গনেশ পূজা করলে কি হয় - গনেশকে খুশি করার উপায় কি? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে দেবতাদের মধ্য জ্ঞানের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা এই গনেশ পূজা করলে কি হয় আমাদের জীবনে ও সংসারে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই গনেশকে খুশি করার উপায় গুলো কি কি হয়ে থাকে। যেটি দ্বারা গনেশ ভগবান খুশি হয়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
সনাতন ধর্মের মানুষ বিভিন্ন ধরনের দেব দেবীর পূজা করে থাকে। কেননা সব দেবতাদের মধ্য ভগবান বিরাজমান থাকে যেটি আমরা সনাতন ধর্ম থেকে জানতে পেরেছি। গণেশ জ্ঞান ও বুদ্ধির দিক দিয়ে সবার থেকে এগিয়ে আছে। তার বুদ্ধির সাথে আরো তুলনা করা যায় না।
![]() |
গনেশ-পূজা-করলে-কি-হয় |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, ভগবানের এই অবতার গুলোকে কীভাবে শ্রদ্ধা সহকারে রাখা যায় তার পরিকল্পনা করি। এই জন্য জেনে রাখুন যে গনেশ পূজা করলে কি হয় আমাদের জীবন ও সংসারে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই গনেশকে খুশি করার উপায় গুলো কি কি হয়। নিম্নে বিস্তারিত.........।
গনেশ পূজা করলে কি হয়ঃ
গণেশ পূজা করলে জীবনে সমৃদ্ধি, জ্ঞান, এবং বাধা দূর হয়। ভগবান গণেশকে হিন্দু ধর্মে বিঘ্নহর্তা (সব বাধা দূরকারী) এবং শুভ সূচনার দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়। যে কোনো নতুন কাজ শুরু করার আগে গণেশের পূজা করা হয়। কারণ তিনি জীবনের সকল প্রতিকূলতা দূর করে সাফল্যের পথ সুগম করেন। গণেশ পূজার মাধ্যমে ভক্তদের মধ্যে ধৈর্য, মনোযোগ এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। গণেশ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দেবতা।
আরো পড়ুনঃ হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে আপনি সঠিক নিয়ম মন্দির দর্শন করবেন শ্রদ্ধা সাথে জানুন?
তাই শিক্ষার্থীরা তাঁর আশীর্বাদ লাভের জন্য পূজা করেন। শাস্ত্র মতে, গণেশ পূজা করলে ভক্তের জীবন থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং পজিটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরিবারে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখতে গণেশ পূজা অত্যন্ত কার্যকর। এটি ভক্তের কর্মজীবনে সফলতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়। তাই গণেশ পূজা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুভ ফল এবং আশীর্বাদ প্রদান করে।
গনেশকে খুশি করার উপায় কিঃ
গণেশকে খুশি করার জন্য শুদ্ধ মনোভাব, ভক্তি, এবং নির্দিষ্ট রীতিনীতি মেনে পূজা করতে হয়। ভগবান গণেশ অত্যন্ত সহজে সন্তুষ্ট হন, তাই তাঁর পূজা খুবই সহজ এবং ফলপ্রসূ। গণেশকে খুশি করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে তাহলোঃ
- পূজা শুদ্ধতার সঙ্গে শুরু করুনঃ
পূজার দিন সকালে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরে ভগবান গণেশের মূর্তি বা ছবি সামনে রেখে পূজা করুন। শুদ্ধ মনোভাব নিয়ে গণেশের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করুন।
- দূর্বা ঘাস অর্পণ করুনঃ
গণেশের প্রিয় উপকরণগুলোর মধ্যে দূর্বা ঘাস অন্যতম। পূজার সময় দূর্বা ঘাস নিবেদন করলে গণেশ সন্তুষ্ট হন।
- লাড্ডু বা মিষ্টি নিবেদন করুনঃ
গণেশের অত্যন্ত প্রিয় খাবার হলো মোদক বা লাড্ডু। পূজায় এটি নিবেদন করলে তিনি অত্যন্ত খুশি হন। তার সাথে সাথে আপনি চাইলে গনেশের প্রিয় মন্ত্র জপ করতে পারেন। তাহলো...।
আরো পড়ুনঃ শাস্ত্র অনুযায়ী হিন্দু ধর্মের আদি কালের নাম কি ও কীভাবে গঠিত হয়েছে জেনে নিন?
