ধ্যান করার সঠিক সময় - ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার ২০ টি সহজ উপায়? জেনে রাখুন?

আজকে আমরা জানবো যে হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী যে যোগ ধ্যান করা হয়। সেই ধ্যান করার সঠিক সময় কখন হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার ২০ টি সহজ উপায় গুলো কি কি। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ধ্যান করলে শরীর ও মন সুস্থ্য থাকে দিন ভাল যায়। এই ধ্যান করলে মানুষের মস্তিক শান্ত হয়। মানুষ যেকোনো সিধান্ত নিতে পারে খুব সহজে। মানুষকে প্রতিদিন সকালে ওঠে ধ্যান করা উচিত। কেননা ধ্যান দ্বারা মানুষের রোগ বালাই দূর হয়ে থাকে। শরীরে জোস আসে।

ধ্যান-করার-সঠিক-সময়
ধ্যান-করার-সঠিক-সময়   

তাই আসুন জেনে রাখি যে, আমরা যে ধ্যান করি প্রতিদিন সেই ধ্যান করার সঠিক সময় কখন হয়। বা এই ধ্যান কোন সময়ে করা উচিত। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার ২০ টি সহজ উপায় গুলো কি কি আমাদের শরীরের জন্য। নিম্নে বিস্তারিত.........।

ধ্যান করার সঠিক সময়ঃ

ধ্যান করার সঠিক সময় হলো এমন একটি সময় যখন মন শান্ত থাকে এবং পরিবেশ নিস্তব্ধ থাকে। হিন্দু ধর্ম এবং যোগ শাস্ত্র অনুযায়ী, ধ্যানের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ভোরবেলা এবং সন্ধ্যার সময়। ভোরবেলার সময়, বিশেষ করে সূর্যোদয়ের আগে, যাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলা হয়, এটি ধ্যানের জন্য আদর্শ, কারণ এই সময়ে প্রকৃতি শান্ত থাকে এবং মন সহজেই একাগ্র হয়।

আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি নিজের মাইন্ড শান্ত রাখবেন ও নিজের মন ভাল রাখবেন জেনে নিন?

সন্ধ্যার সময়, দিনের কাজ শেষে ধ্যান করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীর-মন শান্ত হয়। এছাড়া যারা নির্দিষ্ট সময়ে ধ্যান করতে পারেন না, তারা দিনের যে কোনো সময় ধ্যান করতে পারেন। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে পরিবেশ শান্ত এবং মনকে একাগ্র করার মতো পরিস্থিতি আছে।

ধ্যানের সময় এবং স্থানে নিয়মিততা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মনকে সহজে ধ্যানমগ্ন হতে সাহায্য করে। তাই ধ্যান করার সঠিক সময় হলো এমন সময়, যখন আপনি শান্ত, সতেজ এবং মনোযোগী অনুভব করেন।

ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার ২০ টি সহজ উপায়ঃ

ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার জন্য সহজ কিছু পদ্ধতি বা উপায় অনুসরণ করলে ধ্যান সহজ এবং ফলপ্রসূ হয়। এখানে ২০টি সহজ উপায় উল্লেখ করা হলো, যা ধ্যানের গভীরে যেতে সাহায্য করবে নিম্নে উদাহরণঃ

  • ১। একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুনঃ

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ধ্যান করলে এটি অভ্যাসে পরিণত হয় এবং মন ধীরে ধীরে সহজেই একাগ্র হয়।

  • ২। শান্ত পরিবেশ বেছে নিনঃ

নীরব এবং শান্ত একটি স্থান বেছে নিন, যেখানে কোনো বাধা-বিঘ্ন বা শব্দদূষণ থাকবে না।

  • ৩। আরামদায়ক আসন নিনঃ

সিদ্ধাসন, পদ্মাসন বা যে কোনো আরামদায়ক অবস্থানে বসুন। শারীরিক আরাম ধ্যানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  • ৪। সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ম পালন করুনঃ

গভীর এবং নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা করুন। এটি মনকে শান্ত করে এবং ধ্যানের জন্য প্রস্তুত করে।

আরো পড়ুনঃ ধ্যানের মাধ্যমে কীভাবে আপনি নিজের মাথা ব্যাথা দূর করবেন জেনে রাখুন?

