আনারস গাছ লাগানোর নিয়ম - আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা কোনটি? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে গাছ লাগানোর জন্য এই আনারস গাছ লাগানোর নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা কোনটি হয়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
বিশেজ্ঞরা বলে গেছেন যে, গাছ আমাদের চারপাশে থাকা ভাল এতে করে আমাদের পরিবেশ ভাল থাকে। যাতে করে আমরা শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি। গাছ আমাদের জীবনের সাথে জড়ে থাকে একটা প্রতিক্রিয়া যার রিং আমরা কখনো শধ করতে পারবো না। আপনি যেকোনো গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে পারবেন।
আনারস-গাছ-লাগানোর-নিয়ম |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, এই আনারস গাছ লাগানোর নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে। যাতে করে আপনি এই গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে পারেন। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা কোনটি হয়। যেটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। নিম্নে বিস্তারিত......।
আনারস গাছ লাগানোর নিয়মঃ
আনারস গাছ চাষ করার জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আনারস সাধারণত উষ্ণ এবং আদ্র জলবায়ুতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। আনারস গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে একটি উর্বর, দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে। চারা রোপণের জন্য গাছের মুকুট বা শীর্ষাংশ কেটে তা শুকিয়ে নিন এবং এরপর তা মাটিতে রোপণ করুন। রোপণের সময় চারাগুলো ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে লাগানো উচিত, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত জায়গা পায়।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি তরমুজ চাষ প্রদ্ধতি ব্যবহার করে ভাল মানের তরমুজ চাষ করবেন?
রোপণের পর নিয়মিত পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। আনারস গাছের জন্য জৈব সার এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ লাগানোর প্রায় ১২-১৮ মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে আনারস গাছ থেকে সুস্বাদু ফল পাওয়া সম্ভব হয়।
আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা কোনটিঃ
আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা হলো "সাকার" এবং "স্লিপ" জাতের চারা। সাকার হলো আনারস গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া ছোট গাছ বা অঙ্কুর, যা প্রধান গাছের পুষ্টি গ্রহণ করে এবং নতুন গাছ তৈরি করে। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফলনও ভালো হয়। অন্যদিকে, স্লিপ হলো আনারসের ফলের নীচের অংশ থেকে বের হওয়া ছোট অঙ্কুর।
আরো পড়ুনঃ মাল্টা গাছ রোপন প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে চাষাবাদ করবেন তার কৌশল জেনে নিন?
স্লিপ থেকেও আনারসের ফলন ভালো পাওয়া যায়। তবে, সাকার জাতের চারা স্লিপের তুলনায় দ্রুত ফলন দেয়। এছাড়া, "কুইন" এবং "কেয়া" জাতের আনারসও বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় এবং উচ্চ ফলনশীল। সঠিকভাবে বাছাই করা স্বাস্থ্যকর চারা আনারস চাষে সফলতার প্রধান শর্ত। এজন্য রোগমুক্ত এবং শক্তিশালী সাকার বা স্লিপ নির্বাচন করা উচিত, যা দ্রুত বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
টবে আনারস গাছ চাষ প্রদ্ধতিঃ
টবে আনারস চাষ বর্তমান সময়ে শহরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জায়গার অভাবে অনেকেই টবের মধ্যে আনারস চাষ করে সতেজ ফল উৎপাদন করছেন। আনারস গাছ ছোট আকারের হওয়ায় এটি টবে চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে টবেও আনারস গাছ সহজে ফল দিতে পারে। আনারস গাছ চাষের জন্য মাঝারি থেকে বড় আকারের টব ব্যবহার করতে হবে। যার গভীরতা অন্তত ১২-১৫ ইঞ্চি এবং প্রশস্ততা প্রায় ১৬ ইঞ্চি।
আরো পড়ুনঃ ছাদে কীভাবে সহজ উপায়ে আঙ্গুর চাষ করবেন ও কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ জেনে নিন?
টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে। মাটির টব বা প্লাস্টিকের টব উভয়ই ব্যবহার করা যায়। তবে মাটির টব ভালো, কারণ এটি গাছের শিকড়কে ঠান্ডা রাখে। আনারস গাছের জন্য উর্বর ও ভালো পানি নিষ্কাশনের মাটি প্রয়োজন। মাটির মিশ্রণে ৫০% দো-আঁশ মাটি, ২৫% জৈব সার (পচা গোবর বা কম্পোস্ট), এবং ২৫% বালু মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ গাছের শিকড়কে পুষ্টি জোগায় এবং পানি জমে থাকা এড়ায়।
- চারা রোপণ পদ্ধতিঃ
- টবটি মাটি ও মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করুন।
- আনারসের শীর্ষাংশ (মুকুট বা ক্রাউন) শুকিয়ে নিয়ে তা টবের মাঝখানে লাগান।
- চারা লাগানোর পর হালকা পানি দিন।
- প্রথম কয়েকদিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন এবং ধীরে ধীরে রোদে অভ্যস্ত করুন।
- আনারস গাছ বেশি পানি পছন্দ করে না। তাই মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দিন।
- গাছটিকে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতে রাখতে হবে। কারণ আনারস গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা আলো দরকার।
- তিন মাস পর পর জৈব সার এবং সামান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
- আনারস গাছ সাধারণত টবে লাগানোর ১৫-১৮ মাস পর ফল দিতে শুরু করে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিয়মিত গাছের যত্ন নিতে হবে।
টবে আনারস চাষ সহজ এবং কম খরচে করা যায়। এটি বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায় এবং নিজস্ব আনারস খাওয়ার আনন্দ দেয়। সঠিক পদ্ধতিতে টবে আনারস চাষ করলে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল পাওয়া সম্ভব।
আনারস চারা কোথায় পাওয়া যায়ঃ
আনারস চারা সাধারণত নার্সারি, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে সংগ্রহ করা যায়। সরকারি এবং বেসরকারি কৃষি বিভাগ পরিচালিত নার্সারিগুলোতে উচ্চমানের আনারসের চারা পাওয়া যায়, যা রোগমুক্ত এবং দ্রুত ফলনশীল। এছাড়া স্থানীয় কৃষকরা তাদের গাছ থেকে সাকার বা স্লিপ সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ কীভাবে আপনি খুব সহজে বেদানা গাছ চিনবেন ও বেদানা গাছ চাষাবাদ করবেন জানুন?
