পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ঠ্য - পেয়ারা গাছ কত বছর বাঁচে? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে গাছ যত্ন ও লাগানোর ক্ষেত্রে এই পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ঠ্য গুলো কি কি হয়ে থাকে এবং কি ধরনের প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই পেয়ারা গাছ কত বছর বাঁচে আমাদের পরিবেশে। আসুন জানি? 

ভূমিকাঃ

গাছ দ্বারা আমাদের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গাছ আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি। কেননা গাছ আমাদের অক্সিজেন দিয়ে থাকে। যেটি দ্বারা আমরা নিঃস্বাস নি। এই গাছের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে যেটি আমরা এই ব্লগ দ্বারা বুঝতে পারবো।

পেয়ারা-গাছের-বৈশিষ্ঠ্য
   পেয়ারা-গাছের-বৈশিষ্ঠ্য            

তাই আসুন জেনে রাখি যে গাছ যত্ন বা লাগানোর ক্ষেত্রে এই পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ঠ্য গুলো কি কি প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে ও পরিবেশে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই পেয়ারা গাছ কত বছর বাঁচে পরিবেশ দুনিয়ায়। নিম্নে বিস্তারিত............।

পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ঠ্যঃ

পেয়ারা গাছ একটি চিরসবুজ এবং মাঝারি আকারের গাছ, যা সাধারণত ১০-২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাতা ডিম্বাকৃতির, সবুজ এবং মসৃণ, যা গাছে ঘনভাবে সাজানো থাকে। পেয়ারা গাছে ছোট সাদা রঙের ফুল ফোটে, যা থেকে ফল ধরে। পেয়ারার ফল গোল বা ডিম্বাকৃতির হয় এবং খোসা পাতলা থেকে কিছুটা মোটা হতে পারে। ফলের ভেতরে নরম, রসালো শাঁস থাকে, যা মিষ্টি বা টক-মিষ্টি স্বাদের।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি চাষ কখন ও কোন মৌসুমে করবেন এবং কীভাবে চাষ করবেন জেনে নিন?

পেয়ারা গাছ বিভিন্ন ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে, তবে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এটি গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বছরে দুইবার ফলন দিতে পারে। পেয়ারা গাছ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং কম পরিচর্যায়ও ভালো ফলন দেয়। পেয়ারা পুষ্টিগুণে ভরপুর, বিশেষত ভিটামিন সি এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি সহজলভ্য এবং বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় ফলের গাছ।

পেয়ারা গাছ কত বছর বাঁচেঃ

পেয়ারা গাছ সাধারণত ২০-৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে, তবে এর ফলন সর্বোচ্চ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। সঠিক পরিচর্যা, পর্যাপ্ত পানি, এবং সারের যোগান নিশ্চিত করা হলে পেয়ারা গাছ দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ থাকে এবং ফলন দিতে সক্ষম হয়।

গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ফলনের পরিমাণ এবং গুণগত মান কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে সঠিকভাবে ছাঁটাই, মাটির পুষ্টি বজায় রাখা, এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করলে পেয়ারা গাছ দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে এবং ফলন দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি চাষ কোন মৌসমে করা উচিত ও কীভাবে সহজ উপায়ে করা যায় জেনে নিন?

পেয়ারা কি ধরনের ফলঃ

পেয়ারা একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর ফল, যা টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য সবার কাছে পরিচিত। এটি একটি রসালো ফল, যার খোসা পাতলা থেকে মাঝারি মোটা এবং ভেতরের অংশ নরম ও রসালো। পেয়ারা গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে এবং খোসার রঙ সবুজ থেকে হলুদ হতে পারে। ভেতরের শাঁস সাদা, হালকা গোলাপি বা লালচে রঙের হয়ে থাকে, যার মধ্যে ছোট ছোট বীজ থাকে।

পেয়ারা-কি-ধরনের-ফল
পেয়ারা-কি-ধরনের-ফল    

পেয়ারা প্রধানত ভিটামিন সি, ফাইবার, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি একটি বর্ষজীবী ফল এবং সহজলভ্য হওয়ায় সব ধরনের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। পেয়ারা সাধারণত গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালীন মৌসুমে বেশি পাওয়া যায় এবং এটি তাজা খাওয়ার পাশাপাশি জেলি, জ্যাম এবং বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 

পেয়ারা গাছে ফুল কখন আসেঃ

পেয়ারা গাছে সাধারণত ফুল আসে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে। বাংলাদেশে পেয়ারা গাছে দুটি মৌসুমে ফুল ধরে—প্রথমবার মার্চ থেকে এপ্রিল এবং দ্বিতীয়বার আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। ফুল আসার সময় আবহাওয়া, মাটির গুণমান এবং গাছের পরিচর্যার উপর নির্ভর করে।

আরো পড়ুনঃ আপেল গাছের চারা রোপঅন করে কীভাবে আপেল গাছ চাষ করবেন জেনে নিন?

