স্ট্রবেরি চাষের সময় - স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়? জেনে রাখুন?

আজকে আমরা জানবো যে যেকোনো গাছ চাষাবাদের জন্য এই স্ট্রবেরি চাষের সময় কখন হয় ও কোন মৌসুমে হয়ে থাকে স্ট্রবেরি চাষ। তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায় আমাদের বাংলাদেশে। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

বাজারে যেসব ফল পাওয়া যায় সেসব ফল একমাত্র চাষাবাদ দ্বারা আবৃত করা হয়। ফল জিনিস কখনো চাষাবাদ ছাড়া করা সম্ভব নয়। কিন্তু পৃথিবীর প্রতেকটা ফল বিভিন্ন মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়। যেমনটি ধরা যেতে পারে স্ট্রবেরির ক্ষেত্রে।

স্ট্রবেরি-চাষের-সময়
স্ট্রবেরি-চাষের-সময়            

তাই আসুন জেনে রাখি যে চাষাবাদের জন্য এই স্ট্রবেরি চাষের সময় কখন হয় ও বেশির ভাগ কোন মৌসুমে হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জেনে নিন যে এই স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায় বাংলাদেশে। যেটি খাবার জন্য আমরা এত অপেক্ষা করে থাকি। নিম্নে বিস্তারিত......।

স্ট্রবেরি চাষের সময়ঃ

স্ট্রবেরি চাষের জন্য শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশে সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য আদর্শ। এই সময়ে আবহাওয়া শীতল ও মৃদু থাকে। যা স্ট্রবেরির বৃদ্ধির জন্য উপযোগী। চারা রোপণের পর শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ফল ধরে।

আরো পড়ুনঃ মাল্টা গাছ কীভাবে আপনি রোপন করবেন ও চাষাবাদ করার যজ্ঞ করে তুলবেন জানুন?

স্ট্রবেরি গাছের জন্য ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযুক্ত, কারণ এই তাপমাত্রায় গাছের মুকুল ধরা এবং ফলের আকার ও মান ভালো হয়। গ্রীষ্মকাল বা অতিরিক্ত গরমের সময় স্ট্রবেরি গাছ সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না এবং ফলন কম হয়। তাই শীতকালের মৌসুমে সঠিক সময়ে চারা রোপণ করলে স্ট্রবেরি চাষ থেকে উচ্চ ফলন পাওয়া সম্ভব।

ছাদে স্ট্রবেরি চাষ প্রদ্ধতিঃ

স্ট্রবেরি চাষের জন্য শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে ছাদে চারা রোপণ করতে হয়। স্ট্রবেরি গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পছন্দ করে। তাই ছাদের এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা রোদ আসে। স্ট্রবেরি চাষের জন্য ছোট টব, ট্রে বা কন্টেইনার ব্যবহার করা যেতে পারে। কন্টেইনারটির গভীরতা কমপক্ষে ৬-৮ ইঞ্চি হওয়া উচিত এবং নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি, যাতে পানি জমে না থাকে।

তারপর স্ট্রবেরি চাষের জন্য উর্বর এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত মাটি প্রয়োজন। মাটির মিশ্রণ তৈরি করার জন্য ৫০% দো-আঁশ মাটি, ২৫% জৈব সার (কম্পোস্ট বা পচা গোবর), এবং ২৫% বালি মিশিয়ে নিতে হবে। এতে মাটি হালকা থাকবে এবং শিকড় সহজে ছড়াতে পারবে।

  • চারা রোপণের পদ্ধতিঃ

  1. সুস্থ এবং রোগমুক্ত স্ট্রবেরি চারা নির্বাচন করুন।
  2. টবে বা কন্টেইনারে মাটি ভর্তি করে ৬-৮ ইঞ্চি দূরত্বে চারা রোপণ করুন।
  3. রোপণের পর হালকা পানি দিন এবং প্রথম কয়েকদিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন।
  4. পরিচর্যা ও সেচ
  5. মাটি শুকিয়ে গেলে হালকা পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
  6. গাছের আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।
  7. স্ট্রবেরি গাছ ফল ধরার সময় ফসফরাস এবং পটাশ সার ব্যবহার করলে ফলের আকার ও গুণগত মান ভালো হয়।
  8. ছাদে চাষ করা গাছ রোগ ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রাকৃতিক কীটনাশক বা বায়োনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  9. স্ট্রবেরি গাছে চারা রোপণের ৬০-৮০ দিনের মধ্যে ফল আসে। ফল পাকা শুরু করলে লালচে রঙ ধারণ করে এবং নরম হয়ে ওঠে। পাকা ফল সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে।

ছাদে স্ট্রবেরি চাষ সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি সহজ এবং লাভজনক। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ছাদে গাছ থেকে তাজা এবং পুষ্টিকর স্ট্রবেরি ফলানো সম্ভব। যা পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং আনন্দদায়ক।

টবে স্ট্রবেরি চাষের পদ্ধতিঃ

স্ট্রবেরি চাষের জন্য শীতকাল (অক্টোবর-নভেম্বর) সবচেয়ে ভালো সময়। গাছটি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পছন্দ করে, তাই টব এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা রোদ আসে। ছাদ, বারান্দা বা আঙ্গিনা টবে স্ট্রবেরি চাষের জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে। স্ট্রবেরি চাষের জন্য ছোট বা মাঝারি আকারের টব, কন্টেইনার, বা হ্যাংগিং বাস্কেট ব্যবহার করা যেতে পারে। টবের গভীরতা ৬-৮ ইঞ্চি এবং প্রশস্ততা যথেষ্ট হওয়া উচিত।

