তরমুজ চাষের উপযুক্ত মাটি - তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় কখন? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে তরমুজ গাছ চাষ প্রদ্ধতি করার জন্য এই তরমুজ চাষের উপযুক্ত মাটি কোন গুলো হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় কখন হয়। যে সময়ে তরমুজ চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
তরমুজ চাষ করতে হলে আপনাকে সবার আগে তার চাষ প্রদ্ধতি ধরণ বুঝতে হবে সঠিক পরিমাণে। গাছ লাগিয়ে আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি খুব সহজে। কেননা গাছ দ্বারা আমরা অনেক কিছু স্বার্থ ছাড়া পেয়ে থাকি। যেটির মূল্য আমরা কোনো দিন দিতে পারবো না।
তরমুজ-চাষের-উপযুক্ত-মাটি |
তাই আসুন জেনে রাখি যে এই তরমুজ গাছ ও তরমুজ চাষের উপযুক্ত মাটি কোন গুলো হয়ে থাকে। যেটির সাহায্যে আমরা খুব সহজে তরমুজ চাষ করতে পারবো। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় কখন ও কোন মৌসুমে করলে ভাল ফলন হয়। নিম্নে বিস্তারিত.........।
তরমুজ চাষের উপযুক্ত মাটিঃ
তরমুজ চাষের জন্য দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এই ধরনের মাটি পানি নিষ্কাশনের জন্য আদর্শ, যা তরমুজের শিকড়কে পচনের হাত থেকে রক্ষা করে। তরমুজ গাছের শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পছন্দ করে, তাই মাটি উর্বর এবং গভীর হওয়া উচিত। মাটির pH মান ৬.০ থেকে ৭.০- এর মধ্যে থাকলে তরমুজ গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ মাল্টা গাছ রোপন প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে চাষাবাদ করবেন তার কৌশল জেনে নিন?
লবণাক্ত মাটি বা অতিরিক্ত জলাবদ্ধ মাটি তরমুজ চাষের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এটি গাছের শিকড় এবং ফলের গুণমান নষ্ট করতে পারে। মাটি চাষের আগে জৈব সার বা পচা গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে উর্বরতা বাড়ালে তরমুজের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় কখনঃ
তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় হলো বসন্তকাল এবং গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত। এই সময়ের উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া তরমুজের দ্রুত বৃদ্ধি এবং ফল গঠনের জন্য আদর্শ। তরমুজ গাছ বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
আরো পড়ুনঃ ছাদে কীভাবে সহজ উপায়ে আঙ্গুর চাষ করবেন ও কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ জেনে নিন?
তবে, অঞ্চলভেদে তরমুজ চাষের সময় কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। শীতকালীন আবহাওয়া বা তাপমাত্রা বেশি নিচে নেমে গেলে তরমুজের চারা সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই শীতের শেষে এবং বর্ষার আগের সময় তরমুজ রোপণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। সঠিক সময়ে চারা রোপণ করলে তরমুজের ফলন বেশি এবং ফলের গুণগত মান উন্নত হয়।
শীতকালে তরমুজ চাষের পদ্ধতিঃ
শীতকালে তরমুজ চাষ করতে হলে সঠিক পদ্ধতি এবং বিশেষ যত্ন নিতে হয়, কারণ এটি গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করে শীতকালেও ফলন সম্ভব। শীতকালে তরমুজ চাষের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যায়। শীতকালের জন্য হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ বেশি কার্যকর। "সুগার বেবি," "ব্ল্যাক ডায়মন্ড," এবং "ক্রিমসন সুইট" জাত শীতকালীন আবহাওয়ার সাথে ভালো মানিয়ে নিতে পারে এবং দ্রুত ফলন দেয়।
শীতকালে তরমুজ চাষের জন্য দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটি ব্যবহার করতে হবে। মাটি উর্বর এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত হতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ করে জৈব সার, পচা গোবর বা কম্পোস্ট মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। জমিতে সূর্যের আলো পৌঁছানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি খুব সহজে বেদানা গাছ চিনবেন ও বেদানা গাছ চাষাবাদ করবেন জানুন?