পেয়ারা গাছে ফুল আসার পর প্রায় ৪-৫ মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। সঠিক পুষ্টি ও সারের ব্যবহারের মাধ্যমে গাছে সময়মতো বেশি পরিমাণে ফুল আসা নিশ্চিত করা যায়। নিয়মিত পরিচর্যা এবং রোগমুক্ত পরিবেশ পেয়ারা গাছের ফুল আসার প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করে তোলে।

টবে পেয়ারা গাছ চাষ প্রদ্ধতিঃ

পেয়ারা গাছ চাষের জন্য বড় এবং গভীর টব ব্যবহার করতে হবে। টবটির গভীরতা অন্তত ১৬-১৮ ইঞ্চি এবং প্রশস্ততা প্রায় ২০-২৪ ইঞ্চি হওয়া উচিত, যাতে গাছের শিকড় সহজে ছড়াতে পারে। টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি, যাতে পানি জমে না থাকে।

পেয়ারা গাছের জন্য উর্বর দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে ৫০% দো-আঁশ মাটি, ৩০% জৈব সার (কম্পোস্ট বা পচা গোবর) এবং ২০% বালি মেশাতে হবে। এতে মাটি হালকা থাকবে এবং পানি নিষ্কাশন ভালো হবে।

  • চারা রোপণ পদ্ধতিঃ

  1. একটি সুস্থ এবং রোগমুক্ত পেয়ারা গাছের চারা নির্বাচন করুন।
  2. টবে মাটি ভর্তি করে চারা মাঝখানে লাগান।
  3. চারার গোড়ায় মাটি হালকা চাপ দিয়ে শক্ত করে দিন।
  4. রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন।
  5. মাটি শুকিয়ে গেলে নিয়মিত পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
  6. গাছের গোড়ার মাটি নরম রাখতে হলে মালচিং পদ্ধতি (খড় বা শুকনো পাতা বিছানো) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  7. পেয়ারা গাছ দিনে ৬-৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পছন্দ করে। তাই টবটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত রোদ পৌঁছায়।
  8. প্রতি তিন মাস পর পর জৈব সার এবং সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ) ব্যবহার করতে হবে। ফুল এবং ফল ধরার সময় পটাশ এবং ফসফরাস সার বেশি দিলে ফলন ভালো হয়।
  9. নিয়মিত গাছের শুকনো বা অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। এটি গাছের পুষ্টি সঠিকভাবে বণ্টনে সহায়তা করে এবং ফলের মান ভালো হয়।
  10. পোকামাকড় বা রোগ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

অবশেষে, পেয়ারা গাছ সাধারণত টবে লাগানোর ১-২ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। ফল পাকার সময় খোসার রঙ হালকা হলুদ বা সবুজ থেকে কিছুটা নরম হয়ে যায়। এটি ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। সঠিক পরিচর্যা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে টবে পেয়ারা গাছ চাষ সহজেই করা যায়। এটি শুধু বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, পরিবারের জন্য তাজা এবং পুষ্টিকর ফলও সরবরাহ করে।

পেয়ারা গাছের উপকারিতাঃ

পেয়ারা গাছ একটি পুষ্টিকর এবং ঔষধিগুণে ভরপুর ফলদ গাছ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। পেয়ারা গাছের ফল ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পেয়ারার পাতা হজম সমস্যা এবং ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

পেয়ারা-গাছের-উপকারিতা
পেয়ারা-গাছের-উপকারিতা    

এছাড়া পেয়ারা গাছের ফল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। পেয়ারা গাছের উপকার শুধু ফলেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পাতা, ফুল এবং শিকড়ও বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পেয়ারা গাছ কম পানি ও যত্নেও টিকে থাকে এবং সহজলভ্য হওয়ায় এটি গ্রামে এবং শহুরের এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলদ গাছ হিসেবে বিবেচিত।

পেয়ারা গাছে সারের পরিমাণঃ

পেয়ারা গাছে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা গাছের ভালো বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একেকটি পূর্ণবয়স্ক পেয়ারা গাছে বছরে ১০-১৫ কেজি জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট) ব্যবহার করা উচিত। রাসায়নিক সারের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ২৫০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০-২৫০ গ্রাম টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), এবং ১৫০-২০০ গ্রাম এমওপি (মিউরিয়েট অব পটাশ) প্রয়োগ করা হয়।

আরো পড়ুনঃ তরমুজ গাছ চাষ প্রদ্ধতি জানুন ও সহজ উপায় ব্যবহার করে চাষাবাদ করুন?

সার সাধারণত তিন ধাপে প্রয়োগ করা হয়—একবার গাছে নতুন কুঁড়ি ধরার আগে, একবার ফুল আসার সময়, এবং একবার ফল সংগ্রহের পরে। সারের পরিমাণ গাছের বয়স এবং আকারের ওপর নির্ভর করে বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে। সার দেওয়ার পর মাটি হালকা নাড়া দিয়ে পানি দিলে তা শিকড়ে ভালোভাবে পৌঁছায়। সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে পেয়ারা গাছ সুস্থ থাকে এবং উচ্চ ফলন নিশ্চিত হয়। 

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন গাছ যত্ন বা লাগানোর ক্ষেত্রে এই পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ঠ্য গুলো কি কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই পেয়ারা গাছ কত বছর বাঁচে আমাদের পরিবেশে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন........................ www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )


























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url