যা চারা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও আছে যেখানে আপনি আনারস চারা অর্ডার দিতে পারবেন। চারা কেনার সময় অবশ্যই সুস্থ, সবুজ, এবং শক্তিশালী চারা নির্বাচন করতে হবে, যাতে এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভালো ফলন দেয়।
আনারস পাঁকতে কত সময় লাগেঃ
আনারস পেঁকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে সাধারণত ১৫-১৮ মাস সময় লাগে। চারা রোপণের পর প্রথমে গাছের শিকড় এবং পাতা বৃদ্ধি পায়, যা গাছের জন্য পুষ্টি সংগ্রহের কাজ করে। গাছটি ফল ধরার উপযোগী হওয়ার পর ফুল আসে এবং তারপর ফল গঠন শুরু হয়। ফল তৈরি হওয়ার পর এটি সম্পূর্ণরূপে পাকা অবস্থায় পৌঁছাতে প্রায় ৫-৬ মাস সময় লাগে।
আরো পড়ুনঃ লিচু গাছ লাগানোর প্রদ্ধতি জানুন ও কীভাবে চাষাবাদ করবেন তার ব্যাসিক টিপস জানুন?
আনারস পাকার সময় এর খোসার রঙ ধীরে ধীরে সবুজ থেকে হলুদে পরিবর্তিত হয়, এবং ফলটি মিষ্টি ও রসালো হয়ে ওঠে। সঠিক পরিচর্যা, পানি সরবরাহ, এবং পুষ্টি নিশ্চিত করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আনারস পাকা সম্ভব।
আনারস ফলের উপকারিতাঃ
আনারস একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু ফল, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে। আনারস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আনারসের ব্রোমেলিন নামক এনজাইম হজমে সহায়ক এবং প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
আনারস-ফলের-উপকারিতা |
আনারস কোন ঋতুতে হয়ঃ
আনারস মূলত "গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে" ফলনশীল একটি ফল। বাংলাদেশে সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আনারস পাওয়া যায়। গাছের ফুল ধরা এবং ফল পাকার জন্য উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া প্রয়োজন, যা এই সময়ে বিদ্যমান থাকে। গ্রীষ্মের তীব্র রোদ এবং বর্ষার পরিমাণমতো বৃষ্টিপাত আনারস গাছের ফল গঠনে সহায়ক।
তবে সঠিক পরিচর্যা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বছরই আনারস চাষ করা সম্ভব। তাই গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল আনারসের প্রধান ফলন মৌসুম হলেও নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করলে অন্যান্য ঋতুতেও এটি উৎপাদন করা সম্ভব।
আনারস খেলে কি ক্ষতি হয়ঃ
আনারস একটি পুষ্টিকর ফল হলেও অতিরিক্ত খেলে বা কিছু বিশেষ অবস্থায় এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে মুখের ভেতরে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে। এটি কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের পাইনঅ্যাপেল বা ব্রোমেলিনে সংবেদনশীলতা রয়েছে।
অতিরিক্ত আনারস খাওয়া হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমনঃ ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা। এতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। অপরিপক্ক আনারস খাওয়া গলায় খুসখুস বা গলার ক্ষত তৈরি করতে পারে।
এছাড়া গর্ভবতী নারীদের খুব বেশি আনারস খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে আনারস খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
আনারস জাতের নামঃ
আনারসের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় জাত রয়েছে, যা তাদের স্বাদ, আকার এবং ফলনের ভিত্তিতে আলাদা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চাষকৃত আনারসের প্রধান জাতগুলো হলোঃ
- কুইন (Queen) এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় আনারসের জাত। এর আকার ছোট থেকে মাঝারি, স্বাদে অত্যন্ত মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত।
- কেয়া (Kew) এই জাতটি আকারে বড় এবং তুলনামূলকভাবে কম মিষ্টি। এটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
- জায়েন্ট কেয়া (Giant Kew) কেয়া জাতের বৃহৎ সংস্করণ, যা রপ্তানি এবং শিল্পকারখানার জন্য উপযুক্ত।
- মরিস (Mauritius) এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত, যা দ্রুত পাকে এবং খোসা তুলনামূলকভাবে পাতলা।
- বালিশাহিঃ স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় একটি জাত, যা সুস্বাদু ও রসালো।
উপযুক্ত জলবায়ু এবং মাটির ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলে এসব জাতের আনারস চাষ করা হয়। প্রতিটি জাতের নিজস্ব স্বাদ এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ভোক্তাদের পছন্দমতো চাষ করা যায়।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন গাছ লাগানো জন্য এই আনারস গাছ লাগানোর নিয়ম গুলো কি কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই আনারস চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো চারা কোনটি হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন........................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url