গঙ্গা স্নান মন্ত্র - স্নান করার সময় কি বলতে হয়? জেনে রাখুন?

আজকে আমরা জানবো যে হিন্দু ধর্ম অনুসারে এই গঙ্গা স্নান মন্ত্র কি ও এটি করলে হিন্দু মানুষেরা কীভাবে পবিত্র হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই স্নান করার সময় কি বলতে হয় গঙ্গা মা'কে। যাতে করে গঙ্গা মা প্রসন্ন হোন তাদের ভক্তদের প্রতি। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

হিন্দু ধর্মের মানুষেরা অনেক বিধি বিধান মেনে চলেন। তারা সব দেব দেবীর পূজা করে থাকেন। তাদের দ্বারা যদি কখনো ভুল কাজ হয়ে থাকে। তখন তারা গঙ্গা মা'কে সরণ করেন। হিন্দু মানুষেরা নদীকে তাদের গঙ্গা মা বলে চিনেন। তারা এই গঙ্গা মা'কে পূজা করে শুদ্ধ মনের সাথে। যাতে করে তারা তাদের পাপ কাজ থেকে মুক্তি পেতে পারে। 

গঙ্গা-স্নান-মন্ত্র
গঙ্গা-স্নান-মন্ত্র    

তাই আসুন জেনে রাখি যে, যে নদীকে পৃথিবীর সব হিন্দু মানুষ গঙ্গা মা হিসাবে চিনে। সেই গঙ্গা স্নান মন্ত্র কীভাবে পড়তে হয় ও কীভাবে পালন করতে হয় জানুন। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই স্নান করার সময় কি বলতে হয় গঙ্গা মা'কে। নিম্নে বিস্তারিত............।

গঙ্গা স্নান মন্ত্রঃ

গঙ্গা স্নানের মন্ত্র ভক্তদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র এবং শুদ্ধিকরণের প্রতীক। হিন্দু ধর্মে গঙ্গা স্নান কেবল শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং আত্মার পবিত্রতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গা স্নানের সময় ভক্তরা এই মন্ত্র জপ করেন। যা তাঁদের পাপ মোচন এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।

  • গঙ্গা স্নান মন্ত্রঃ

"ওঁ শ্রী গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।

নর্মদে সিন্ধু কাভেরী জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।"

অর্থঃ

হে দেবী গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু, এবং কাভেরী! আপনাদের পবিত্র জলে উপস্থিত হয়ে আমার শুদ্ধিকরণ করুন।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে ধ্যান করতে হয় ও কি কি নিয়ম পালন করতে হয় জানুন?

  • গঙ্গা দেবীর স্তোত্রঃ

"গঙ্গে মহাপুন্যদে দেবি পরমেশ্বরি।

দর্শনাত তব স্পর্শান্মোচিতং হি ভবর্নরঃ।"

অর্থঃ

হে দেবী গঙ্গা! তুমি মহান এবং পবিত্রতার প্রতীক। তোমার দর্শন ও স্পর্শে মানুষের পাপ দূর হয়।

গঙ্গা স্নানের সময় এই মন্ত্র ও স্তোত্র পাঠ করলে শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধি লাভ হয়। এটি পাপ মোচনের পাশাপাশি মনকে শান্তি এবং আত্মার পরিশুদ্ধি এনে দেয়।

স্নান করার সময় কি বলতে হয়ঃ

স্নান করার সময় বিশেষ মন্ত্র জপ করা হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার, যা শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধির প্রতীক। স্নান কেবল শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, এটি আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমেও বিবেচিত। স্নানের সময় ভগবান এবং পবিত্র নদীগুলোর স্মরণে মন্ত্র পাঠ করলে এটি আধ্যাত্মিক ফল প্রদান করে

  • মন্ত্রঃ

"ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।

নর্মদে সিন্ধু কাভেরী জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।"

এই মন্ত্রের মাধ্যমে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু এবং কাভেরীর মতো পবিত্র নদীগুলোর জলের শুদ্ধতা এবং তাদের আশীর্বাদ আহ্বান করা হয়।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে জানুন ও তার রীতিনীতি কেমন ও কীভাবে পালন করতে হয় জানুন?

