আপেল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায় - আপেল গাছ কোন মাটিতে হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে ও যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই আপেল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায় চাষ করার জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই আপেল গাছ কোন মাটিতে ভালো ফলন হয়। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমরা সবাই জানি যে, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা উপকারি একটি জিনিস। গাছ আমাদের পরিবেশকে প্রক্টেট করে থাকে। আপনি চাইলে এই গাছের সাথে সাথে অন্য কিছু চাষাবাদ করতে পারেন। চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন দিক আমরা এই ব্লগে বলে দিচ্ছি।

আপেল-গাছের-চারা-কোথায়-পাওয়া-যায়
আপেল-গাছের-চারা-কোথায়-পাওয়া-যায়    

তাই আসুন জেনে নি যে, গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে ও চাষাবাদ করার জন্য রোগমুক্ত এই আপেল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়। ও তার সাথে সাথে এটাও ব্লগে জানতে পারবেন যে এই আপেল গাছ কোন মাটিতে হয় ফলন দেয়। নিম্নে বিস্তারিত.........।

আপেল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়ঃ

আপেল গাছের চারা সাধারণত বিভিন্ন কৃষি নার্সারি, সরকারি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, এবং স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা যায়। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে আপেল চাষ জনপ্রিয় হওয়ায় সেসব এলাকায় নার্সারিগুলোতে উন্নত মানের আপেল চারা সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়া, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত নার্সারিগুলোতেও রোগমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আপেল চারা পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারা গাছ কীভাবে যত্ন সহকারে লাগাবেন ও এই পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ট্য জানুন?

বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও আপেল গাছের চারা কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে চারা কেনার আগে তা সুস্থ, সবুজ এবং শক্তিশালী শিকড়যুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জাত ও মানের চারা সংগ্রহ করলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফলন ভালো হয়।

আপেল গাছ কোন মাটিতে হয়ঃ

আপেল গাছ সাধারণত দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটিতে ভালোভাবে জন্মায়। এই মাটিতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকায় আপেল গাছের শিকড় সহজে ছড়াতে পারে এবং পুষ্টি শোষণ করতে পারে। আপেল গাছের জন্য মাটির pH মান ৬.০ থেকে ৭.০-এর মধ্যে থাকা উপযুক্ত। কারণ, এটি গাছের পুষ্টি গ্রহণ এবং ফলনের গুণগত মান উন্নত করে।

লবণাক্ত মাটি বা পানি জমে থাকে এমন মাটি আপেল গাছের জন্য ক্ষতিকর। মাটি উর্বর করার জন্য রোপণের আগে জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট) মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হয়। সঠিক মাটিতে আপেল গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভালো মানের ফলন দেয়।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি গাছ কীভাবে লাগাতে হয় ও এর চাষবাদ কখন করতে হয় জেনে নিন?

আপেলের চারার দাম কতঃ

আপেল চারার দাম সাধারণত চারা প্রজাতি, মান এবং কোথা থেকে কেনা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে স্থানীয় নার্সারি বা কৃষি কেন্দ্রগুলোতে আপেল চারার দাম সাধারণত ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে উন্নতমানের হাইব্রিড বা বিদেশি জাতের আপেল চারা কিনতে চাইলে এর দাম ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। 

অনলাইনে আপেল চারা কেনার সময় দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। কারণ, এতে ডেলিভারি খরচ যুক্ত হয়। চারা কেনার সময় এটি নিশ্চিত করা উচিত যে চারা সুস্থ, রোগমুক্ত এবং শিকড় ভালো অবস্থায় যেন থাকে। যাতে করে চারা দ্রুত বৃদ্ধি এবং ভালো ফলন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি খুব সহজে মাল্টা গাছ রোপন করবেন ও চাষবাদ করবেন জেনে নিন?

আপেলের চারা কীভাবে তৈরি করতে হয়ঃ

আপেলের চারা তৈরি সাধারণত বীজ বা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়। তবে কলম পদ্ধতি (গ্রাফটিং) সবচেয়ে কার্যকর এবং জনপ্রিয়। কারণ, এতে দ্রুত ফলন পাওয়া যায় এবং মা গাছের গুণগত মান বজায় থাকে। প্রথমে একটি শক্তিশালী এবং সুস্থ আপেল গাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত জাতের একটি ডাল কেটে নিতে হয়। এরপর একটি উপযুক্ত রুটস্টক বা শিকড়যুক্ত গাছে কাটা অংশটি সঠিকভাবে বসিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়।

গ্রাফটিংয়ের পর এটি একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এবং নিয়মিত পানি দিতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে কলমটি রুটস্টকের সঙ্গে জোড়া লাগবে এবং নতুন কুঁড়ি গজাতে শুরু করবে। এভাবে ৪-৬ মাসের মধ্যে একটি সুস্থ আপেল চারা তৈরি হয়। সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নিলে এই চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে।

আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি আপনার ছাদে আঙ্গুর চাষ করবেন ও যত্ন নিবেন জেনে রাখুন?

বাংলাদেশে কোথায় আপেল চাষ হয়ঃ

বাংলাদেশে আপেল চাষ মূলত পাহাড়ি এবং শীতল আবহাওয়াযুক্ত এলাকাগুলোতে সীমিত আকারে করা হয়। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবানের মতো পার্বত্য এলাকায় আপেল চাষের কিছু উদ্যোগ দেখা যায়। কারণ, সেসব এলাকার জলবায়ু আপেল চাষের জন্য তুলনামূলক উপযোগী। এছাড়া দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, এবং পঞ্চগড়ের মতো শীতপ্রধান অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে আপেল চাষ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জায়গায় আপেলের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও চাষে কাজ করছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং হাইব্রিড জাত ব্যবহার করে বাংলাদেশে আপেল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মানুষের কাছে।

আরো পড়ুনঃ বেদানা গাছ চেনার সহজ প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে চাষাবাদ করবেন তার কৌশল জানুন?

