পাঁকা কলা খেলে কি হয় - খালি পেটে কলা খেলে কি হয়? আসুন জেনে নি?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য এই পাঁকা কলা খেলে কি হয় আমাদের স্বাস্থ্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে স্বাস্থ্যর জন্য খালি পেটে কলা খেলে কি হয়। আসুন জেনে রাখি।
ভূমিকাঃ
আমাদের শরীরের শক্তির জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। যাতে করে আমাদের শরীরের পুষ্টি ও শক্তি পাই। তাই জন্য আমরা পাঁকা কলা সব সময় বেঁছে নি কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে।
পাঁকা-কলা-খেলে-কি-হয় |
তাই আসুন জেনে রাখি যে আমাদের শরীরের জন্য পাঁকা কলা খেলে কি হয় ও কীভাবে আমরা শক্তি ও প্রোটিন পেয়ে থাকি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে খালি পেটে কলা খেলে কি হয় আমাদের শরীরে। নিম্নে বিস্তারিত.........।
পাঁকা কলা খেলে কি হয়ঃ
পাকা কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং ফাইবার রয়েছে। পাকা কলায় থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে দ্রুত শক্তি প্রদান করে। তাই এটি ক্লান্তি দূর করতে এবং তাৎক্ষণিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, এতে পটাসিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আরো পড়ুনঃ পেঁপে খেলে আমাদের শরীরের কি কি পুষ্টি পায় ও পেঁপে কেন খাব জেনে নিন?
পাকা কলায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে ভিটামিন বি৬ রয়েছে, যা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ভালো এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক। এছাড়া, কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়ঃ
খালি পেটে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে তা কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। কলায় উচ্চ পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা এবং ফাইবার থাকায় এটি খালি পেটে খেলে দ্রুত শক্তি দেয় এবং শরীরে প্রাকৃতিক চিনি শোষিত হয়, যা ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক। তবে, খালি পেটে কলা খেলে এতে থাকা উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম রক্তে হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপের তারতম্য ঘটায়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে তুলসি পাতা খেলে আমাদের শরীর কি কি পুষ্টি লাভ করে জেনে রাখুন?
এছাড়াও, কলায় প্রচুর প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় খালি পেটে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কলার অম্লধর্মী উপাদানগুলোও খালি পেটে খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই খালি পেটে কলা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা ভালো এবং অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া আরও স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
কলা খেলে কি গ্যাস হয়ঃ
হ্যাঁ, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার ফলে গ্যাস হতে পারে। কলায় ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি থাকায় কিছু মানুষের হজমে সমস্যা হতে পারে, যা গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পাকা কলায় প্রাকৃতিক শর্করা (যেমন ফ্রুক্টোজ) বেশি থাকে এবং এটি হজম করতে সময় লাগে। ফলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এই শর্করাকে ভেঙে ফেলে এবং গ্যাস তৈরি করে।
আরো পড়ুনঃ আমাদের শরীর ফিট ও রোগ মুক্ত রাখতে টক দয়ের গুরুত্ব কতটা মূল্যবান জেনে নিন?
এছাড়াও, কলায় স্যালিসিলেট এবং অ্যামাইন নামক উপাদান থাকে, যা কিছু মানুষের জন্য হজমে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে এবং অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে। তবে, সব মানুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হন না এবং অনেকের জন্য কলা সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ ও পুষ্টিকর।
রাতে কলা খেলে কি হয়ঃ
রাতে কলা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং এটি কিছু স্বাস্থ্য উপকারও এনে দিতে পারে, তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। রাতে কলা খেলে শরীরে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি বাড়ায় এবং এতে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড ঘুমকে উন্নত করতে সহায়ক, কারণ এটি সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন বয়ে এনে দেয়।
আরো পড়ুনঃ তেঁতুল খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয় ও কতটুকু খাওয়া উচিত জেনে নিন?
তবে, কিছু মানুষের জন্য রাতে কলা খাওয়া হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। কলায় ফাইবার ও প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় রাতে খেলে কারও কারও জন্য গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য যাদের হজম সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য রাতে কলা খাওয়া কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে নিয়মিত কলা খাওয়া পটাসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিনের যোগান দেয়, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রমে সহায়ক।
কলা খাওয়ার সঠিক সময় কখনঃ
কলা খাওয়ার সঠিক সময় নির্ভর করে ব্যক্তির প্রয়োজন এবং শরীরের অবস্থার উপর। সাধারণভাবে, সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি যোগায়, যা দিন শুরু করার জন্য সহায়ক। সকালবেলা কলা খেলে শরীরে পটাসিয়াম, ফাইবার, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সহজে শোষিত হয়, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ সকাল বেলা কাঁচা ছোলা খাওয়া আমাদের শরীরে জন্য কতটা উপকার জেনে রাখুন?
অন্যদিকে, বিকেলবেলা বা ওয়ার্কআউটের পরও কলা খাওয়া যেতে পারে, কারণ এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে দ্রুত এনার্জি ফিরিয়ে আনে এবং ক্লান্তি দূর করে। তবে রাতে কলা খাওয়া সবার জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ এতে থাকা ফাইবার এবং প্রাকৃতিক শর্করা রাতে কিছু মানুষের জন্য হজম সমস্যা এবং গ্যাস তৈরি করতে পারে।
সুতরাং, সকালের সময় খালি পেটে বা দিনের মাঝামাঝি সময় কলা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কলায় প্রাকৃতিক শর্করা, পটাসিয়াম, ফাইবার, এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়। সকালে কলা খেলে এটি দ্রুত শক্তি যোগায়, যা সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যম ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
সকালে-কলা-খাওয়ার-উপকারিতা |
এছাড়া, কলায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কলায় ভিটামিন বি৬ থাকে, যা স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক এবং মানসিক চাপ কমায়। সকালে কলা খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতিদিন একটা কলা খেলে কি হয়ঃ
প্রতিদিন একটি করে পাকা কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। কলায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, পটাসিয়াম, এবং প্রাকৃতিক শর্করা, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়। নিম্নে বিস্তারিত...।
- হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারীঃ প্রতিদিন কলা খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে, কারণ এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত পটাসিয়াম গ্রহণ করলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
- হজম শক্তি বাড়ায়ঃ কলায় থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কলা হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ কলা একটি প্রাকৃতিক স্ন্যাকস হিসেবে কাজ করে, যা দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা দূরে রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে ক্যালরি কম এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য আদর্শ।
- মানসিক স্বাস্থ্যঃ কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী এবং মেজাজ উন্নত মস্তক ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ কমায় এবং সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়, যা সুখের অনুভূতি জাগ্রত করে।
- ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনণ রাখে।
সুতরাং, প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় থাকে এবং দৈনন্দিন পুষ্টির একটি বড় অংশ পূরণ হয়।
একটা পাঁকা কলায় কত ক্যালরি থাকেঃ
একটি মাঝারি আকারের পাকা কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে। এই ক্যালরির বেশিরভাগই আসে প্রাকৃতিক শর্করা (প্রায় ১৪ গ্রাম) এবং কার্বোহাইড্রেট (প্রায় ২৭ গ্রাম) থেকে। এছাড়া, এতে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার এবং খুবই অল্প পরিমাণ প্রোটিন থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে মধু খেলে আমাদের শরীরে কতটা গমর হয় ও কেন খাওয়া দরকার জানুন?
কলার ক্যালরির পরিমাণ এবং পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায় এবং দীর্ঘক্ষণ উদ্যম ধরে রাখতে সহায়ক করে কলা।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীরের জন্য এই পাঁকা কলা খেলে কি হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই খালি পেটে কলা খেলে কি হয় আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................www,stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url