মাল্টা গাছ রোপন পদ্ধতি - মাল্টা গাছে কি কি সার দিতে হয়? বিস্তারির জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এই মাল্টা গাছ রোপন পদ্ধতি কীভাবে করত হয় ও কি কি নিয়ম অনুসরন করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই মাল্টা গাছে কি কি সার দিতে হয় ভালো ফলনের জন্য। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের চারপাশ রক্ষা করে থাকে সাধারণত গাছ। এই গাছ লাগিয়ে আমরা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি খুব সহজে। গাছ থেকে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি। যা মুখে বলে কখনো বোঝানো সম্ভব নয়। গাছ দ্বারা আমরা বেঁচে থাকার অক্সিজেন পায়। যা আমাদের জীবন রক্ষাবেক্ষণ করে থাকে।
মাল্টা-গাছ-রোপন-পদ্ধতি |
তাই আসুন জেনে নি যে এই গাছ প্রদ্ধতি ব্যবহারের জন্য এই মাল্টা গাছ রোপন পদ্ধতি কীভাবে সহজ উপায়ে করা যায়। যেটি আমরা চাষবাদ করার জন্য ব্যবহার করতে পারবো। ও তার সাথে সাথে এটাও জেনে নিন যে এই মাল্টা গাছে কি কি সার দিতে হয় ভাল ফলন হওয়ার জন্য। নিম্নে বিস্তারিত.........।
মাল্টা গাছ রোপন পদ্ধতিঃ
মাল্টা গাছ সাধারণত বসন্তকাল বা বর্ষার শুরুতে রোপণ করা সবচেয়ে ভালো। এই সময় গাছ দ্রুত মাটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। মাল্টা গাছের জন্য রোদযুক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কারণ, এটি দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পছন্দ করে।
- মাটি প্রস্তুতি
মাল্টা গাছ দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। রোপণের আগে মাটিকে ভালোভাবে চাষ করতে হবে এবং জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট) মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। মাটির pH মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ হওয়া উচিত, যা মাল্টা গাছের জন্য উপযোগী।
- গর্ত তৈরি করা
মাল্টার চারা রোপণের জন্য ২-৩ ফুট গভীর এবং প্রশস্ত গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে জৈব সার ও মাটি মিশিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিতে হবে। যাতে মাটি পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে খুব সহজে ছাদে আঙ্গুর গাছ চাষবাদ করবেন ও রক্ষাবেক্ষণ করবেন জানুন?
- চারা রোপণ প্রক্রিয়া
- একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত চারা নির্বাচন করুন।
- গর্তের মাঝখানে চারাটি স্থাপন করুন এবং চারার শিকড়ের চারপাশে মাটি দিয়ে হালকা চাপ দিন।
- রোপণের পরপরই পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে গাছে।
- গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিন, তবে পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পুষ্টি শুধুমাত্র গাছ পায়।
- বছরে তিনবার (বসন্তে, বর্ষায় এবং শরতে) জৈব সার এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- গাছের গোড়ার মাটিকে আর্দ্র রাখার জন্য মালচিং (খড় বা পাতা বিছানো) করা যেতে পারে। এটি গাছকে অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।
- ফল ধরার সময়
মাল্টা গাছ সাধারণত রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নিলে ফলন বেশি এবং ফলের মান ভালো হয়।
সঠিক পদ্ধতি মেনে মাল্টা গাছ রোপণ করলে এটি দীর্ঘদিন ধরে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল সরবরাহ করবে।
মাল্টা গাছে কি কি সার দিতে হয়ঃ
মাল্টা গাছের ভালো বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য সঠিক পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। গাছের মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে প্রথমে পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা উচিত, যা গাছকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। রাসায়নিক সারের মধ্যে প্রতি বছর ২০০-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০-২০০ গ্রাম টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), এবং ১০০-১৫০ গ্রাম পটাশ সার ব্যবহার করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ বেদানা গাছ ভালমানের চেনার উপায় জানুন ও চাষবাদ করার সম্পর্কে ব্যাসিক জানুন?
ফল গঠনের সময় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন জিঙ্ক, বোরন, এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োগ করলে ফলের আকার ও গুণগত মান ভালো হয়। সার সাধারণত বছরে তিনবার প্রয়োগ করা হয়—একবার বসন্তে, একবার বর্ষার শুরুতে, এবং একবার ফল সংগ্রহের পরে। সার দেওয়ার পরপরই মাটিতে তা ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে পানি দিতে হবে। সঠিক পরিমাণে ও সময়মতো সার প্রয়োগ করলে মাল্টা গাছ সুস্থ থাকে এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।
বারি মাল্টা ১ ফলনঃ
বারি মাল্টা-১ একটি উচ্চফলনশীল এবং জনপ্রিয় মাল্টার জাত, যা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবন করেছে। এই জাতটি আকারে মাঝারি থেকে বড় এবং খোসা পাতলা ও মসৃণ। বারি মাল্টা-১-এর রসালো অংশ টক-মিষ্টি স্বাদের এবং এতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ১০০-১৫০টি মাল্টা ফল পাওয়া যায়।
এই জাতের গাছ সাধারণত রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে এবং প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। বারি মাল্টা-১ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং সহজেই বিভিন্ন ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য খুবই লাভজনক।কারণ, এর ফলন বেশি এবং বাজারে চাহিদা অনেক।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে সহজ উপায় ব্যবহার করে তরমুজ চাষ করবেন ও রক্ষাণাবেক্ষণ করবেন জানুন?
