বেদানা গাছ চেনার উপায় - বেদানা চাষ প্রদ্ধতি? জেনে রাখুন?
আজকে আমরা জানবো যে ফল গাছের মধ্য ভিটামিন যুক্ত ও প্রোটিন ভরা এই বেদানা গাছ চেনার উপায় গুলো কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই বেদানা চাষ প্রদ্ধতি করার সহজ উপায় গুলো কি কি হয়ে থাকে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের চারপাশে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগিয়ে থাকি। এই গাছ থেকে আমরা অনেক কিছু জীবনের পেয়ে থাকি। যাতে করে আমাদের জীবন নিধারণের কাজে লাগে থাকে। আপনি আপনার ইচ্ছা মতো গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে পারবেন।
বেদানা-গাছ-চেনার-উপায় |
তাই আসুন জেনে রাখি যে এই ফল গাছের মধ্য এই বেদানা গাছ চেনার উপায় গুলো কি কি হয়ে থাকে। যেটি দেখে আমরা চিনতে পরবো যে কোন গাছটি ভাল হবে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই বেদানা চাষ প্রদ্ধতি কি করে সহজ করা যায়। নিম্নে বিস্তারিত.........।
বেদানা গাছ চেনার উপায়ঃ
বেদানা গাছ চেনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এটি একটি ঝোপালো এবং মাঝারি আকারের গাছ, যা প্রায় ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বেদানা গাছের পাতা সরু, চকচকে এবং গাঢ় সবুজ রঙের হয়। গাছের কাণ্ড শক্ত এবং এর ডালপালাগুলো বেশ ঘন হয়। বেদানা গাছে বসন্তকালে ছোট ছোট লাল বা কমলা রঙের ফুল ফোটে, যা দেখতে আকর্ষণীয়।
আরো পড়ুনঃ ছাদে কীভাবে সহজ উপায়ে আঙ্গুর চাষবাদ করবেন ও ফল সংগ্রহ করবেন জানুন?
ফুল ঝরার পর ফল তৈরি হয়, যা গোলাকার এবং খোসার রঙ প্রজাতি অনুযায়ী লালচে বা হালকা হলুদ হতে পারে। বেদানা ফলের ভেতরে ছোট ছোট রসালো দানা থাকে, যা স্বাদে টক-মিষ্টি। গাছটি সাধারণত উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে সহজেই বেদানা গাছ চেনা যায়।
বেদানা চাষ প্রদ্ধতিঃ
বেদানা গাছ উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি সাধারণত ২০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো ফলন দেয়। বেদানা চাষের জন্য দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। মাটি জলাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় এবং pH মান ৬.৫ থেকে ৭.৫- এর মধ্যে হলে বেদানা গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়। বেদানা চাষের জন্য উন্নতমানের চারা বা গুটি কলম ব্যবহার করা উত্তম।
জমি চাষের পর ২-৩ ফুট গভীর এবং প্রায় ৫-৬ ফুট দূরত্বে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে জৈব সার মিশিয়ে চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের পর মাটি হালকা চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। বেদানা গাছের ভালো বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বছরে দুইবার জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ ব্যবহার করলে গাছ শক্তিশালী হয় এবং ফলন বাড়ে।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে লিচু গাছ লাগাবেন ও সহজ উপায়ে চাষবাদ করবেন জেনে রাখুন?
শুষ্ক মৌসুমে গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি জমে থাকা এড়াতে হবে।গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে দিলে গাছের আলো-বাতাস প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং ফলন ভালো হয়। এছাড়া গাছের আশেপাশের আগাছা পরিষ্কার রাখা দরকার। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বেদানা গাছ সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। ফুল আসার প্রায় ৫-৬ মাস পরে ফল পরিপক্ক হয়। পাকা বেদানার খোসা রঙে গাঢ় লাল হয় এবং ফল মিষ্টি স্বাদের হয়। সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যার মাধ্যমে বেদানা চাষ থেকে উচ্চ ফলন এবং আর্থিক লাভ অর্জন করা সম্ভব। এটি একটি পুষ্টিকর এবং বাজারে চাহিদাসম্পন্ন ফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষের সম্ভাবনা ব্যাপক।
বেদানা গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণঃ
বেদানা গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ সাধারণত সঠিক পরিচর্যার অভাব, পরিবেশগত সমস্যা এবং পুষ্টির ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। মাটিতে পুষ্টির অভাব, বিশেষত নাইট্রোজেন ও পটাশের ঘাটতি থাকলে গাছের ফুল ঝরে যেতে পারে। অতিরিক্ত বা অপ্রতুল সেচের কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে ফুল টিকে থাকতে পারে না।
বেদানা গাছের বৈশিষ্ঠ্যঃ
বেদানা গাছ একটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের চিরসবুজ ঝোপালো গাছ, যা সাধারণত ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এই গাছের পাতা সরু, উজ্জ্বল সবুজ এবং কিছুটা চকচকে হয়। বেদানা গাছে বসন্ত বা গ্রীষ্মকালে লালচে-কমলা রঙের ছোট ফুল ফোটে, যা দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর ফল গোলাকার, খোসা মসৃণ বা কিছুটা খসখসে এবং রঙ লালচে বা হালকা হলুদ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মাল্টা গাছ রোপন কীভাবে করবেন ও চাষাবাদের নিয়ম-কানুন বিস্তারিত জেনে নিন?
