দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় - দোলযাত্রা কেন পালন করা হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী এই দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় ও কীভাবে রীতিনীতি মানতে হয়। তার সাথে সাথে এটাও জানবো এই দোলযাত্রা কেন পালন করা হয় হিন্দু শাস্ত্রে ও এই পূর্ণিমা পালন করলে কি পূর্ণা পাওয়া যায়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
হিন্দু শাস্ত্রে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ পালন করার রীতিনীতি পালন করার প্রথা প্রচালিত করে হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্রে পূজা কিছু কিছু রয়েছে আর বাকি গুলো হচ্ছে পার্বণ। যেগুলো আমরা ১২ মাসে ১৩টা পূরণ করে থাকি। হিন্দু শাস্ত্রে এই রকম হাজার হাজার রীতিনীতি রয়েছে যেগুলো আমাদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
![]() |
দোল-পূর্ণিমায়-কি-করতে-হয় |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কেন এই দোল পূর্ণিমা করে থাকে হিন্দু মানুষ ও এই দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় ও কীভাবে এর রীতিনীতি মানতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই দোলযাত্রা কেন পালন করা হয় ও এর পিছে রহস্য কি। নিম্নে বিস্তারিত.........।
দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয়ঃ
দোল পূর্ণিমা হিন্দু ধর্ম মানুষের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্মরণে পালন করা হয়। এই দিনে ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করে, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার পূজা করে থাকেন এবং আবির ও রঙ খেলা করে হিন্দু মানুষেরা আনন্দ উদযাপন করে। বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের লোকেরা কীর্তন, ধর্মীয় গান ও ধর্মীয় আলোচনা করে দিনটি পালন করে। দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় সেটি হচ্ছে আবির ও রঙ খেলা করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্রে পুরাণ কে লিখেছেন ও কয়ভাগে ভাগ করে লিখেছেন জেনে নিন?
যেখানে ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের মানুষ একে অপরকে রঙ মাখিয়ে আনন্দ উৎযাপন করেন। এছাড়া, বাড়িতে বিশেষ প্রসাদ, মিষ্টি ও পায়েস তৈরি করে থাকেন এবং ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রসাদ দিয়ে তারপরে সবাই একসঙ্গে গ্রহণ করে। তাই বলা যায় যে, দোল পূর্ণিমা শুধুমাত্র রঙ খেলার উৎসব নয়, বরং এটি ভক্তি, ভালোবাসা ও আনন্দের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।
দোলযাত্রা কেন পালন করা হয়ঃ
দোলযাত্রা হিন্দু ধর্মের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্মরণে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দোল যাত্রা সাধারণত ভক্তি, ভালোবাসা ও আনন্দের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে মানুষের কাছে। এই দিনে মানুষ মনে করেন যে শ্রীকৃষ্ণ নিজে আবির ও রঙ খেলার মাধ্যমে রাধা ও গোপীদের সঙ্গে এই দোল যাত্রা পালন করে ছিলেন। তাই ভক্তরা এই উৎসব পালন করে একে অপরের সঙ্গে রঙ মাখামাখি করে।
আরো পড়ুনঃ গঙ্গা স্নান করার কি কি নিয়ম পালন করতে হয় ও কি মন্ত্র পড়া উচিত জেনে নিন?
দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় সেটি হচ্ছে প্রেম, ভালবাসা ও ভক্তির মাধ্যমে জীবের সঙ্গে ঈশ্বরের মিলন। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের কীর্তন, হরিনাম সংকীর্তন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে থাকেন ও সব মানুষ এই দিনে প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠেন যা সৌন্দর্য দিন বয়ে আনে।
দোল উৎসব কোন ঋতুতে হয়ঃ
দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে জানতে পেরেছি এবার জানুন দোল পূর্ণিমা কোন ঋতুতে করতে হয়। শাস্ত্র অয়ানুজায়ী দোল উৎসব "বসন্ত" ঋতুতে পালন করা হয়। যা বাংলা মাসে ফাল্গুন বা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বসন্ত ঋতু প্রকৃতির পরিবর্তনের তখন চারদিকে রঙিন ফুল ফোটে, শীতের বিদায় ঘটে এবং গরমের আগমন হয়।
আরো পড়ুনঃ ভগবান শিবের পূজা করার জন্য কি কি উপকরণ লাগে বিস্তারিত জেনে নিন?