আপেলের চারা চেনার উপায়ঃ

আপেলের চারা চেনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে হয় গাছের মধ্যে। একটি সুস্থ আপেল চারার পাতা সবুজ এবং মসৃণ হয়, যা স্পর্শ করলে নরম অনুভূত হয়। চারার কান্ড সরল এবং শক্ত হে। যা ভবিষ্যতে গাছের ভালো বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। আপেলের চারা সাধারণত ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং শিকড় ভালোভাবে গজানো থাকে।

আপেলের-চারা-চেনার-উপায়
আপেলের-চারা-চেনার-উপায়    

চারা যদি গ্রাফটিং (কলম) পদ্ধতিতে তৈরি হয়, তাহলে কলমের জোড়ার অংশটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এটি শক্তভাবে সংযুক্ত এবং ক্ষতচিহ্নবিহীন হওয়া উচিত। একটি সুস্থ আপেল চারা চেনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি রোগমুক্ত এবং পাতা বা শিকড়ে কোনো দাগ বা পচন থাকে না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে সহজেই একটি মানসম্পন্ন আপেল চারা চেনা যায়।

টবে আপেল গাছ চাষ প্রদ্ধতিঃ

আপেল গাছ চাষের জন্য বড় এবং গভীর টব প্রয়োজন। টবটির গভীরতা অন্তত ১৮-২৪ ইঞ্চি এবং প্রশস্ততা ২০-২৪ ইঞ্চি হওয়া উচিত, যাতে শিকড় সহজে ছড়াতে পারে। টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি, যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে।

আরো পড়ুনঃ কীভাবে জমিতে আপনি তরমুজ চাষ শুরু করবেন ও ফল ফলন জম্নাবেন জেনে নিন?

তারপর আপেল গাছের জন্য দো-আঁশ বা বেলে-দো-আঁশ মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। মাটির মিশ্রণে ৫০% দো-আঁশ মাটি, ৩০% পচা গোবর বা কম্পোস্ট, এবং ২০% বালি মেশানো ভালো। মাটির pH মান ৬.০ থেকে ৭.০ রাখা উত্তম।

  • চারা রোপণ পদ্ধতি

  1. একটি সুস্থ এবং রোগমুক্ত আপেল চারা নির্বাচন করুন।
  2. টবটি মাটি দিয়ে পূর্ণ করে মাঝখানে একটি গর্ত তৈরি করুন।
  3. গর্তে চারাটি বসিয়ে শিকড়ের চারপাশে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন এবং হালকা চাপ দিয়ে মাটি শক্ত করুন।
  4. রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন
  5. আপেল গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পছন্দ করে। তাই টবটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা রোদ পৌঁছায়।
  6. মাটি শুকিয়ে গেলে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
  7. মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং (খড় বা শুকনো পাতা বিছানো) করা যেতে পারে।
  8. প্রতি দুই মাসে জৈব সার এবং সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক সার যেমনঃ ইউরিয়া, টিএসপি, এবং পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। ফুল ও ফল ধরার সময় ফসফরাস এবং পটাশ সার বেশি দিলে ফলন ভালো হয়।
  9. গাছের ডালপালা নিয়মিত ছেঁটে দিতে হবে। যাতে নতুন শাখা গজায় এবং গাছের পুষ্টি ঠিক থাকে।
  10. আপেল গাছে পোকামাকড় বা ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিলে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
  11. আপেল গাছ টবে লাগানোর প্রায় ২-৩ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। ফল পাকার সময় খোসার রঙ এবং আকার দেখে তা সংগ্রহ করতে হবে।

টবে আপেল গাছ চাষ সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি সহজ এবং ফলপ্রসূ। এটি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারের জন্য তাজা এবং পুষ্টিকর আপেল সরবরাহ করতে পারে।

আপেল গাছের বৈশিষ্ট্যঃ

আপেল গাছ একটি শীতকালীন ফলদ গাছ, যা সাধারণত মাঝারি আকারের এবং ২-৪.৫ মিটার বা ১৫-৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এটি একটি বহুবর্ষজীবী গাছ, যার কাণ্ড শক্ত এবং ডালপালা ঘন হয়। আপেল গাছের পাতা সরু, ডিম্বাকৃতির এবং সবুজ রঙের হয়। গাছে বসন্তকালে সাদা বা গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে, যা থেকে পরে ফল তৈরি হয়।

আরো পড়ুনঃ আনারস গাছ লাগানোর প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে লাগাতে হয় জমিতে জেনে রাখুন?

আপেল গাছের ফল গোলাকার বা কিছুটা ডিম্বাকৃতির হয়, যার খোসা মসৃণ এবং রঙ লাল, সবুজ বা হলুদ হতে পারে। এটি প্রধানত ঠান্ডা জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক পরিচর্যা করলে বছরে একবার ফল দেয়। আপেল গাছের ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এটি ভিটামিন সি ও আঁশের ভালো উৎস। এটি শুধু অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ফলদ গাছ।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে বা চাষাবাদের জন্য এই আপেল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই আপেল গাছ কোন মাটিতে হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..............................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url