  • ৫। চোখ বন্ধ করুনঃ

চোখ বন্ধ রাখলে বাইরের বিষয় থেকে মন সরে যায় এবং অভ্যন্তরীণ দিকে মনোনিবেশ করা সহজ হয়।

  • ৬। মন্ত্র জপ করুনঃ

"ওঁ" বা অন্য কোনো পবিত্র মন্ত্র জপ করলে মন দ্রুত একাগ্র হয় ধ্যানের সময়।

  • ৭। মানসিক ছবি তৈরি করুনঃ

একটি নির্দিষ্ট মানসিক ছবি, যেমনঃ সূর্য, চন্দ্র, বা কোনো দেবতার মূর্তি কল্পনা করুন। এটি ধ্যানের গভীরতায় যেতে সাহায্য করে।

  • ৮। দৃষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত করুনঃ

চোখ বন্ধ অবস্থায় তৃতীয় নয়ন বা কপালের মাঝখানে মনোযোগ দিন।

  • ৯। ধ্যানের সময় মনকে ভাসতে দিনঃ

মনে কোনো চিন্তা এলে তা দূরে ঠেলে না দিয়ে নিরপেক্ষভাবে গ্রহণ করুন এবং ধীরে ধীরে মনকে শূন্যতায় নিয়ে যান।

  • ১০। ধ্যানের আগে শরীর শিথিল করুনঃ

ধ্যান শুরু করার আগে হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করুন। এটি শরীর এবং মনকে শিথিল করে।

  • ১১। নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখুনঃ

ধ্যানের জন্য একটি উদ্দেশ্য ঠিক করুন, যেমন মানসিক শান্তি, শুদ্ধি, বা আধ্যাত্মিক উন্নতি।

  • ১২। ধ্যানের সময় মোমবাতি বা ধূপ জ্বালানঃ

মৃদু আলো এবং সুগন্ধি পরিবেশ মনকে শান্ত ও সুরভিত রাখে।

  • ১৩। ধ্যানের সময় সঙ্গীত ব্যবহার করুনঃ

শান্ত সঙ্গীত বা প্রাকৃতিক শব্দ শুনলে মন সহজে স্থির হয়। তাই প্রতিদিন একবার হলেও গান শুনুন।

আরো পড়ুনঃ গঙ্গা স্নান করার সময় কি কি নিয়ম পালন করতে হয় ও কি মন্ত্র জপ করতে হয় জানুন?

  • ১৪। ধৈর্য ধরুনঃ

শুরুতে গভীর ধ্যানে যেতে না পারলেও ধৈর্য ধরে ধ্যান চালিয়ে যান। ধীরে ধীরে গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব।

  • ১৫। দিনের শুরু বা শেষের সময় বেছে নিনঃ

ব্রাহ্মমুহূর্ত (ভোরবেলা) এবং সন্ধ্যা ধ্যানের জন্য উপযুক্ত সময়।

  • ১৬। প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুনঃ

ধ্যানের সময় ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে থাকুন।

  • ১৭। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুনঃ

ধারালো বা ভারী খাবার এড়িয়ে হালকা খাবার গ্রহণ করুন, যা ধ্যানকে সহজ করে।

  • ১৮। ধ্যানের স্থানে নিয়মিততা বজায় রাখুনঃ

একই স্থানে প্রতিদিন ধ্যান করলে মন সহজে স্থির হয়।

  • ১৯। নিজেকে চাপ মুক্ত রাখুনঃ

ধ্যানের সময় কোনো চাপ না নিয়ে নিজেকে মুক্ত এবং স্বাভাবিক রাখুন।

  • ২০। ধ্যানের শেষে ধীরে ধীরে উঠে আসুনঃ

ধ্যান শেষ করার পরে ধীরে ধীরে চোখ খুলুন এবং শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন।

ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার জন্য নিয়মিত চর্চা, ধৈর্য এবং শুদ্ধ মনোভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ২০টি পদ্ধতি অনুসরণ করলে ধ্যান সহজ হবে এবং আধ্যাত্মিক গভীরতা অর্জন সম্ভব হবে।

কীভাবে ধ্যান করতে হয়ঃ

ধ্যান করার জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। ধ্যান হলো মনকে স্থির করে আত্মার গভীরে প্রবেশ করার একটি চর্চা, যা মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি এনে দেয়। ধ্যান করার ধাপগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো দেখে নিন?