"ওঁ গণ গণপতয়ে নমঃ"
এই মন্ত্র জপ করলে গণেশের কৃপা লাভ করা যায়।
- গণেশের প্রিয় ফুল ব্যবহার করুনঃ
লাল জবা এবং অন্যান্য সুগন্ধি ফুল গণেশকে নিবেদন করলে তিনি খুশি হনৎ
- ভক্তি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আরতি করুনঃ
গণেশের ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে আরতি করুন এবং গভীর ভক্তি সহকারে তাঁর মাহাত্ম্য স্মরণ করুন।
- বাধা দূর করার প্রার্থনা করুনঃ
গণেশকে ভক্তিপূর্ণ মনে নিজের জীবনের সমস্ত বাধা দূর করার প্রার্থনা করুন।
- গণেশ চতুর্থী পালন করুনঃ
গণেশ চতুর্থী দিনে বিশেষ পূজা ও উপবাস পালন করলে গণেশের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
ভক্তি ও শুদ্ধতার সঙ্গে পূজা করলে ভগবান গণেশ খুব সহজেই সন্তুষ্ট হন। তিনি ভক্তের জীবনের সব বাধা দূর করে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সাফল্য প্রদান করেন।
সিদ্ধিদাতা গনেশ অর্থঃ
"সিদ্ধিদাতা গণেশ" অর্থ হলো সেই ভগবান গণেশ, যিনি সমস্ত কাজের শুভ সূচনা এবং সফল সমাপ্তি নিশ্চিত করেন। হিন্দু ধর্মে ভগবান গণেশকে সিদ্ধির দেবতা বলা হয়। কারণ তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য এবং সমৃদ্ধি প্রদান করেন। "সিদ্ধি" শব্দের অর্থ হলো সফলতা বা পূর্ণতা, আর "দাতা" মানে যিনি দেন। অর্থাৎ, ভগবান গণেশ জীবনের সমস্ত বাধা দূর করে ভক্তদের কৃতকর্মে সফলতা এনে দেন।
আরো পড়ুনঃ হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কীভাবে গীতাপাঠ পড়বেন ও গীতা পড়ার সঠিক সময় জেনে নিন?
গণেশকে যে কোনো নতুন কাজের শুরুতে পূজা করা হয়, কারণ তিনি বিঘ্নহর্তা বা বিঘ্ননাশক। তাঁর কৃপায় ভক্তরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুভ ফল লাভ করেন। গণেশের আশীর্বাদে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ধৈর্য, এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ভগবান গণেশকে সিদ্ধিদাতা বলে অভিহিত করা হয় এবং তাঁর পূজার মাধ্যমে ভক্তরা জীবনের সকল বাধা কাটিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যান।
গনেশ পূজার উপকরণঃ
গণেশ পূজার উপকরণ ভগবান গণেশকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো শুদ্ধতা এবং ভক্তির সঙ্গে নিবেদন করতে হয়। গণেশ পূজার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর তালিকা নিচে দেওয়া হলো পড়ে নিন?
- গণেশের মূর্তি বা ছবিঃ পূজার মূল অংশ হিসেবে গণেশের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করতে হবে।
- দূর্বা ঘাসঃ গণেশের অত্যন্ত প্রিয় উপকরণ, যা পূজায় অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে পূজার সময়।
- লাড্ডু বা মোদকঃ গণেশের প্রিয় ভোগ, যা পূজার সময় তার সামনে নিবেদন করতে হবে।
- গঙ্গাজলঃ গণেশ মূর্তি বা ছবিকে শুদ্ধ করতে গঙ্গাজল ব্যবহার করা হয়।
- চন্দনঃ চন্দন পেস্ট গণেশের মূর্তিতে লাগিয়ে পূজা করা হয়।
- ধূপ ও দীপঃ পূজার সময় ধূপ ও প্রদীপ জ্বালানো হয়, যা পূজার শুভতা বাড়ায়।
- ফুলঃ লাল জবা, অপরাজিতা, গাঁদা ফুল, এবং সুগন্ধি ফুল গণেশ পূজার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- নাড়ু বা মিষ্টিঃ ফল এবং মিষ্টি, বিশেষত কলা, আপেল, এবং নারকেল পূজায় নিবেদন করা হয়।
- রুদ্রাক্ষ মালাঃ গণেশের মন্ত্র জপের সময় রুদ্রাক্ষ মালা ব্যবহার করা হয়।
- পঞ্চামৃতঃ দুধ, মধু, দই, ঘি, এবং চিনি দিয়ে তৈরি পঞ্চামৃত গণেশের অভিষেকের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- পাতাঃ বেলপাতা, কলাপাতা, এবং আমপাতা পূজার সময় ব্যবহার করা হয়।
- কুমকুমঃ গণেশের কপালে তিলক দিতে কুমকুম ব্যবহার করা হয়।
গণেশ পূজার সময় এই সমস্ত উপকরণ শুদ্ধতা ও ভক্তির সঙ্গে নিবেদন করলে ভগবান গণেশ সন্তুষ্ট হন এবং ভক্তদের জীবনে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন।
গনেশ পূজা করার প্রদ্ধতিঃ