যাতে গাছের শিকড় সহজে ছড়াতে পারে। টবের নিচে ছিদ্র থাকতে হবে, যাতে পানি জমে না থাকে।স্ট্রবেরি গাছের জন্য দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি ব্যবহার করা ভালো। মাটির মিশ্রণে ৫০% দো-আঁশ মাটি, ২৫% জৈব সার (কম্পোস্ট বা পচা গোবর), এবং ২৫% বালি মেশাতে হবে। এতে মাটি হালকা থাকবে এবং শিকড়ের বৃদ্ধি ভালো হবে।

চারা রোপণের পদ্ধতি অনুসরণঃ

  • টব বা কন্টেইনার মাটি দিয়ে ভরাট করুন।
  • একটি স্বাস্থ্যকর এবং রোগমুক্ত স্ট্রবেরি চারা নির্বাচন করুন।
  • টবের মাঝখানে চারা রোপণ করুন এবং চারার গোড়ায় মাটি হালকা চাপ দিয়ে শক্ত করুন।
  • রোপণের পর হালকা পানি দিন।
টবে-স্ট্রবেরি-চাষের-পদ্ধতি
টবে-স্ট্রবেরি-চাষের-পদ্ধতি    
  • স্ট্রবেরি গাছের মাটি আর্দ্র রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং গাছের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • ফল ধরার সময় গাছে ফসফরাস এবং পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফল মিষ্টি এবং আকারে বড় হয়।
  • মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার
  • গাছের গোড়ায় খড় বা শুকনো পাতা বিছিয়ে মালচিং করলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ফল পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
  • গাছের পাতায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বা ছত্রাকের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাকৃতিক কীটনাশক বা বায়োনাশক ব্যবহার করতে হবে।

টবে স্ট্রবেরি চাষ সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি সহজ এবং ফলপ্রসূ। পরিবারের জন্য তাজা এবং পুষ্টিকর স্ট্রবেরি ফলানোর পাশাপাশি এটি একটি চমৎকার শখ হিসেবেও উপভোগ করা যায়।

স্ট্রবেরি গাছের দামঃ

স্ট্রবেরি গাছের দাম বিভিন্ন স্থানে এবং জাতের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত বাংলাদেশে একটি স্ট্রবেরি গাছের চারার দাম ৩০-১০০ টাকার মধ্যে থাকে। উন্নত মানের এবং উচ্চফলনশীল জাতের চারা, যেমনঃ "কামিলা" বা "সুইট চার্লি," এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।

স্থানীয় নার্সারি থেকে সস্তায় চারা সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে অনলাইনে অর্ডার দিলে দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। কারণ, এতে ডেলিভারি খরচ যুক্ত হয়। স্ট্রবেরি চারা কেনার সময় সুস্থ, রোগমুক্ত এবং শক্তিশালী চারা নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তা ভালো ফলন দিতে সক্ষম হয়।

স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়ঃ

স্ট্রবেরি সাধারণত শীতকালীন একটি ফল, যা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। স্ট্রবেরি গাছে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চারা রোপণের পর শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে ফল ধরা শুরু হয়।

ফল পাকার সময় মার্চ মাস পর্যন্ত থাকে। এই সময়ে স্ট্রবেরি সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু এবং তাজা থাকে। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রিনহাউস বা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সারা বছর স্ট্রবেরি উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু প্রধানত শীতকালই স্ট্রবেরি ফলের মৌসুম হিসেবে বিবেচিত হয়।

স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা তৈরিঃ

স্ট্রবেরি বীজ থেকে চারা তৈরি করা সহজ হলেও ধৈর্য এবং সঠিক পদ্ধতি প্রয়োজন। প্রথমে একটি ভালো মানের পাকা স্ট্রবেরি ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ সংগ্রহের পর এগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর বীজগুলো ২-৩ দিন ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হবে। যা অঙ্কুরোদগমের হার বাড়াবে। বীজ রোপণের জন্য একটি ছোট ট্রে বা পাত্রে দো-আঁশ মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।

বীজগুলো মাটির উপর ছড়িয়ে দিয়ে সামান্য মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর হালকা পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। পাত্রটি ছায়াযুক্ত এবং বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। প্রায় ১৫-২০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরের উচ্চতা ৩-৪ ইঞ্চি হলে এগুলো টবে বা জমিতে স্থানান্তর করা যাবে। সঠিক পরিচর্যা এবং নিয়মিত পানি দেওয়ার মাধ্যমে এই চারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং কয়েক মাসের মধ্যে স্ট্রবেরি ফল দিতে শুরু করবে।

বাংলাদেশে কোথায় স্ট্রবেরি চাষ হয়ঃ

বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ মূলত ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বেশি হয়। এই এলাকাগুলোর আবহাওয়া ও মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে শীতল আবহাওয়া এবং উর্বর মাটির কারণে স্ট্রবেরির ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া, রাজশাহী অঞ্চলে আমের পাশাপাশি স্ট্রবেরি চাষেও কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

বাংলাদেশে-কোথায়-স্ট্রবেরি-চাষ-হয়
   বাংলাদেশে-কোথায়-স্ট্রবেরি-চাষ-হয়    

চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় এবং সিলেট অঞ্চলের কিছু অংশে উঁচু জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়। সম্প্রতি কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, এবং ঢাকার আশপাশেও সীমিত আকারে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ট্রবেরি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন চাষাবাদের জন্য ফলের মধ্য এই স্ট্রবেরি চাষের সময় কখন হয়।ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায় বাংলাদেশে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..............................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url