বারি মাল্টা ২ ফলনঃ
বারি মাল্টা-২ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আরেকটি উন্নত ও উচ্চফলনশীল মাল্টার জাত। এই জাতটি আকারে বড়, খোসা তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং রসালো টক-মিষ্টি স্বাদের। বারি মাল্টা-২ সাধারণত রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ১৫০-২০০টি মাল্টা ফলন পাওয়া যায়।
প্রতিটি ফলের ওজন ২৫০-৩০০ গ্রাম হতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু ও মাটিতে ভালোভাবে জন্মে। বারি মাল্টা-২ বাণিজ্যিক চাষের জন্য আদর্শ, কারণ এর ফলন বেশি এবং ফলের মান অত্যন্ত ভালো। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন একটি জাত।
বারি মাল্টা ৪ ফলনঃ
বারি মাল্টা-৪ একটি উন্নত এবং উচ্চফলনশীল মাল্টার জাত, যা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে। এই জাতের মাল্টার আকার বড়, খোসা পাতলা এবং ভেতরের অংশ অত্যন্ত রসালো ও মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে সবার মুখে। বারি মাল্টা-৪ সাধারণত রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা ও সারের ব্যবহার নিশ্চিত করলে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে বছরে গড়ে ২০০-২৫০টি মাল্টা ফল পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ আনারস গাছ লাগানোর প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে রক্ষা করবেন তার ব্যাসিক কথা?
প্রতিটি মাল্টার ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এই জাতটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় উন্নত এবং বিভিন্ন জলবায়ু ও মাটির ধরনে চাষ করা যায়। এর ফলন বেশি এবং ফলের গুণগত মান উচ্চ হওয়ায় এটি বাণিজ্যিক চাষের জন্য খুবই উপযোগী। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বারি মাল্টা-৪-এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
মাল্টা পাঁকতে কতদিন সময় লাগেঃ
ভাল করে মাল্টা চাষবাদের পর মাল্টা পেঁকে সম্পূর্ণ পরিপক্ক হতে সাধারণত ৬-৮ মাস সময় লাগে। গাছে ফুল আসার পর থেকেই ফল গঠন শুরু হয় এবং প্রায় ১৮০-২৪০ দিনের মধ্যে ফল পাকার উপযোগী হয়। মাল্টা পাকার সময় এর খোসার রঙ ধীরে ধীরে সবুজ থেকে হলুদ বা হালকা কমলা রঙে পরিবর্তিত হয়।
মাল্টা-পাঁকতে-কতদিন-সময়-লাগে |
ফল পাকার সময় পরিবেশের তাপমাত্রা, গাছের পরিচর্যা এবং সারের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিচর্যা ও পুষ্টি নিশ্চিত করলে মাল্টার ফল দ্রুত পাকে এবং মিষ্টতা ও রসালো গুণমান উন্নত হয়। ফলটি পরিপক্ক হলে তা গাছ থেকে সহজেই সংগ্রহ করা যায়, এবং মজার সাথে খাওয়া যায়।
বারি মাল্টা ১ এর বৈশিষ্ঠ্যঃ
বারি মাল্টা-১ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি উন্নত জাতের মাল্টা। এই জাতটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উচ্চ ফলনশীলতার জন্য পরিচিত। বারি মাল্টা-১-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর খোসা পাতলা ও মসৃণ এবং ফলের আকার মাঝারি থেকে বড়। প্রতিটি ফলের ওজন সাধারণত ২০০-৩০০ গ্রাম হয়।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি লিচু গাছ লাগিয়ে লিচু চাষ করবেন সহজ উপায় ব্যবহার করে জানুন?
এই মাল্টা টক-মিষ্টি স্বাদের এবং এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গাছ সাধারণত রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে এবং একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ১০০-১৫০টি ফল পাওয়া যায়। বারি মাল্টা-১ বিভিন্ন ধরনের মাটিতে এবং জলবায়ুতে সহজে মানিয়ে নিতে পারে, যা এটি বাণিজ্যিক চাষের জন্য আদর্শ করে তুলেছে।
মাল্টা গাছে ফুল আসার আগে করণীয় কাজঃ
মাল্টা গাছ রোপন প্রদ্ধতি আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। এবার জানবো যে এই মাল্টা গাছে ফুল আসার আগে সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিচর্যা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ফলনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফুল আসার আগে মাল্টা গাছে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা উচিত তাহলোঃ
- সার প্রয়োগঃ
গাছে পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট) এবং রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি) প্রয়োগ করতে হবে। ও ফল ধরার সম্ভাবনা বাড়াতে ফসফরাস ও পটাশ সার বেশি দিতে হবে।
- গাছ ছাঁটাইঃ
ফুল আসার আগে গাছের অপ্রয়োজনীয় বা শুকনো ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। যাতে গাছের পুষ্টি সংরক্ষিত হয় এবং নতুন ডালপালা ও ফুল ভালোভাবে গজায়।
- মাটির যত্নঃ
মাটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে।
গাছের গোড়ার মাটি নরম করে সার মিশিয়ে দিতে হবে। যাতে শিকড় সহজে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
- পানি সেচঃ
মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে নিয়মিত পানি দিতে হবে গাছে। তবে পানি যেন জমে না থাকে সেইদিক নিশ্চিত করতে হবে।
- পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণঃ
গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক বা প্রাকৃতিক প্রতিরোধক ব্যবহার করতে হবে।
- রোগ প্রতিরোধঃ
ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে গাছে। যাতে করে গাছ সুরক্ষিত থাকে।
এই প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সঠিকভাবে করলে মাল্টা গাছে দ্রুত ফুল আসবে এবং ফলন ভালো হবে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এই মাল্টা গাছ রোপন পদ্ধতি কীভাবে সহজ উপায়ে করা যায়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই মাল্টা গাছে কি কি সার দিতে হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন...........................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url