রামায়ণের কয়টি কান্ড - রামায়ণ প্রথম কে লিখেছেন? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে সনাতন ধর্ম অনুযায়ী হিন্দু শাস্ত্রে এই রামায়ণের কয়টি কান্ড আছে ও কি কি কান্ড বিভেদ রয়েছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই রামায়ণ প্রথম কে লিখেছেন ও কোন ভাষায় লিখেছিলেন। আসুন জানি? 

ভূমিকাঃ

সনাতন ধর্মে বিভিন্ন ধরনের পুরাণ, উপনাষিদ, মহাভারত ইত্যাদি হাজার হাজার দেব রয়েছে পড়ার জন্য ও নিজের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য। যেটি আমরা যদি মনোযোগ সহকারে পড়ি। তাহলে আমাদের জীবনে সুখ, শান্তি ভগবান নিজে বিরাজ করে থাকেন আমাদের জীবনে। জীবনে সুখ শান্তিতে বাঁচতে হলে ধর্ম মেনে চলতে হবে।

রামায়ণের-কয়টি-কান্ড
রামায়ণের-কয়টি-কান্ড    

তাই আসুন জেনে রাখি যে, হিন্দু ধর্মে শাস্ত্র অনুযায়ী রামায়ণের কয়টি কান্ড ও কীভাবে সেগুলো বিভেদ করা আছে সে সম্পর্কে জানি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই রামায়ণ প্রথম কে লিখেছেন ও কোন ভাষায় লিখেছেন। যেটি পড়লে আমাদের জীবনে সুখ শান্তি আসবে ও জীবন সুন্দর হবে। নিম্নে বিস্তারিত...। 

রামায়ণের কয়টি কান্ডঃ

রামায়ণে মোট "সাতটি" কাণ্ড রয়েছে। এই সাতটি কাণ্ড ভগবান রামের জীবন, তাঁর আদর্শ চরিত্র, এবং রাবণের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামকে ধাপে ধাপে তুলে ধরে। রামায়ণ মহাকাব্যের প্রতিটি কাণ্ড একটি নির্দিষ্ট পর্ব বা ঘটনার উপর ভিত্তি করে গঠিত। নিচে রামায়ণের সাতটি কাণ্ডের নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলোঃ

১। বালকাণ্ডঃ

রামের জন্ম, কৈশোর, এবং ঋষি বিশ্বামিত্রের সঙ্গে তাঁর যাত্রার কাহিনি। এতে সীতার সঙ্গে রামের বিবাহের বিবরণ রয়েছে।

২। অয়োধ্যাকাণ্ডঃ

অযোধ্যায় রামের সিংহাসনে অভিষেকের পরিকল্পনা এবং কৌশল্যার রাজ্যচ্যুতি ঘটিয়ে রামকে বনবাসে পাঠানোর কাহিনি রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী গনেশ পূজা কীভাবে করতে হয় ও কীভাবে পালন করবেন জানুন?

৩। অরণ্যকাণ্ডঃ

রামের বনবাসকালীন জীবন, সীতার অপহরণের আগের ঘটনা এবং রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধের বিবরণ রয়েছে।

৪। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডঃ

বানররাজ সুগ্রীবের সঙ্গে রামের বন্ধুত্ব এবং রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বানরসেনা সংগঠনের কাহিনি রয়েছে।

৫। সুন্দরকাণ্ডঃ

হনুমানের লঙ্কা গমন, সীতার খোঁজ এবং রামের প্রতি তাঁর ভক্তির কাহিনি রয়েছে।

৬। যুদ্ধকাণ্ড (লঙ্কাকাণ্ড)

রাম ও রাবণের মধ্যে যুদ্ধ এবং রাবণের পরাজয় ও মৃত্যুর বিবরণ রয়েছে।

৭। উত্তরকাণ্ডঃ

রামের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন, সীতা পরিত্যাগ এবং রামের রাজ্যপাট ও পরবর্তীকালের ঘটনাগুলো রয়েছে।

