পুরাণ কে লিখেছেন - পুরাণের বৈশিষ্ঠ্য কি? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে সনাতন ধর্মের উল্লেখ্য এই পুরাণ কে লিখেছেন ও কীভাবে লিখেছেন যেটি দ্বারা সনাতন ধর্ম এজ পর্যন্ত টিকে আছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই পুরাণের বৈশিষ্ঠ্য কি ও এর গুণবাচক কাজগুলো কি কি। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে সনাতন ধর্ম চলে আছে ও মানুষ পালন করে যাচ্ছে সৎ মনের সাথে। এই সনাতন ধর্ম বিভিন্ন বিভেদের সাথে ভাগ করা আছে। এই সনাতন ধর্মে অনেক ইতিহাস আছে যেটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে আপনি সৎ পথে চলতে শুরু করবেন। কেননা সনাতন ধর্মে সব সময় ক্ষমার কথা বলে আছে।
![]() |
পুরাণ-কে-লিখেছেন |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, সনাতন ধর্মের জ্ঞান নেওয়ার জন্য ও জীবনকে উন্নতি করার জন্য কিছু বিশেষ অংশ পড়তে হয়। এ জন্য জেনে রাখুন যে পুরাণ কে লিখেছেন ও কীভাবে লিখেছেন। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে ইএ পুরাণের বৈশিষ্ঠ্য কি ও এর কাজগুলো কি কি। নিম্নে বিস্তারিত......।
পুরাণ কে লিখেছেনঃ
পুরাণের রচয়িতা "মহর্ষি বেদব্যাস"। তিনি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ সংকলন করেছেন এবং পুরাণ নামে সংরক্ষণ করেছেন। বেদব্যাস ১৮টি প্রধান পুরাণ রচনা করেন। যেগুলো হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক দিক নির্দেশ করে। এই ১৮টি পুরাণে সৃষ্টি, ধ্বংস, দেব-দেবতা, মানবজাতি, এবং ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে গনেশ পূজা করবেন শাস্ত্র বিধি বিধান মেনে ও কীভাবে পালন করবেন জানুন?
পুরাণে বিভিন্ন যুগ (সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ, কলিযুগ) এবং দেবতাদের গৌরবের কাহিনি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এগুলো ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জীবনের নৈতিকতা ও মানবিকতার গুরুত্ব বোঝাতে সহায়ক। তাই, মহর্ষি বেদব্যাসকে পুরাণের রচয়িতা এবং সংকলক হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
পুরাণের বৈশিষ্ঠ্য কিঃ
পুরাণের বৈশিষ্ট্য হলো এটি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, এবং ঐতিহাসিক ঘটনার সমন্বয়ে রচিত এক অনন্য সাহিত্য। পুরাণ মূলত হিন্দু ধর্মের দার্শনিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
১। সৃষ্টিতত্ত্বঃ
পুরাণে সৃষ্টির শুরু থেকে ব্রহ্মাণ্ডের ধ্বংস পর্যন্ত বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এটি সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি এবং জগতের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে।
২। দেবতা ও অবতারঃ
পুরাণে বিভিন্ন দেবতা, যেমনঃ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী এবং তাদের লীলার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতার, যেমন রাম ও কৃষ্ণের জীবনীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৩। ধর্ম ও নৈতিকতাঃ
পুরাণ নৈতিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এটি সৎ জীবনযাপন, ধর্মপালন এবং মানবিক গুণাবলির প্রচার করে।
৪। যুগ ও কালের বিবরণঃ
পুরাণে চার যুগের (সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ, কলিযুগ) বর্ণনা এবং প্রতিটি যুগের ধর্মীয় ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের বিবরণ রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ হিন্দু ধর্ম বিধান অনুযায়ী কীভাবে আপনি মন্দির দর্শন করবেন তার নিয়ম জেনে নিন?
