গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে - গরুর মাংস রান্নার মসলা? জেনে রাখুন?
আজকে আমরা জানবো যে মাংসের ক্ষেত্রে এই গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে যেটি আমাদের শরীরের প্রয়োজন হয়ে থাকে শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে গরুর মাংস রান্নার মসলা কি ধরনের হয়ে থাকে। যেটি আমরা রান্না সময় ব্যবহার করতে পারবো। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমরা প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে ২-৩ দিন নিজের বাড়িতে গরুর মাংস খাই। আমাদের শরীরে শক্তি যোগা দেয়। মুখে মুখরুচ ভাব আনে সে জন্য আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু আমি জানি না যে এই গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে। কতটুকু প্রোটিন থাকে আমরা কিন্তু কিছু জানি না।
![]() |
গরুর-মাংসে-কত-ক্যালোরি-থাকে |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, আমদের শরীরের ভিটামিনের জন্য গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে ও কীভাবে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই গরুর মাংস রান্নার মসলা রেসিপি গুলো কি ধরনের হয়। যেটি আমরা ব্যবহার করে ভাল মানের রান্না করতে পারবো। নিম্নে বিস্তারিত.........।
গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকেঃ
গরুর মাংসে ক্যালোরির পরিমাণ এর কাট, প্রস্তুত প্রণালী, এবং চর্বির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ১০০ গ্রাম চর্বিহীন (লিন) গরুর মাংসে প্রায় ২৫০-২৭০ ক্যালোরি থাকে। তবে, যদি মাংসে চর্বি বেশি থাকে। তাহলে একই পরিমাণে ক্যালোরি বেড়ে ৩০০-৩৫০ ক্যালোরি পর্যন্ত হতে পারে। গরুর মাংস প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি সহজে খাসির মাংস নরম করবেন ও মাংস সুস্বাদু করবেন জেনে নিন?
কিন্তু এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মাংস গ্রিল, বেক বা কম তেলে রান্না করলে ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়। অন্যদিকে, যদি এটি বেশি তেল বা মসলা দিয়ে রান্না করা হয়, তাহলে ক্যালোরির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে গরুর মাংস পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
গরুর মাংস রান্নার মসলাঃ
গরুর মাংস রান্নার জন্য সঠিক মসলা ব্যবহার করলে এটি মজাদার এবং সুস্বাদু হয়। নিচে গরুর মাংস রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় মসলার তালিকা দেওয়া হলোঃ
যেভাবে মসলা তৈরি করবেনঃ
- হলুদ গুঁড়োঃ ১ চা চামচ (মাংসে রঙ এবং স্বাদ আনতে)
- মরিচের গুঁড়োঃ ১-২ চা চামচ (স্বাদ অনুযায়ী ঝাল করতে)
- ধনিয়া গুঁড়োঃ ১ চা চামচ (গন্ধ এবং স্বাদের জন্য)
- জিরা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ (মশলায় ভারসাম্য আনতে)
- গরম মসলা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ (গন্ধ এবং সমৃদ্ধ স্বাদের জন্য)
- তেজপাতাঃ ২টি (ফোড়নের জন্য)
- এলাচঃ ৩-৪টি (মিষ্টি গন্ধের জন্য)
- দারুচিনিঃ ২ টুকরা (গন্ধ এবং স্বাদে গভীরতা আনতে)
- লবঙ্গঃ ৩-৪টি (খাসা গন্ধের জন্য)
- আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজঃ ৪-৫টি (মিহি কাটা, মশলার ঘনত্ব বাড়াতে)
- টমেটোঃ ১-২টি (মসলা ঘন এবং টক স্বাদ আনতে)
- লবণঃ স্বাদ অনুযায়ী
- ব্যবহারের টিপসঃ
- তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ এবং লবঙ্গ ফোড়ন দিন। এরপর পেঁয়াজ এবং মশলা একে একে দিয়ে মিশিয়ে নিন।
- মাংস এবং মসলা ভালোভাবে কষানো হলে এতে টমেটো যোগ করুন এবং কিছুক্ষণ রান্না করুন।
- শেষে ধনেপাতা বা গরম মসলা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন।
এই মসলা গরুর মাংসের রন্ধনপ্রক্রিয়ায় গভীর স্বাদ এবং গন্ধ এনে দেয়। সঠিক পরিমাণে এবং পর্যায়ক্রমে মসলা ব্যবহার করলে গরুর মাংস আরও সুস্বাদু হবে।
গরুর মাংস রান্না করার রেসিপিঃ
গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে জানতে পেরেছি। এবার জানবো যে গরুর মাংস একটি জনপ্রিয় খাবার, যা মশলা এবং সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। এটি ভাত, পোলাও বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। নিম্নে কিছু রেসিপি টিপস দেওয়া হলো দেখে নিন?
আরো পড়ুনঃ উটের মাংস খাওয়া হারাম না"কি হালাল ও এই মাংসের স্বাদ কেমন জেনে রাখুন?