  • ১। একটি শান্ত স্থান বেছে নিনঃ

ধ্যানের জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন, যেখানে কোনো ধরনের শব্দদূষণ বা ব্যাঘাত থাকবে না। এটি আপনার মনকে শিথিল হতে সাহায্য করবে।

  • ২। আরামদায়ক আসন গ্রহণ করুনঃ 

পদ্মাসন, সিদ্ধাসন বা চেয়ারে আরামদায়কভাবে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রাখুন এবং হাত দুটো হাঁটুর ওপরে রাখুন।

কীভাবে-ধ্যান-করতে-হয়
কীভাবে-ধ্যান-করতে-হয়

  • ৩। চোখ বন্ধ করুনঃ

চোখ বন্ধ রাখলে বাইরের জগতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মন সরিয়ে অভ্যন্তরীণ শান্তির দিকে মনোনিবেশ করা সহজ হয়।

  • ৪। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুনঃ

গভীর এবং ধীর শ্বাস নিন। শ্বাস নিতে এবং ছাড়ার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন। এটি মনকে স্থির এবং চিন্তামুক্ত করতে সাহায্য করে।

  • ৫। মন্ত্র জপ করুন, যদি প্রয়োজন হয়ঃ

"ওঁ" বা অন্য কোনো পবিত্র মন্ত্র ধীরে ধীরে জপ করুন। এটি মনকে আরও একাগ্র করতে সাহায্য করে।

  • ৬। নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে মনোযোগ দিনঃ

তৃতীয় নয়নের দিকে (কপালের মাঝখানে) বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিন। এটি ধ্যানের গভীরে যেতে সহায়ক।

  • ৭। নিজের চিন্তা পর্যবেক্ষণ করুনঃ

ধ্যানের সময় বিভিন্ন চিন্তা আসতে পারে। সেই চিন্তাগুলোকে উপেক্ষা না করে নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং আস্তে আস্তে মনকে শূন্যতায় নিয়ে যান।

  • ৮। ধৈর্য ধরুনঃ

শুরুর দিকে মন দীর্ঘ সময় একাগ্র রাখতে না পারলেও ধৈর্য ধরে চর্চা চালিয়ে যান। নিয়মিত ধ্যানের মাধ্যমে এটি সহজ হবে।

  • ৯। নির্দিষ্ট সময় ধরে ধ্যান করুনঃ

প্রথমে ৫-১০ মিনিট ধরে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

  • ১০। ধ্যান শেষ করার পদ্ধতিঃ

ধ্যান শেষ করার আগে ধীরে ধীরে চোখ খুলুন এবং কয়েক মুহূর্ত স্থির বসে থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে উঠে দিন শুরু করুন।

ধ্যান করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়। নিয়মিত ধ্যানের মাধ্যমে আপনি নিজের মধ্যে এক গভীর শান্তি ও সুখের অনুভূতি লাভ করবেন।

ধ্যান করলে কি হয়ঃ

ধ্যান করলে মন, শরীর এবং আত্মার মধ্যে সমন্বয় ঘটে, যা মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি এনে দেয়। ধ্যান মানসিক চাপ কমায় এবং মনকে স্থির ও একাগ্র করে। এটি চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা বৃদ্ধি করে। ধ্যানের মাধ্যমে মানুষ নিজের ভেতরকার শক্তি ও সৃষ্টিশীলতাকে জাগ্রত করতে পারে।