৫। গল্প ও শিক্ষাঃ
পুরাণে বিভিন্ন কাহিনি ও উপাখ্যানের মাধ্যমে জ্ঞানের শিক্ষা প্রদান করা হয়। যেমন মহাদেব ও পার্বতীর কাহিনি, গঙ্গা অবতরণ, এবং সমুদ্র মন্থনের কাহিনি।
৬। যজ্ঞ ও আচারঃ
পুরাণে বিভিন্ন যজ্ঞ, পূজা এবং ধর্মীয় আচার-বিধির গুরুত্ব ও পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৭। সহজ ভাষাঃ
পুরাণ সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য সহজ ভাষায় রচিত করা হয়েছে। যা সকল স্তরের মানুষের কাছে সহজলভ্য।
পুরাণ হিন্দু ধর্মের একটি সমৃদ্ধ অংশ, যা ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, এবং ঐতিহাসিক জ্ঞান প্রচার করে। এটি শুধু দেব-দেবতার কাহিনি নয়। বরং নৈতিকতা, ধর্মপালন এবং জীবনের গভীর সত্য উপলব্ধি করার এক মাধ্যম।
পুরাণ কীভাবে লেখা হয়ঃ
পুরাণ মূলত কবিতা ও গদ্যের মিশ্রণে লেখা হয় এবং এর রচনায় আধ্যাত্মিকতা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। পুরাণ লেখার সময় ঋষি-মুনিরা তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান, দর্শন এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে কাহিনি আকারে সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাতে সাধারণ মানুষও এটি বুঝতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে শিব পূজা করতে হয় ও শিব পূজায় কি কি উপকরণ লাগে তার সমন্ধে জানুন?
পুরাণে শ্লোক বা স্তোত্র আকারে দেব-দেবতার গুণগান ও লীলার বর্ণনা রয়েছে। পাশাপাশি গদ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন কাহিনি, উপাখ্যান, এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষায় রচিত, যা তখনকার সময়ের ধর্মীয় ও সাহিত্যিক ভাষা ছিল।
মহর্ষি বেদব্যাস পুরাণ রচনার সময় ধর্ম, কর্ম, মোক্ষ, এবং জীবনের নৈতিকতা নিয়ে কাহিনিগুলোকে সংকলিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি সৃষ্টির রহস্য, যুগ চক্র, দেবতাদের লীলা এবং মানবজাতির আদর্শ জীবনযাপনের শিক্ষাকে তুলে ধরেন। পুরাণে আলংকারিক ভাষা এবং রূপকের ব্যবহারও রয়েছে। যা গল্পগুলোকে শিক্ষামূলক ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
পুরাণ লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা এবং নৈতিক শিক্ষা প্রচার করার জন্য। যা আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় সহজভাবে লিখিত হওয়ায় আজও তা পাঠ করা সহজ এবং জনপ্রিয়।
শিব পুরাণ কে লিখেছেনঃ
শিব পুরাণের রচয়িতা "মহর্ষি বেদব্যাস"। তিনি হিন্দু ধর্মের ১৮টি প্রধান পুরাণের সংকলক এবং রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। শিব পুরাণ হলো এই ১৮টি পুরাণের একটি, যা বিশেষভাবে ভগবান শিবের লীলা, মহিমা এবং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাহিনি নিয়ে রচিত। শিব পুরাণে ভগবান শিবের সৃষ্টি, ধ্বংস, এবং পালনকর্তা রূপে ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে আপনি বেদপাঠ করবেন ও বেদ পড়ার সঠিক সময় জানুন?