- বীজ রোপণের পদ্ধতি
- তরমুজের বীজ শীতকালে আগাম চারা তৈরির জন্য প্রথমে নেট হাউস বা পলিথিন দিয়ে আবৃত করা যায়।
- বীজ রোপণের জন্য সারি তৈরি করুন, সারির দূরত্ব ৪-৫ ফুট এবং গাছের দূরত্ব ২-৩ ফুট রাখুন।
- বীজ রোপণের পরে হালকা পানি দিন এবং ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য জমি মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
শীতকালে তরমুজ চাষে নিয়মিত পানি দেওয়া জরুরি, তবে জমি জলাবদ্ধ হওয়া এড়াতে হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য পলিথিন বা মালচিং ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে জমিতে জৈব সার এবং নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। শীতকালে ছত্রাকজনিত রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই বালাইনাশক বা প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গাছকে রক্ষা করতে হবে। পোকামাকড় দূর করতে প্রয়োজনে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
শীতকালে তরমুজ চাষের সুবিধাঃ
শীতকালে তরমুজ চাষ করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। শীতকালে তরমুজের বাজারমূল্য বেশি থাকে, তাই এই মৌসুমে চাষ লাভজনক হতে পারে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যত্নশীল পরিচর্যার মাধ্যমে শীতকালে তরমুজ চাষ করা এখন অনেক কৃষকের জন্য সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। শীতকালে তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী জাত নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শীতকালে-তরমুজ-চাষের-সুবিধা |
"ব্ল্যাক বিউটি," "সুগার বেবি," বা "হাইব্রিড" জাতগুলো শীতকালীন চাষের জন্য ভালো। এ জাতগুলো কম তাপমাত্রায়ও দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ ফলন দেয়। শীতকালে তরমুজ চাষের জন্য উর্বর, দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটি ব্যবহার করা উত্তম। জমি চাষের আগে মাটিতে জৈব সার বা পচা গোবর মেশাতে ভুলবেন না। সঠিক পানি নিষ্কাশনের জন্য উঁচু বেড তৈরি করুন। বেডের মাঝখানে প্রায় ৬-৮ ফুট ফাঁকা রাখুন, যাতে গাছের লতা অবাধে ছড়াতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আনারস গাছ কীভাবে সঠিক নিয়মে লাগাবেন ও চাষাবাদ করবেন তার কৌশল জানুন?
- চারা রোপণ পদ্ধতি
- শীতকালে সরাসরি বীজ রোপণের পরিবর্তে পলিথিন ব্যাগে বীজ অঙ্কুরিত করে পরে জমিতে স্থানান্তর করা ভালো।
- চারাগুলো বেডের উপর নির্দিষ্ট দূরত্বে (প্রায় ১.৫-২ মিটার) রোপণ করুন।
- এইগুলো শীতের শুরুর দিকে রোপণ করা উচিত, যাতে দিনের তাপমাত্রা যথেষ্ট থাকে এবং গাছ সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
- শীতের কারণে তরমুজের চারা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে চারা ঢেকে রাখার জন্য পলিথিন বা তাপসুরক্ষিত নেট ব্যবহার করতে হবে।
- গাছের শিকড়ের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নিয়মিত পানি দিন, তবে জলাবদ্ধতা এড়াতে হবে।
- রোগবালাই এড়াতে কীটনাশক বা প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করুন।
তরমুজ ধরার সময় ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ
শীতকালে তরমুজের ফল ধরতে প্রায় ৮০-৯০ দিন সময় লাগে। ফলনকালীন সময়ে গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পেলে ফলের মিষ্টত্ব ও গুণমান উন্নত হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডার সময় গাছকে ঢেকে রাখা এবং মাটি উষ্ণ রাখতে মালচিং (মাটির উপরে খড় বা পলিথিন বিছানো) অত্যন্ত কার্যকর।
আরো পড়ুনঃ লিচু গাছ লাগানোর প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে চাষাবাদ করবেন তার ব্যাসিক টিপস জানুন?
- সফল চাষের জন্য বিশেষ টিপস
- শীতকালে চাষের সময় জমিতে সেচ ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দিন।
- শীতের কারণে ফলের বৃদ্ধি ধীর হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে পরিচর্যা চালিয়ে যেতে হবে।
- বাজারের চাহিদা ও সময় অনুযায়ী ফল সংগ্রহ করুন।
- সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যা করলে শীতকালেও তরমুজ চাষ থেকে ভালো ফলন এবং
তরমুজ চাষ সারের পরিমাণঃ
টবে তরমুজ চাষ প্রদ্ধতিঃ
টবে-তরমুজ-চাষ-প্রদ্ধতি |
- বীজ রোপণের পদ্ধতি
- টবটি প্রস্তুত মাটি দিয়ে ভরাট করুন।
- উচ্চফলনশীল জাতের তরমুজের বীজ বেছে নিন, যেমন "সুগার বেবি" বা "ক্রিমসন সুইট"।
- টবের কেন্দ্রে ১-২টি বীজ ১ ইঞ্চি গভীরে রোপণ করুন।
- রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন।
- তরমুজ গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পছন্দ করে। তাই টবটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা রোদ পৌঁছায়।
- টবে মাটি শুকিয়ে গেলে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রতি ১৫-২০ দিন পর জৈব সার এবং সামান্য রাসায়নিক সার যেমন ইউরিয়া এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url