গণেশ পূজা করার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ, তবে এটি শুদ্ধতা, ভক্তি, এবং সঠিক নিয়ম মেনে পালন করতে হয়। পূজার দিন সকালে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরে পূজার স্থান পরিষ্কার করে পবিত্র করতে হয়। গণেশের মূর্তি বা ছবি একটি পবিত্র স্থানে স্থাপন করতে হবে। পূজার শুরুতে গণেশের মূর্তিকে গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধ করা হয়। এরপর চন্দন, ধূপ, দীপ, এবং ফুল নিবেদন করে পূজা শুরু করা হয়। গণেশের প্রিয় উপকরণ, যেমনঃ দূর্বা ঘাস, লাল জবা ফুল, এবং লাড্ডু বা মোদক নিবেদন করতে হয়।
![]() |
গনেশ-পূজা-করার-প্রদ্ধতি |
পূজার সময় ভক্তি সহকারে "ওঁ গণ গণপতয়ে নমঃ" বা "ওঁ নমো সিদ্ধি বিনায়কায়" মন্ত্র জপ করা হয়।গণেশ পূজায় ধূপ এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করা হয়। ভক্তি সহকারে ভগবান গণেশকে প্রার্থনা করে জীবনের বাধা-বিঘ্ন দূর করার অনুরোধ করা হয়। পূজার শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয় এবং ভক্তরা শুদ্ধ মনোভাব নিয়ে গণেশের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। সঠিক পদ্ধতিতে গণেশ পূজা করলে ভগবান গণেশের কৃপা লাভ হয় এবং জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে।
গনেশ পূজার মন্ত্রঃ
গণেশ পূজায় ব্যবহৃত মন্ত্র ভগবান গণেশের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য অত্যন্ত পবিত্র এবং শক্তিশালী। এগুলো শুদ্ধ উচ্চারণ এবং ভক্তি সহকারে জপ করলে ভগবান গণেশ সন্তুষ্ট হন এবং জীবনের সমস্ত বাধা দূর করেন। নিচে গণেশ পূজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র উল্লেখ করা হলো জেনে নিন?
১। গণেশের প্রধান মন্ত্রঃ
"ওঁ গণ গণপতয়ে নমঃ"
অর্থঃ ভগবান গণেশকে প্রণাম, যিনি সমস্ত বিঘ্ন দূর করেন।
আরো পড়ুনঃ বিশেষজ্ঞদের মতে পুরাণ কে লিখেছেন ও কোন ভাষায় লিখেছেন জেনে রাখুন?
২। সিদ্ধিদাতা মন্ত্রঃ
"ওঁ বক্রতুণ্ডায় হুম্"
অর্থঃ ভগবান গণেশের শরণাপন্ন হই, যিনি বক্রতুণ্ড (বাঁকা শুঁড়বিশিষ্ট) এবং বিঘ্ননাশক।
৩। গণেশ গায়ত্রী মন্ত্রঃ
"ওঁ একদন্তায় বিদ্মহে।
বক্রতুণ্ডায় ধীমহি।
তন্নো দন্তিঃ প্রচোদয়াত্।"
অর্থঃ আমরা একদন্ত গণেশকে জানি, বক্রতুণ্ড গণেশকে ধ্যান করি। তিনি আমাদের প্রজ্ঞা দান করুন।
৪। মহামন্ত্রঃ
"ওঁ নমো সিদ্ধি বিনায়কায়।
নমস্তে সিদ্ধি বিনায়ক।"
অর্থঃ সিদ্ধির দেবতা ভগবান গণেশকে প্রণাম জানাই।
৫। গণেশ অষ্টোত্র মন্ত্রঃ
"ওঁ শ্রী গজাননায় নমঃ।"
অর্থঃ গজানন (হাতির মতো মুখবিশিষ্ট) গণেশকে প্রণাম।
সর্বশেষ কথা, এই মন্ত্রগুলো শুদ্ধ উচ্চারণ এবং মনোযোগ সহকারে জপ করলে ভগবান গণেশ জীবনের সমস্ত বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তি প্রদান করেন। পূজার সময় এই মন্ত্রগুলো বারবার উচ্চারণ করলে গণেশের বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়।
গনেশ ঠাকুরের প্রিয় রং কিঃ
গণেশ ঠাকুরের প্রিয় রং হলো "লাল এবং হলুদ"। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র ও পূজার বিধান অনুযায়ী, এই রংগুলো ভগবান গণেশের শক্তি, সৌভাগ্য, এবং শুভতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। লাল রং উদ্যম, শক্তি এবং শুভ সূচনার প্রতীক, যা গণেশ ঠাকুরের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই। পূজার সময় লাল রঙের জবা ফুল এবং লাল কাপড় গণেশ ঠাকুরকে নিবেদন করা হয়, যা তাঁকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট করে।
আরো পড়ুনঃ শিব পূজা কীভাবে করবেন ও শিব পূজা করার ক্ষেত্রে কি কি উপকরণ লাগে জানুন?
হলুদ রং সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং জ্ঞানের প্রতীক। পূজার সময় গণেশকে হলুদ রঙের চন্দন, গাঁদা ফুল এবং মিষ্টি নিবেদন করা হয়। এই রংগুলো ভক্তদের জীবনে সৌভাগ্য এবং শান্তি আনে। তাই গণেশ ঠাকুরের পূজায় লাল ও হলুদ রঙের উপকরণ ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন সনাতন দেব দেবীর মধ্য এই গনেশ পূজা করলে কি হয় আমাদের জীবনে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই গনেশকে খুশি করার উপায় কি হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন........................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url