই ডান কাতে শোয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ বাম দিকে শোয়ার কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

  • বাম কাত হয়ে শোয়ার অসুবিধাঃ

  1. হৃদযন্ত্রের ওপর চাপঃ বাম দিকে শোয়ার সময় শরীরের ওজন হৃৎপিণ্ডের ওপর পড়ে ফলে শরীরে চাপ সৃষ্টি করে। যা রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  2. ফুসফুসের সংকোচনঃ বাম দিকে শোয়ার সময় ফুসফুস সঠিকভাবে প্রসারিত হয় না। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  3. হজমে সমস্যাঃ বাম কাতে শোয়ার ফলে পাকস্থলীতে খাবার ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না ফলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  4. অস্বস্তি এবং ক্লান্তিঃ বাম দিকে বেশি সময় শোয়ার কারণে শরীরে অস্বস্তি এবং ক্লান্তি ভাব আসতে পারে।
  5. অম্বল বা গ্যাসঃ বাম দিকে শোয়ার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠতে পারে, যা অম্বল বা গ্যাসের সমস্যা বাড়ায়।

রাতে কোন পাশ হয়ে ঘুমানো উচিতঃ

রাতে ডান পাশ হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্য এবং ইসলাম দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে উপকারী। ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ডান কাতে শোয়ার সুপারিশ করেছেন সকল  বিশ্বব্যাপিকে। যা শরীরের জন্যও ভালো। ডান পাশে শোয়ার সময় হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কম পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। 

ডান পাশে ঘুমানো পাকস্থলীর জন্যও উপকারী, কারণ এতে খাদ্য সহজে হজম হয় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কম হয়। এছাড়া, এটি ফুসফুসের ওপর কম চাপ সৃষ্টি করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বস্তির জন্য রাতে ডান পাশ হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য কোন দিকে ঘুরে ঘুমানো উচিত। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে বাম দিকে ঘুমালে কি হয় আমাদের শরীরে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com



আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
































এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url