আতা ফলের উপকারিতা ও অউপকারিতা - আতা খেলে কি ওজন বাড়ে? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরের ভিটামিনের মাত্রা বাড়াতে ও দেহের পুষ্টির জন্য এই আতা ফলের উপকারিতা ও অউপকারিতা কি ধরনের প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে সেটি জানবো। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আতা খেলে কি ওজন বাড়ে আমাদের শরীরের। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমরা আমাদের শরীরের পুষ্টি ও মাত্রা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেয়ে থাকি। যেটি খেলে আমাদের শরীরে শক্তি যোগান দেয়। আতা খেলে আমাদের শরীরে ভিটামিনের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বাড়ে। যাতে করে প্রত্যেক মানুষকে আতা খাওয়া উচিত। যেটি খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিনের মাত্রা ও শরীর সঠিক থাকে।
![]() |
আতা-ফলের-উপকারিতা |
তাই আসুন জেনে রাখি যে আমাদের শরীরের ভিটামিনের জন্য এই আতা ফলের উপকারিতা ও অউপকারিতা কি প্রভাব ফেলে আমাদের শরীরে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আতা খেলে কি ওজন বাড়ে আমাদের শরীরের। নিম্নে বিস্তারিত............।
আতা ফলের উপকারিতা ও অউপকারিতাঃ
আতা ফলের উপকারিতা হলো যে এই আতা ফল, যা শরিফা বা সুগার অ্যাপল নামেও পরিচিত, এটি স্বাদে মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। তবে এটি খাওয়ার কিছু উপকারিতা এবং কিছু অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে উপকারিতা দেওয়া হলোঃ
- পুষ্টিগুণে ভরপুর – এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- হজমশক্তি উন্নত করে – এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এবং হজমশক্তি উন্নত করে।
- চোখের জন্য উপকারী – এতে থাকা ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- হার্টের জন্য ভালো – আতা ফলে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় – এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বার্ধক্যের প্রভাব কমায়।
- ওজন বাড়াতে সহায়ক – যারা ওজন কমানোর সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য আতা ফল উপকারী কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি এবং ক্যালোরি বেশি থাকে।
- দেহের দিক দিয়ে - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমশক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ইত্যাদি।
- আতা ফলের অপকারিতাঃ
- আতা ফলের অউপকারিতা হলো এই ফল ওজন বৃদ্ধি করতে পারে – আতা ফলে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরি বেশি থাকায় এটি অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা – এতে উচ্চ পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে – এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করলেও অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- আতা ফলের বীজ বিষাক্ত – আতা ফলের বীজ এবং পাতা সামান্য বিষাক্ত হতে পারে, যা ভুলবশত খেলে পেটে ব্যথা বা বমির সমস্যা হতে পারে।
- অ্যালার্জির ঝুঁকি – কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আতা ফল খেলে ত্বকে চুলকানি, অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
আতা ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী এবং ওজন বাড়ানোর ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। ফলটি খাওয়ার সময় এর বীজ থেকে সতর্ক থাকা উচিত, কারণ এটি বিষাক্ত হতে পারে।
আতা খেলে কি ওজন বাড়েঃ
হ্যাঁ, আতা ফল খেলে ওজন বাড়তে পারে, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আতা ফলে প্রায় ৯৪-৯৮ ক্যালোরি এবং উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকে, যা শরীরে শক্তি যোগায় এবং ওজন বাড়ানোর সহায়ক হতে পারে।
বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে দুর্বল বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজনের, তাদের জন্য আতা ফল উপকারী, কারণ এটি দ্রুত ক্যালোরি সরবরাহ করে এবং শরীরে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এতে থাকা প্রাকৃতিক সুগার গ্লুকোজ ও এনার্জি বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়ক।
তবে, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য বেশি পরিমাণে আতা খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এটি শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ও শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং, আতা ফল পরিমিত পরিমাণে খেলে শরীরের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
গর্ভবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ
গর্ভবস্থায় আতা ফল খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে, যা গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। আতা ফলে থাকা ফোলেট (ভিটামিন বি৯) গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক গঠনে সাহায্য করে
এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে। এছাড়া, এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা। পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লাম্পসিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি, আতা ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা মায়ের শক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
আতা ফল খাওয়ার নিয়মঃ
আতা ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। প্রথমে ফলটি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং হাতে হালকা চাপে ভেঙে বা কেটে এর ভিতরের নরম শাঁস বের করতে হবে। আতা ফলের সাদা শাঁস অংশটি খাওয়া যায়। তবে এর বীজ কখনোই খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি সামান্য বিষাক্ত হতে পারে।
সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি, আতা ফল স্মুদি, মিল্কশেক বা ফ্রুট স্যালাডের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তবে যারা ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তাদের জন্য এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরি বেশি থাকে।
আতা ফলের পুষ্টিগুণঃ
আতা ফল (সুগার অ্যাপল বা শরিফা) পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুস্বাদু ফল, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আতা ফলে যে পুষ্টিগুণ রয়েছেঃ
- ক্যালোরিঃ ৯৪-৯৮ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেটঃ ২৩-২৫ গ্রাম
- প্রোটিনঃ ২-৩ গ্রাম
- ফাইবারঃ ৪-৫ গ্রাম
- ফ্যাটঃ ০.৫ গ্রাম
- ভিটামিন সিঃ ১৫-২০ মিলিগ্রাম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে)
- ভিটামিন বি৬ঃ ০.২ মিলিগ্রাম (স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী)
- ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ১৪-১৭ মাইক্রোগ্রাম (গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো)
- পটাশিয়ামঃ ৩৮০-৪০০ মিলিগ্রাম (রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে)
- ক্যালসিয়ামঃ ২০-৩০ মিলিগ্রাম (হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো)
- আয়রনঃ ০.৭-১ মিলিগ্রাম (রক্তশূন্যতা কমায়)
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফেনলিক যৌগ (ত্বকের জন্য উপকারী)
তবে, আতা ফলে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আতা ফল খাওয়া কি ভালোঃ
হ্যাঁ, আতা ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কারণ এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং শরীরের জন্য নানা উপকার বয়ে আনে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আতা ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বার্ধক্যের প্রভাব কমায়। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমের সমস্যা কমায়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি ভালো, কারণ এতে থাকা ফোলেট শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে সহায়তা করে। তাই আতা ফল খাওয়া উচিত।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীরে ভিটামিনের জন্য এই আতা ফলের উপকারিতা ও অউপকারিতা কি ধরনের ফল। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে আতা খেলে কি ওজন বাড়ে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url