শারীরিকভাবে ধ্যান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিততা বজায় রাখে। এটি মানসিক ক্লান্তি দূর করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। নিয়মিত ধ্যান করলে নেতিবাচক চিন্তা, ভয় এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আধ্যাত্মিকভাবে ধ্যান আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সম্পর্ক স্থাপন করে এবং জীবনের গভীরতর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এটি মানুষের ভেতরকার প্রেম, সহানুভূতি এবং ধৈর্যের মতো গুণাবলিকে বৃদ্ধি করে। সুতরাং, ধ্যান করলে ব্যক্তি মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

ধ্যানের উপকারিতা কি কিঃ

ধ্যানের উপকারিতা অসংখ্য, যা মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়ক। এটি জীবনে শান্তি, স্থিরতা এবং ইতিবাচকতা নিয়ে আসে। ধ্যানের প্রধান উপকারিতাগুলো নিম্নরূপঃ

  • ১। মানসিক উপকারিতাঃ

  1. চিন্তায় স্থিরতাঃ ধ্যান মনকে একাগ্র এবং শান্ত করে, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর করে।
  2. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ নিয়মিত ধ্যান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং মনোযোগ বাড়ায়।
  3. নেতিবাচক চিন্তা দূর করেঃ ধ্যান মন থেকে নেতিবাচকতা এবং ভয় দূর করতে সাহায্য করে।
  4. মানসিক চাপ হ্রাসঃ এটি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  5. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিঃ ধ্যান আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বাড়াতে সাহায্য করে।

  • ২। শারীরিক উপকারিতাঃ

  1. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ ধ্যান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।
  2. শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিততাঃ ধ্যান শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  3. ঘুমের উন্নতিঃ এটি মানসিক চাপ কমিয়ে গভীর এবং আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করে।
  4. ব্যথা কমায়ঃ ধ্যান দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং শারীরিক ক্লান্তি কমাতে কার্যকর।
  5. ইমিউন সিস্টেম উন্নত করেঃ ধ্যান শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

৩। আধ্যাত্মিক উপকারিতাঃ

  1. আত্মজ্ঞান বৃদ্ধিঃ ধ্যান আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সম্পর্ক স্থাপন করে।
  2. আধ্যাত্মিক উন্নতিঃ এটি জীবনের গভীর অর্থ ও উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
  3. ধর্মীয় চেতনা বৃদ্ধিঃ ধ্যানের মাধ্যমে ভগবানের প্রতি ভক্তি এবং বিশ্বাস গভীর হয়।
  4. শান্তি এবং সমতাঃ ধ্যান মানসিক শান্তি এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
  5. মোক্ষ লাভের পথঃ ধ্যান আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং মুক্তির পথে নিয়ে যায়।

ধ্যান শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক উন্নয়নে অপরিহার্য। এটি জীবনের মান উন্নত করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের পথ প্রশস্ত করে। নিয়মিত ধ্যানের অভ্যাস জীবনকে সমৃদ্ধ এবং ইতিবাচক করতে সহায়ক। তাই প্রত্যেক মানুষকে ধ্যান করা উচিত।

ধ্যান করার মন্ত্রঃ

ধ্যান করার সময় মন্ত্র জপ করা মনকে একাগ্র করতে এবং আত্মিক উন্নতিতে সহায়ক। এখানে কিছু জনপ্রিয় ধ্যান মন্ত্র দেওয়া হলো, যা ধ্যানের সময় উচ্চারণ করতে পারেন তাহলোঃ

  •  (ওঁ মন্ত্রঃ)

উচ্চসুরে বলুন... "ও"

অর্থঃ ওঁ হলো সর্বোচ্চ শক্তি এবং ব্রহ্মাণ্ডের মূল শব্দ। এটি ধ্যানের সময় সবচেয়ে সাধারণ এবং শক্তিশালী মন্ত্র।

  • (গায়ত্রী মন্ত্রঃ) 

"ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ।

তৎ সবিদুর্বরণ্যং।

ভর্গো দেবস্য ধীমহি।

ধিও যোনঃ প্রচোদয়াত।"

অর্থঃ আমরা সেই পরম সত্যের উপাসনা করি, যিনি আমাদের জ্ঞান এবং শক্তি দান করেন। ধ্যানের সময় এটি উচ্চারণ করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