এই সময়ে দোল উৎসবের রঙিন পরিবেশের সবাই রঙের সঙ্গে মিশে যায়। যা শাস্ত্র বলেগেছেন এই দোলযাত্রায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বসন্ত ঋতুতেই রাধা ও গোপীদের সঙ্গে রঙ খেলেছিলেন এই হিন্দু মানুষেরা এই উৎসব পালন করে থাকেন।
কৃষ্ণ কেন হোলি পালন করেঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হোলি পালন করেছিলেন ও দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় সেটি আমাদের শাস্ত্র অনুযায়ী কৃষ্ণের মা তাকে বলছিলেন যে যাও রাধাকে রঙ দিয়ে আসো তোমার মনের মতো। তখন কৃষ্ণ তাকে রঙ দেয় এবং কি তিনি গোপীদের সঙ্গেও রঙ মাখামাখি করেন তখন থেকে হিন্দু মানুষেরা এই রঙ খেলাকে হোলি বা দোলযাত্রা হিসাবে পালন করে থাকে। এর কারণ, পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, কৃষ্ণ ছোটবেলায় শ্যামবর্ণ ছিলেন এবং রাধা ছিলেন গৌরবর্ণ।
আরো পড়ুনঃ গভবান শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী কি ধরনের ছিল ও কি কি রহস্য রয়েছে জেনে নিন?
কৃষ্ণ মায়ের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন রাধার রঙ এত উজ্জ্বল, আর তিনি এত কেন শ্যামবর্ণ? তখন যশোদা মা কৃষ্ণকে বলেছিলেন, রাধার গায়ে রঙ মেখে দিলে দু’জনের রঙ এক হয়ে যাবে। এরপর কৃষ্ণ রঙ নিয়ে রাধার গায়ে রঙ মেখে দেন এবং গোপীদের সঙ্গে আনন্দ করেন, যা পরবর্তীতে হোলি উৎসবের রীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। হোলি শুধু রঙের উৎসব নয়, এটি সাম্য, ভালোবাসা ও সকল ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে আনন্দ করার প্রতীক।
দোল পূর্ণিমা উৎসব কিঃ
দোল পূর্ণিমা হলো একটি হিন্দু ধর্মের্ট বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব যা সকল হিন্দু মানুষ পালন করে থাকে। এই উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের লীলার স্মরণে উদযাপিত হয় করা হয়। এটি ফাল্গুন বা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথি অনুযায়ী পালিত হয় এই দিনে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার মূর্তি দোলায় বসিয়ে বিশেষ পূজা, কীর্তন ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন এবং রঙ মাখামাখি করে।
![]() |
দোল-পূর্ণিমা-উৎসব-কি |
শাস্ত্র বলেন যে দোল পূর্ণিমার দিন গঙ্গাস্নান, দান-ধ্যান ও প্রসাদ বিতরণ করা শুভ বলে মনে করা হয় যাতে করে পাপ কাজ বিনাশ হয়। এই দোল পূর্ণিমা বিভিন্ন শহরে ও দেশে পালন করা হয় যেমনঃ বাংলাদেশে, ইন্ডিয়ার রাজস্থান, ওড়িশা,আসাম ইত্যাদি বিভিন্ন জাইগায় মানুষ খুব আনন্দের সাথে এই উৎসব পালন করে থাকেন। দোল পুর্ণিমায় প্রকৃতির রঙিন সৌন্দর্যের সঙ্গে মানুষের মনও আনন্দে ভরে ওঠে।
দোল পূর্ণিমা পূজার মন্ত্রঃ
দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় আসা করি জেনে গেছেন কিন্তু এই নিয়ম পালন করতে হলে বিশেষ একটা মন্ত্র পড়া লাগে। যা দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার পূজা করার ক্ষেত্রে এই জপ পড়তে হয়। এই মন্ত্রগুলো ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আশীর্বাদ লাভের জন্য উচ্চারণ করা হয়। তাহলোঃ
"ওম শ্রী কৃষ্ণায় নমঃ"
"কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরে পরমাত্মনে"।
প্রাণনাথ ক্লেশানশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।
আরো পড়ুনঃ রামায়ণে করটি কান্ড রয়েছে ও কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে তা জেনে নিন?