এছাড়া, তীব্র তাপমাত্রা পরিবর্তন, বিশেষ করে শুষ্ক আবহাওয়া বা অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ফুল ঝরে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং ছত্রাকজনিত রোগও গাছের ফুল নষ্ট করে দিতে পারে। সময়মতো সঠিক পরিমাণে সার ব্যবহার, নিয়মিত পানি দেওয়া এবং পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফুল ঝরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব।
বেদানা-গাছের-বৈশিষ্ঠ্য |
বেদানার ভেতরে ছোট ছোট রসালো দানা থাকে, যা টক-মিষ্টি স্বাদের এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই গাছ সাধারণত উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং কম পানি ও যত্নেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। বেদানা গাছের ফলন দীর্ঘস্থায়ী এবং এটি প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড় প্রতিরোধেও সক্ষম। যা এটিকে একটি অত্যন্ত উপযোগী ও আর্থিকভাবে লাভজনক গাছ হিসেবে চিহ্নিত করে।
বেদানা ফল কতদিনে পাঁকেঃ
বেদানা ফল সাধারণত গাছে ফুল আসার পর ৫-৭ মাসের মধ্যে পেঁকে যায়। ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় আবহাওয়া, গাছের যত্ন এবং মাটির পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদানা পাকার সময় খোসার রঙ ধীরে ধীরে সবুজ থেকে লাল বা হালকা হলুদে পরিবর্তিত হয় এবং ফলের খোসা কিছুটা শক্ত ও মসৃণ হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ বেদানা গাছ কীভাবে লাগাবেন ও কীভাবে চাষবাদ করবেন তার ব্যাসিক টিপস জানুন?
ফল পরিপক্ক হলে তা সহজে গাছে ধরে থাকে না এবং তুলনামূলকভাবে ভারী অনুভূত হয়। সঠিক পরিচর্যা এবং সময়মতো পানি ও সার প্রয়োগ নিশ্চিত করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বেদানা পাকানো সম্ভব হয়ে ওঠবে।
বেদানা গাছে সারের পরিমাণঃ
বেদানা গাছে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা গাছের ভালো বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারা রোপণের সময় প্রতি গাছে প্রায় ৫-৭ কেজি জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট) মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। বেদানা গাছের পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় প্রতি বছর ২০০-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০-২০০ গ্রাম টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), এবং ১০০-১৫০ গ্রাম এমওপি (মিউরিয়েট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ তরমুজ গাছ চাষাবাদ প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে লাগাবেন তার কৌশল জেনে নিন?
সার সাধারণত বছরে তিনবার প্রয়োগ করা হয়—একবার বসন্তে, একবার বর্ষার আগে, এবং একবার ফল সংগ্রহের পরে। সার দেওয়ার সময় এটি মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং এরপর পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে সার ব্যবহার করলে বেদানা গাছ স্বাস্থ্যকর থাকে এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।
বেদানা গাছের চারাঃ
বেদানা গাছের চারা সাধারণত বীজ থেকে বা গুটি কলম পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। তবে গুটি কলম পদ্ধতির চারা বেশি জনপ্রিয়, কারণ এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কম সময়ে ফল দিতে শুরু করে। বেদানা চারা রোপণের জন্য স্বাস্থ্যকর ও রোগমুক্ত চারা নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারাগুলো সাধারণত ৬-১২ মাস বয়সী হলে রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়।
বেদানা-গাছের-চারা |
বেদানা চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে, যেখানে উন্নত জাতের চারা পাওয়া যায়। রোপণের আগে মাটির উর্বরতা এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গর্ত তৈরি করে জৈব সার দিয়ে চারা রোপণ করলে তা দ্রুত মাটির সাথে মানিয়ে নিতে পারে। সঠিক পরিচর্যা ও সেচ প্রদান করলে বেদানা গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।
ডালিম গাছের পাতাঃ
ডালিম গাছের পাতা দেখতে সরু, লম্বাটে এবং চকচকে হয়। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ এবং এটি গাছে ঘনভাবে সাজানো থাকে। ডালিম গাছের পাতা সাধারণত ২-৩ ইঞ্চি লম্বা এবং প্রস্থে সরু হয়। এই পাতা চিরসবুজ প্রকৃতির, যা গাছকে সারা বছর সতেজ রাখে। ডালিম গাছের পাতা ঔষধি গুণে ভরপুর।
আরো পড়ুনঃ আনারস গাছ লাগানোর প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে সহজে চাষাবাদ করবেন জানুন?
এটি প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমনঃ ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা এবং ত্বকের সংক্রমণ কমানোর জন্য। পাতা থেকে তৈরি নির্যাস প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ডালিম গাছের পাতা গাছের স্বাস্থ্য নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। পাতা যদি সতেজ ও সবুজ থাকে, তবে গাছটি সুস্থ রয়েছে বলে বোঝা যায়।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন ফলের গাছের মধ্য এই বেদানা গাছ চেনার উপায় গুলো কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই বেদানা চাষ প্রদ্ধতি কি করে সহজ করা যায়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন...........................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url