ধ্যান-করার-মন্ত্র
ধ্যান-করার-মন্ত্র   

  •  (শিব ধ্যান মন্ত্রঃ)

"ওঁ নমঃ শিবায়"

অর্থঃ ভগবান শিবকে প্রণাম জানাই। এটি শিবের শক্তি এবং আশীর্বাদ লাভের জন্য ব্যবহৃত ধ্যান মন্ত্র।

  •  (গুরু মন্ত্রঃ)

"গুরুর ব্রহ্মা, গুরুর বিষ্ণু, গুরুর দেবো মহেশ্বর।

গুরু সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।"

অর্থঃ গুরু তিনটি শক্তির প্রতীক—ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। গুরুই পরম সত্যের পথে নিয়ে যান।

  •  (হনুমান মন্ত্রঃ)

"ওঁ হুঁ হনুমতে নমঃ।"

অর্থঃ এই মন্ত্র ধ্যানের সময় সাহস, শক্তি, এবং সংকল্পের জন্য জপ করা হয়।

  •  (মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রঃ)

"ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে।

সুগন্ধিম্ পুষ্টি বর্ধনম্।

উর্বারুকমিবা বন্ধনান্।

মৃত্যোর্মোক্ষীয় মমৃতাৎ।"

অর্থঃ ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করি যেন আমাদের পাপমুক্ত করে মোক্ষের পথে নিয়ে যান।

অতপর, ধ্যানের সময় এই মন্ত্রগুলো শুদ্ধ উচ্চারণ এবং ভক্তি সহকারে জপ করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ধ্যানের গভীরতায় পৌঁছানো সহজ হয়। মন্ত্র জপ ধ্যানকে আরও কার্যকর এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সহায়ক করে।

ধ্যান কয় প্রকারঃ

ধ্যান মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যা এর উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে বিভক্ত। প্রতিটি ধ্যান মানুষের মানসিক, শারীরিক, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কার্যকর। ধ্যানের প্রধান প্রকারভেদগুলো হলোঃ

১। সচেতন ধ্যান (Focused Meditation)

  1. এই ধ্যানের সময় মনকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়, শব্দ, মন্ত্র, শ্বাস-প্রশ্বাস, বা কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুর ওপর কেন্দ্রীভূত করা হয়।
  2. উদাহরণস্বরূপ, মন্ত্র জপ করা (যেমন "ওঁ"), শ্বাসের ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করা, বা প্রদীপের আলোতে মনোযোগ স্থাপন করা।
  3. এটি একাগ্রতা বৃদ্ধি এবং মনোযোগের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হয়।

২। অচেতন বা শূন্য ধ্যান (Mindfulness Meditation)

  1. এই ধ্যানের মাধ্যমে মনকে সম্পূর্ণ শূন্য বা নিরপেক্ষ অবস্থায় রাখা হয়।
  2. বর্তমান মুহূর্তে যা ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়, কিন্তু চিন্তাগুলোকে মূল্যায়ন বা বিচার করা হয় না।
  3. এটি মানসিক শান্তি, চাপমুক্তি, এবং আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৩। আধ্যাত্মিক ধ্যান (Spiritual Meditation)

  1. এই ধ্যানের মাধ্যমে ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বা আত্মার গভীরতায় প্রবেশের চেষ্টা করেন।
  2. এটি সাধারণত ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রার্থনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
  3. উদাহরণস্বরূপ, গায়ত্রী মন্ত্র জপ, শিবের ধ্যান, বা অন্য কোনো দেবতার প্রতি ভক্তিপূর্ণ মনোযোগ।
  4. এটি আত্মজ্ঞান এবং মোক্ষ অর্জনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সর্বশেষ, ধ্যানের এই তিন প্রকার মানুষকে মানসিক, শারীরিক, এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। ব্যক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী, তিনি যে কোনো প্রকার ধ্যান চর্চা করতে পারেন। নিয়মিত ধ্যানের মাধ্যমে জীবনে শান্তি, স্থিরতা, এবং সুখ লাভ সম্ভব।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী এই ধ্যান করার সঠিক সময় কহন হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করার ২০ টি সহজ উপায় কি।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url