- বাংলা উচ্চারণঃ
"কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে"।
প্রণতঃ ক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ॥"
দোল পূজা করার প্রদ্ধতিঃ
পূর্ণিমায় কি করতে হয় ও এই পূজা করার প্রদ্ধতি জানুন, দোল পূজা হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা হিন্দু মানুষেরা মনে করেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার স্মরণে এই দোল পূর্ণিমা পালন করা হয়। এই দিনে সবাই রাগ,অভিমান,শত্রুতা ভুলে সবাই রঙ খেলে নতুন দিন পূর্ণাতা পায়।
- দোল পূজা করার সঠিক পদ্ধতিঃ
- যেদিন দোল পূর্ণিমা পূজার দিন হয় সেদিন সবাই গঙ্গা নদীতে ভোরবেলা স্নান করে নতুন পরিষ্কার পোশাক পরেন বিশেষ করে পাঞ্জাবি ও পায়জামা।
- যে স্থানে করার হয় সে স্থান আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। তারপরে পূজা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ বা রাধার মূর্তি বা ছবি সেখানে স্থাপন করতে হবে।
- দোল পূজার জন্য ফুল, আবির (গোলাপি, লাল, হলুদ রঙ), তুলসী পাতা, ধূপ, প্রদীপ, চন্দন, প্রসাদ (মিষ্টি, দই, ফল), পানীয় জল এবং গঙ্গাজল লাগে দোল পূজা করার ক্ষেত্রে।
- পূজার প্রক্রিয়াঃ
- সবার আগে ভগবানের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে শঙ্খধ্বনি ও মন্ত্র পড়ে পূজা শুরু করতে হবে।
- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার মূর্তিতে গঙ্গাজলের সাথে তুলসী পাতা ছিটিয়ে তাদেরকে শুদ্ধ করতে হয়।
- কৃষ্ণ ও রাধাকে তুলসী পাতা, চন্দন, ফুল ও আবির তাদের সামনে রাখতে হয় যাতে করে তারা আগে আবিরের আরাধনা নিতে পারে।
- ধূপ ও দীপ জ্বালিয়ে তাদের আরতি করতে হবে এবং শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করতে হবে।
"ওম শ্রী কৃষ্ণায় নমঃ"
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।"
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।"
আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে আপনি মন্দির দর্শন করবেন পুরো নিয়ম মেনে জানুন?
- আবির ও রঙ উৎসর্গ করাঃ
- রঙ খেলার আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিতে আবির ও গুলাল লাগাতে হয় এটি হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র বলেগেছেন।
- অভিমান,শত্রুতা সব কিছু ভুলে সব পরিবারের সদস্যদের ও ভক্তদের মাঝে আবির ছিটিয়ে প্রেম ও আনন্দ ভালবাসা সবার মাঝে ছড়াতে হয়।
- প্রসাদ বিতরণ ও কীর্তনঃ
- দোল পূজার শেষে মিষ্টি, দই, ফল, খির ও অন্যান্য প্রসাদ ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে হবে। যাতে করে ভগবান সুন্তষ্টু হতে পারে।
- পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে সব প্রসাদ বিতরণ করতে হবে এটি নিয়ম।
- কীর্তন ও হরিনাম সংকীর্তন গাওয়া অর্চনা করা এই দোল পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
- দান-ধ্যান ও গঙ্গাস্নানঃ
- দোল পূর্ণিমার দিনে গঙ্গাস্নান বা পবিত্র জল দিয়ে স্নান করা অত্যন্ত শুভ কামনা বলে মনে করা হায়।
- দোল পূর্ণিমার দিন আপনাকে গরিব ও অভাবী মানুষকে অন্ন, বস্ত্র বা অর্থ দান করতে হবে যেটি করা আমাদের শাস্ত্র ও ধর্ম আমাদেরকে শিখিয়েছে।
দোল পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ভক্তি, ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আনন্দের প্রতীক। তাই জন্য এই পূর্ণিমা সবাই পালন করে থাকেন।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দোল পূর্ণিমায় কি করতে হয় ও কীভাবে করতে হয় পূজা। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে দোলযাত্রা কেন পালন করা হয় হিন্দু ধর্মে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url