- প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- গরুর মাংসঃ ১ কেজি (সাফ করা)
- পেঁয়াজঃ ৪-৫টি (মিহি কাটা)
- আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- রসুন বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
- টমেটোঃ ২টি (কুচি করা)
- লবণঃ স্বাদ অনুযায়ী
- হলুদ গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়োঃ ১-২ চা চামচ (ঝাল পছন্দ অনুযায়ী)
- ধনিয়া গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- গরম মসলা গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
- তেজপাতাঃ ২টি
- এলাচঃ ৩-৪টি
- দারুচিনিঃ ২ টুকরা
- লবঙ্গ: ৩-৪টি
- তেল: ১/২ কাপ (সরিষার তেল বা সাদা তেল)
- গরম পানিঃ প্রয়োজনমতো
- ধনেপাতাঃ সাজানোর জন্য
- প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। মাংস মেরিনেট করাঃ
গরুর মাংস ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এতে আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, হলুদ গুঁড়ো, এবং মরিচ গুঁড়ো মাখিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন।
২। পেঁয়াজ ভাজাঃ
একটি বড় প্যানে তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি এবং লবঙ্গ ফোড়ন দিন। এরপর মিহি কাটা পেঁয়াজ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজুন।
৩। মসলা কষানোঃ
পেঁয়াজ ভাজা হলে ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, এবং গরম মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। এরপর টমেটো যোগ করে নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি ঘরে বসে সুস্বাদু চটপটি রান্না করবেন ও মজা নিয়ে খাবেন জেনে নিন?
৪। মাংস যোগ করাঃ
মেরিনেট করা মাংস প্যানে দিয়ে ভালোভাবে কষান। মাংস থেকে পানি বের হতে শুরু করলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে মাংস রান্না করতে থাকুন।
৫। গরম পানি যোগ করাঃ
মাংস নরম হতে শুরু করলে প্রয়োজনমতো গরম পানি যোগ করুন। ঢেকে নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। মাংস এবং মশলা ভালোভাবে মিশে গেলে আঁচ বাড়িয়ে ভুনা করুন।
৬। পরিবেশনঃ
মাংস রান্না হলে ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
গরুর মাংস রান্নার এই রেসিপি মশলাদার এবং সুস্বাদু। এটি বিশেষ দিন বা পারিবারিক আয়োজনে ভাত, পোলাও বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করার জন্য আদর্শ।
২ পিস গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকেঃ
২ পিস গরুর মাংসে ক্যালোরির পরিমাণ মাংসের আকার, চর্বির পরিমাণ, এবং রান্নার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত ১ পিস গরুর মাংস (৫০ গ্রাম) যদি চর্বি কম থাকে, তবে তাতে প্রায় ১৩০-১৫০ ক্যালোরি থাকে। সেক্ষেত্রে ২ পিস মাংসে প্রায় ২৬০-৩০০ ক্যালোরি থাকতে পারে।
আরো পড়ুনঃ পাঁকা কলা খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের শরীরের প্রোটিনের জন্য জেনে নিন?
তবে, যদি মাংসে চর্বি বেশি থাকে বা এটি বেশি তেল-মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। তাহলে ক্যালোরির পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতন হলে মাংসের চর্বি ছেঁটে ফেলে এবং কম তেলে রান্না করা ভালো শরীরের জন্য।
১০০ গ্রাম গরুর মাংসে কি কি থাকেঃ
১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে, যা শরীরের শক্তি জোগায় এবং পেশি গঠনে সহায়ক। এতে প্রায় ২৫-২৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ মেরামত এবং পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে ১৫-২০ গ্রাম ফ্যাট থাকতে পারে, যার মধ্যে স্যাচুরেটেড এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উভয়ই থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২৫০-৩০০ ক্যালোরি থাকে, যা শক্তি সরবরাহ করে।
গরুর মাংস খেলে কি হয়ঃ
গরুর মাংস খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। গরুর মাংসে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা পেশি গঠনে এবং শরীরের কোষ মেরামতে সহায়তা করে। এতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এছাড়া, ভিটামিন বি১২ স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। গরুর মাংস খেলে শরীর শক্তি পায়, কারণ এটি ক্যালোরি এবং ফ্যাটের একটি চমৎকার উৎস।
![]() |
গরুর-মাংস-খেলে-কি-হয় |
পাশাপাশি, এতে থাকা জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। তবে, অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। গেঁটেবাত বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। তাই সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে রান্না করে গরুর মাংস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
গরুর মাংসে ক্ষতিকারক দিকঃ
গরুর মাংস খাওয়ার কিছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে, বিশেষত যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়। গরুর মাংসে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে, যা রক্তের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত মাংস খেলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে খেঁজুর খেলে কতটা উপকার পায় আমাদের শরীর বিস্তারিত জেনে নিন?
গেঁটেবাত বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে গরুর মাংস খাওয়া এই অবস্থাগুলো আরও খারাপ করতে পারে, কারণ এতে উচ্চমাত্রায় পিউরিন থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়া, মাংস প্রক্রিয়াকরণের সময় যদি অস্বাস্থ্যকর উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা খাদ্যবাহিত রোগের কারণ হতে পারে।
পরিমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে রান্না না করলে গরুর মাংস হজমের সমস্যা, যেমন গ্যাস বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। তাই গরুর মাংস খাওয়ার সময় এর পরিমাণ এবং রান্নার পদ্ধতির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীরের জন্য গরুর মাংসে কত ক্যালোরি থাকে শক্তি যোগানোর জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে গরুর মাংস রান্নার মসলা রেসিপি কি কি হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url