এছাড়াও, স্নানের সময় ভগবান নারায়ণ, শিব, বা সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে ধ্যান করলে শারীরিক শুদ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক শান্তি এবং আত্মিক উন্নতি হয়। তাই স্নান করার সময় এই মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে শুদ্ধ মনোভাব নিয়ে ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করা উচিত।

স্নানের সময় কোন মন্ত্র জপ করতে হয়ঃ

স্নানের সময় যে মন্ত্র জপ করা হয় তা শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক ফল প্রদান করে। হিন্দু ধর্মে স্নানের সময় পবিত্র নদী এবং দেবতাদের স্মরণ করে মন্ত্র জপ করা হয়। নিচে একটি জনপ্রিয় স্নান মন্ত্র দেওয়া হলোঃ 

  • স্নান মন্ত্রঃ

"ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।

নর্মদে সিন্ধু কাভেরী জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।"

অর্থঃ

হে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু এবং কাভেরী নদী! আপনাদের পবিত্রতা এবং আশীর্বাদ আমার স্নানের জলে বিদ্যমান করুন।

স্নানের-সময়-কোন-মন্ত্র-জপ-করতে-হয়
  স্নানের-সময়-কোন-মন্ত্র-জপ-করতে-হয়

  • পবিত্রতা ও শান্তির জন্য মন্ত্রঃ

"ওঁ আপো হিষ্ঠা ময়ো ভুবঃ।

তা ন উর্দ্ধানী ক্রব্যন্তে।

ইয়াস্যো বিশ্বা দয়াবুয়ঃ।"

অর্থঃ

হে পবিত্র জলের দেবতা! আপনাদের আশীর্বাদে আমাকে শুদ্ধ এবং শক্তিশালী করুন।

আরো পড়ুনঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলা কাহিনী কেমন ছিলো ও তার ইতিহাস সম্পর্কে জানুন?

স্নানের সময় এই মন্ত্র জপ করলে শারীরিক পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ হয়। এটি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি জাগ্রত করে এবং জীবনে পবিত্রতা বজায় রাখতে সহায়ক।

স্নান কয় প্রকার ও কি কিঃ

স্নান মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যা হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র ও আচার অনুযায়ী পালন করা হয়। প্রতিটি স্নানের একটি নির্দিষ্ট তাৎপর্য এবং উদ্দেশ্য রয়েছে। নিচে স্নানের প্রকারভেদ ও তাদের বিবরণ দেওয়া হলো পড়ে নিন?

১। নৈমিত্তিক স্নান (দৈনন্দিন স্নান)

  1. এটি প্রতিদিনের শারীরিক এবং মানসিক শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য করা হয়।
  2. সকালে স্নান করা শুদ্ধতার প্রতীক এবং এটি দিন শুরু করার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার।
  3. এই স্নানে সাধারণত জল ব্যবহার করা হয় এবং এটি দৈনন্দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ।

২। কাম্য স্নান (বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান)

  1. বিশেষ তিথি, পূজা, বা উপবাস পালনের আগে এই স্নান করা হয়।
  2. উদাহরণস্বরূপ, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, মহাশিবরাত্রি ইত্যাদির আগে স্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করা হয়।
  3. কাম্য স্নানে গঙ্গাজল বা অন্য পবিত্র নদীর জল ব্যবহার করলে তা অধিক পুণ্য প্রদান করে।

৩। প্রাণত্মক স্নান (আধ্যাত্মিক স্নান)

  1. এটি শারীরিক স্নানের পাশাপাশি আত্মার শুদ্ধি এবং পাপ মোচনের জন্য করা হয়।
  2. পবিত্র নদীতে, বিশেষত গঙ্গা, যমুনা, নর্মদা বা সরস্বতীতে ডুব দিয়ে স্নান করা এর অন্তর্ভুক্ত।
  3. এটি সাধারণত পুণ্য অর্জন এবং পাপমুক্তির উদ্দেশ্যে করা হয়।

এই তিন প্রকার স্নানের মাধ্যমে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা, মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, স্নান শুধুমাত্র দৈনন্দিন আচার নয়। বরং এটি পবিত্রতা এবং ধর্মীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