এছাড়া এতে পার্বতীর সঙ্গে শিবের বিবাহ, তাদের সন্তান গণেশ ও কার্তিকেয়ের কাহিনি, এবং শিবলিঙ্গের পূজা ও তার গুরুত্ব নিয়ে বিশদ বিবরণ রয়েছে। শিব পুরাণের মাধ্যমে ভক্তরা শিবের মহিমা ও শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন এবং এটি শৈব সম্প্রদায়ের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। মহর্ষি বেদব্যাস এই গ্রন্থটি রচনা করে শিবভক্তদের কাছে শিবের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা পৌঁছে দিয়েছেন।
পদ্মা পুরাণের রচয়িতা কেঃ
পদ্ম পুরাণের রচয়িতা "মহর্ষি বেদব্যাস"। তিনি হিন্দু ধর্মের ১৮টি প্রধান পুরাণের সংকলক ও রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। পদ্ম পুরাণ হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তৃত পুরাণ, যা ভগবান বিষ্ণুর মহিমা, সৃষ্টিতত্ত্ব, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, এবং নৈতিকতার শিক্ষা তুলে ধরে। পদ্ম পুরাণে পাঁচটি খণ্ড রয়েছে। যথাঃ সৃষ্টিখণ্ড, ভূমিখণ্ড, স্বর্গখণ্ড, ব্রহ্মখণ্ড, এবং উত্তরখণ্তেজথা।
![]() |
পদ্মা-পুরাণের-রচয়িতা-কে |
সৃষ্টির শুরু, পবিত্র স্থানগুলোর মাহাত্ম্য, ধর্মের চার স্তম্ভ (সত্য, তপ, দয়া, দান), এবং বিভিন্ন দেবতা ও অবতারদের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মহর্ষি বেদব্যাস এই গ্রন্থে কাহিনির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং নৈতিকতার শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করেছেন। পদ্ম পুরাণ হিন্দু ধর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
পুরাণের শ্লোকঃ
পুরাণের শ্লোক মূলত হিন্দু ধর্মের দেবতা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার মানে বোঝায়। এখানে একটি জনপ্রিয় শ্লোক উল্লেখ করা হলো, যা পুরাণের চেতনা এবং ভাবনার সারাংশ বহন করে।জ
শ্লোকঃ
"অহং বিশ্বস্য জন্মস্থা স্থিতিনাশ হেতুঃ।
ভেদানামহং বেদ্যং বেদান্তকৃত বেদবিদেব চাহম্।।"
(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, ১১.২১.৩৭)
অর্থঃ
আমি (ভগবান) বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি এবং ধ্বংসের কারণ। আমি বেদ এবং বেদের জ্ঞানের বস্তু। আমিই বেদান্তের রচয়িতা এবং বেদের জ্ঞানী।
আরো পড়ুনঃ ভগবানের কাছে গীতাপাঠ কীভাবে করবেন ও গীতাপাঠ পড়ার সঠিক সময় জানুন?
পুরাণ কাকে বলেঃ
পুরাণ হলো হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ, যেখানে সৃষ্টির রহস্য, দেবতাদের লীলা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, এবং নৈতিক শিক্ষার কাহিনি লিপিবদ্ধ রয়েছে। "পুরাণ" শব্দের অর্থ "প্রাচীন"। এটি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, এবং দার্শনিক জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। পুরাণে মূলত সৃষ্টির শুরু থেকে ব্রহ্মাণ্ডের ধ্বংস পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। এতে দেবতাদের গুণগান, অবতারদের কাহিনি, মানবজাতির আচার-বিধি, এবং পবিত্র স্থানগুলোর মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মে ১৮টি প্রধান পুরাণ রয়েছে, যেমন—বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, ইত্যাদি। পুরাণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো সহজ ভাষায় লেখা এবং কাহিনির মাধ্যমে জ্ঞান প্রদান করে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তা বুঝতে পারে। তাই পুরাণ কেবল ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি নৈতিকতা, জীবনের উদ্দেশ্য এবং আধ্যাত্মিক চেতনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন সনাতন ধর্মের গ্রন্থের মধ্য এই পুরাণ কে লিখেছেন ও কোন ভাষায় লেখা আছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই পুরাণের বৈশিষ্ঠ্য কি ও এর কাজ কি।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.....................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url