এই সাতটি কাণ্ডের মাধ্যমে রামায়ণ ভগবান রামের জীবন, আদর্শ, এবং নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করে। প্রতিটি কাণ্ড জীবনের একটি বিশেষ দিক বা মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্ব দেয়। যা মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়ক।

রামায়ণ প্রথম কে লিখেছেনঃ

রামায়ণ প্রথম রচনা করেছিলেন "ঋষি বাল্মীকি"। তিনি হিন্দু ধর্মের এক মহাকবি এবং "আদিকবি" হিসেবে পরিচিত। বাল্মীকি রচিত রামায়ণ হল বিশ্বের প্রথম মহাকাব্য, যা প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এটি ভগবান রামের জীবন, আদর্শ, এবং রাক্ষসরাজ রাবণের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করে। ঋষি বাল্মীকি রামচন্দ্রের চরিত্রে ঈশ্বরের মহিমা, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় দিক তুলে ধরেছেন।

আরো পড়ুনঃ শিব পূজা করার ক্ষেত্রে কি কি উপকরণ লাগে ও কীভাবে পূজা করতে হয় জেনে নিন?

বাল্মীকির রামায়ণ মূলত ২৪,০০০ শ্লোক, ৭টি কাণ্ড এবং ৫০০টি সর্গে (অধ্যায়) বিভক্ত। এই মহাকাব্য শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। বরং এটি মানব জীবনের নৈতিকতা, কর্তব্য, এবং আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা দেয়।বাল্মীকির রামায়ণ এতই প্রভাবশালী যে এটি পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই, বাল্মীকি রচিত রামায়ণ হিন্দু ধর্মের এক অমূল্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।

রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা কতঃ

রামায়ণে মোট ২৪,০০০টি শ্লোক রয়েছে। এটি হিন্দু ধর্মের এক প্রাচীন এবং পবিত্র মহাকাব্য, যা ঋষি বাল্মীকি রচনা করেছেন। রামায়ণ মূলত সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি কাণ্ডে বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে ভগবান রামের জীবন ও কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। এই শ্লোকগুলো ভগবান রামের জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর বনবাস, সীতার অপহরণ, রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এবং শেষ পর্যন্ত রামের রাজ্যাভিষেকের বিভিন্ন ঘটনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে।

রামায়ণের-শ্লোক-সংখ্যা-কত
রামায়ণের-শ্লোক-সংখ্যা-কত

প্রতিটি শ্লোকই ধর্মীয়, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার উৎস। রামায়ণের এই ২৪,০০০ শ্লোক সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং সেগুলো হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতিফলন। এটি শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। বরং এটি নৈতিকতার শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রামায়ণের সাতটি কান্ডের নামঃ

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী রামায়ণ মানে রামের কাহিনী দ্বারা বৃবিত করা হয়েছে। এই রামায়ণের সাতটি কাণ্ডের নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপঃ

  • বালকাণ্ডঃ

  1. রামের জন্ম, কৈশোর, এবং ঋষি বিশ্বামিত্রের সঙ্গে যাত্রার বিবরণ।
  2. সীতার সঙ্গে রামের বিবাহের কাহিনি।

  • অযোধ্যাকাণ্ডঃ

  1. রামের সিংহাসনে অভিষেকের পরিকল্পনা এবং কৌশল্যার ষড়যন্ত্রে রামের বনবাস।
  2. অযোধ্যায় রামের বিদায় এবং রাজ্যচ্যুতির বিবরণ।

  • অরণ্যকাণ্ডঃ

  1. রামের বনবাসকালীন জীবন, সীতার অপহরণের আগের ঘটনা।
  2. দণ্ডকারণ্যে রাক্ষসদের সঙ্গে রামের যুদ্ধ।

  • কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডঃ

  1. বানররাজ সুগ্রীবের সঙ্গে রামের বন্ধুত্ব।
  2. রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বানরসেনা সংগঠন।

  • সুন্দরকাণ্ডঃ

  1. হনুমানের লঙ্কায় গমন এবং সীতার সন্ধান।
  2. লঙ্কায় হনুমানের ভক্তি ও সাহসিকতার কাহিনি।

  • যুদ্ধকাণ্ড (লঙ্কাকাণ্ড)

  1. রাম এবং রাবণের মধ্যে যুদ্ধ।
  2. রাবণের পরাজয় ও মৃত্যু এবং সীতার উদ্ধার।

  • উত্তরকাণ্ডঃ

  1. রামের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন ও রাজ্যাভিষেক।
  2. সীতার পরিত্যাগ এবং রামের রাজত্বের শেষ সময়ের ঘটনা।

এই সাতটি কাণ্ড রামায়ণের কাহিনি ও শিক্ষা পূর্ণতা প্রদান করে। প্রতিটি কাণ্ড ভগবান রামের জীবন ও নৈতিকতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে, যা মানবজীবনের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।

রামায়ণ কত বছর আগে হয়েছিলঃ

রামায়ণের ঘটনাগুলো প্রায় ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর আগে ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সঠিক সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিক ও পুরাণগত ব্যাখ্যায় কিছু পার্থক্য রয়েছে। রামায়ণ হল এক মহাকাব্য, যা ঋষি বাল্মীকি রচনা করেছিলেন, এবং এটি ত্রেতা যুগের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মানব সভ্যতার চারটি যুগ রয়েছে—সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে বেদপাঠ করবেন ও বেদপাঠ পড়ার সঠিক সময় জানুন?

রামায়ণের ঘটনাগুলো ত্রেতাযুগে সংঘটিত হয়েছিল, যা বর্তমান থেকে কয়েক হাজার বছর আগে ছিল।বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, রামায়ণের সময়কাল আনুমানিক ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ বছর আগে হতে পারে। রাম সেতু (আদমস ব্রিজ) এবং অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শনগুলোও রামায়ণের ঘটনাগুলোর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং, রামায়ণ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কাহিনি নয়, বরং এটি হাজার হাজার বছর পুরোনো নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা এবং মানবতার প্রতীক।

রামায়ণ প্রথম কে শুনেছিলেনঃ

রামায়ণ সর্ব প্রথম শুনেছিলেন লব এবং কুশ। তারা ছিলেন ভগবান রাম ও দেবী সীতার পুত্র। ঋষি বাল্মীকি, যিনি রামায়ণের রচয়িতা, তিনি এই মহাকাব্য প্রথম লব ও কুশকে শিক্ষা দেন। বাল্মীকি তাদের রামায়ণের শ্লোকগুলো গান আকারে পরিবেশন করতে শেখান। লব এবং কুশ বাল্মীকির আশ্রমে বড় হয়েছিলেন এবং সেখানেই তারা রামায়ণের পূর্ণ কাহিনি শেখেন।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী এই হিন্দুধর্মের আদিকালের নাম কি ছিলো ও কত পুরানো জানুন?

পরে তারা অযোধ্যায় রামের রাজসভায় রামায়ণের শ্লোক গান আকারে পরিবেশন করেন। তখনই রাম জানতে পারেন যে লব ও কুশ তার নিজের সন্তান। রামায়ণ প্রথম লব-কুশের মাধ্যমে শ্রবণ ও পরিবেশিত হয়। যা এক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মুহূর্ত হিসেবে পরিচিত। তাদের গান অযোধ্যার প্রজাদের মন ছুঁয়ে যায় এবং এইভাবে রামায়ণ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন সনাতন ধর্ম অনুযায়ী রামায়ণের কয়টি কান্ড ও কি কি রয়েছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই রামায়ণ প্রথম কে লিখেছেন ও কোন ভাষায় লিখেছেন।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.....................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url