গঙ্গা স্নান করলে কি হয়ঃ

গঙ্গা স্নান হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, গঙ্গা স্নান কেবল শারীরিক শুদ্ধতা নয়, বরং আত্মার পবিত্রতা এবং পাপমোচনের প্রতীক। গঙ্গা নদীকে দেবী হিসেবে পূজা করা হয় এবং মনে করা হয়। এই গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করলে পূর্ব জন্মের এবং বর্তমান জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে আপনি সঠিক নিয়মে মন্দির দর্শন করবেন তার কৌশল?

গঙ্গা স্নান আধ্যাত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্থিরতা প্রদান করে। এটি পুণ্য অর্জনের একটি মাধ্যম, যা ঈশ্বরের কৃপা লাভের পথ সুগম করে। গঙ্গা স্নান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেশি করা হয়। যেমনঃ মকর সংক্রান্তি, গঙ্গাসপ্তমী, এবং মহাকুম্ভ মেলার সময় বিশেষ গুরুত্ব পায়।

গঙ্গা স্নানের মাধ্যমে ভক্তরা জীবনে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেন। এটি শুধু শরীর নয়, মনকেও শুদ্ধ করে এবং জীবনে শুভ ফল নিয়ে আসে। সুতরাং, গঙ্গা স্নান হিন্দু ধর্মে একটি মহাপুণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত।

গঙ্গা প্রণাম মন্ত্রঃ

  • প্রণাম মন্ত্রঃ

"নমঃ শিবায়ে গঙ্গায়াই শঙ্করায় মহেশ্বরায়।

ভগীরথ সুতায়ৈ চ স্বর্গ সোম হরায় নমঃ।"

অর্থঃ

আমি দেবী গঙ্গাকে, শঙ্কর ভগবানকে, মহেশ্বরকে এবং ভগীরথের কৃপায় পৃথিবীতে প্রবাহিত গঙ্গা নদীকে প্রণাম জানাই।

আরো পড়ুনঃ শাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে আপনি সঠিক নিয়মে বেদপাঠ পড়বেন ও পালন করবেন জানুন?

অতপর, গঙ্গা প্রণাম মন্ত্র জপ করার মাধ্যমে ভক্তরা দেবী গঙ্গার আশীর্বাদ কামনা করেন এবং আত্মার শুদ্ধি ও পাপমোচনের প্রার্থনা করেন। এটি প্রতিদিন বা বিশেষ পূজার সময় গঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার।

অষ্ঠমী স্নান মন্ত্রঃ

অষ্টমী স্নান মন্ত্র বিশেষত শুদ্ধতা ও পুণ্য লাভের জন্য জপ করা হয়। হিন্দু ধর্মে অষ্টমী তিথি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই দিনে স্নান করা পাপমোচন ও ধর্মীয় কল্যাণের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। স্নানের সময় নিচের মন্ত্রটি জপ করলে দেবতাদের আশীর্বাদ লাভ হয়। 

  • মন্ত্রঃ

"ওঁ আপোহিষ্ঠা ময়ো ভুবঃ।

তা ন উর্দ্ধানী ক্রব্যন্তে।

ইয়াস্যো বিশ্বা দয়াবুয়ঃ।"

অষ্ঠমী-স্নান-মন্ত্র
 অষ্ঠমী-স্নান-মন্ত্র

অর্থঃ

পবিত্র জলের দেবতা, আমাকে শুদ্ধ করুন এবং আপনার আশীর্বাদে আমাকে শক্তিশালী করুন।

সর্বশেষ, অষ্টমী স্নানের সময় এই মন্ত্র জপ করলে দেবতাদের কৃপা লাভ হয় এবং জীবনের সমস্ত পাপ মোচন হয়। এটি আত্মশুদ্ধি, পুণ্য অর্জন এবং মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন সনাতন ধর্মের মানুষের জন্য এই গঙ্গা স্নান মন্ত্র কি ও কীভাবে জপ করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই স্নান করার সময় কি বলতে হয় গঙ্গা মা'কে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.....................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )




































এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url