মাল্টা খাওয়ার নিয়ম - মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে? জেনে রাখুন বিস্তারিত

আজকে আমরা জানবো যে আমাদে শরীরের প্রোটিন ও ভিটামিন মাত্রা বাড়ানোর জন্য ফলের মধ্য এই মাল্টা খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে শরীরের তাপমাত্রা অনুযায়ী এই মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে আমাদের শরীরে। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমরা আমাদের শরীরের রোগ বালায় ও শরীর ফিট ও সতেজ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার ও ফলমূল খেয়ে থাকি। যার মধ্য সবচেয়ে বেশি খায় এই ফল। মাল্টা খেলে আমাদের শরীরের ভিবিন্ন ধরনের উপকার হয়ে থাকে। শরীরে রোগ ক্ষমতা বাড়ে, শরীর সতেজ হয়, যেটি আমাদের খুবই দরকার হয়। 

মাল্টা-খাওয়ার-নিয়ম
মাল্টা-খাওয়ার-নিয়ম        

তাই আসুন জেনে রাখি যে আমাদের শরীর সতেজ ও রোগ মুক্ত ও রাখার জন্য এই মাল্টা খাওয়ার নিয়ম গুলো কি-কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে আমাদের শরীরের। নিম্নে বিস্তারিত জেনে নিন......।

মাল্টা খাওয়ার নিয়মঃ

মাল্টা খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। প্রথমে মাল্টা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, কারণ এর উপরের খোসায় ময়লা বা কীটনাশক থাকতে পারে। এরপর এটি খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। অথবা রস বের করে জুস হিসেবে পান করা যেতে পারে। মাল্টা সকালে বা দিনের প্রথমার্ধে খাওয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে থাকা ভিটামিন সি এবং প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয় ও কতটা পুষ্টি পায় জেনে নিন?

যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তারা খালি পেটে মাল্টা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মাল্টা খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত, যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে। প্রতিদিন ১-২টি মাল্টা খাওয়া যথেষ্ট। কারণ, অতিরিক্ত খেলে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হতে পারে। স্যালাড, স্মুদি বা জুসের সাথে মিশিয়ে মাল্টা খেলে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়েঃ

মাল্টা খাওয়া সাধারণত ডায়াবেটিস বাড়ায় না, বরং এটি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। মাল্টা একটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সম্পন্ন ফল, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। এতে থাকা ভিটামিন সি, ফাইবার, এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে এবং হঠাৎ শর্করা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মাল্টার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

আরো পড়ুনঃ স্ট্রবেরি জুস খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ শরীর সতেজ ও ত্বক উজ্জ্বল রাখতে জেনে নিন?

অতিরিক্ত মাল্টা খেলে প্রাকৃতিক শর্করার কারণে সাময়িক শর্করা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকতে পারে। পাশাপাশি, তাজা মাল্টা খাওয়া বেশি ভালো। কারণ প্রক্রিয়াজাত মাল্টার জুসে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং, পরিমিত পরিমাণে মাল্টা খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী। সমস্যা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

মাল্টা ফলের উপকারিতাঃ

মাল্টা ফল একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর ফল, যা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকার বয়ে আনে। নিচে মাল্টা ফলের কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ

মাল্টায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশির মতো সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ শরীরে শক্তি বাড়াতে ও শরীর ফিট রাখতে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা জানুন?

  • ত্বকের জন্য উপকারীঃ

মাল্টায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়।

  •  হৃদরোগ প্রতিরোধঃ

মাল্টায় থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকর আমাদের শরীরে।

  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করেঃ

মাল্টায় উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর।

  •  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ

মাল্টার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

  •  ওজন নিয়ন্ত্রণঃ

কম ক্যালোরিযুক্ত এই ফল ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

আরো পড়ুনঃ আপেলের জুস খেলে কীভাবে আমাদের শরীর তরতাজা ও ত্বক উজ্জ্বল থাকে জানুন?

  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতিঃ

মাল্টায় থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী এবং রাতকানা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

  •  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করেঃ

এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করে।

নিয়মিত মাল্টা খাওয়া শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। তবে পরিমাণে সংযম এবং তাজা মাল্টা খাওয়াই উত্তম।

মাল্টা ফলের অউপকারিতাঃ

মাল্টা ফলের অনেক উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত খেলে বা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি ক্ষতিকর  দিক থাকতে পারে। নিচে মাল্টা ফলের সম্ভাব্য অউপকারিতাগুলো উল্লেখ করা হজেম

  1. অ্যাসিডিটির সমস্যাঃ মাল্টা একটি অ্যাসিডিক ফল। অতিরিক্ত খেলে পেটে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। বিশেষত যাদের হজমজনিত সমস্যা রয়েছে।
  2. দাঁতের ক্ষতিঃ মাল্টার প্রাকৃতিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। নিয়মিত মাল্টা খাওয়ার পর মুখ পরিষ্কার না করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারেজ
  3. রক্তচাপের প্রভাবঃ মাল্টায় পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি, যা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত খেলে এটি নিম্ন রক্তচাপের (Hypotension) কারণ হতে পারে।
  4. ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যাঃ বেশি পরিমাণে মাল্টা খেলে এতে থাকা ফাইবার এবং প্রাকৃতিক শর্করার কারণে ডায়রিয়া বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে।
  5. অ্যালার্জিঃ কিছু মানুষের জন্য মাল্টা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। যেমনঃ ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  6. ডায়াবেটিসে প্রভাবঃ যদিও মাল্টা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

পরামর্শ, পরিমাণমতো এবং সঠিক সময়ে মাল্টা খাওয়া নিরাপদ। যাদের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাল্টা খাওয়া উচিত। 

প্রতিদিন মাল্টা খেলে কি হয়ঃ

প্রতিদিন মাল্টা খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী, কারণ এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। মাল্টায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এতে পটাসিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর। প্রতিদিন মাল্টা খাওয়া হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

প্রতিদিন-মাল্টা-খেলে-কি-হয়
প্রতিদিন-মাল্টা-খেলে-কি-হয়    

কারণ এতে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। কম ক্যালোরি এবং প্রাকৃতিক শর্করার কারণে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এছাড়া, মাল্টায় থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যের লক্ষণ হ্রাস করে। তবে, অতিরিক্ত মাল্টা খাওয়া অ্যাসিডিটি বা দাঁতের এনামেল ক্ষয় ঘটাতে পারে। তাই, প্রতিদিন ১-২টি মাল্টা খাওয়া স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর। সঠিকভাবে ধুয়ে এবং খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া সর্বদা ভালো।

খালি পেটে মাল্টা খেলে কি হয়ঃ

খালি পেটে মাল্টা খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে, তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। মাল্টায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসামগ্রী আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। তবে, খালি পেটে মাল্টা খেলে কিছু মানুষের পেটে গ্যাস বা অম্বল তৈরি হতে পারে, কারণ মাল্টা একটি সাইট্রাস ফল এবং এতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। এর ফলে কিছু মানুষে অ্যাসিডিটি বা পেটব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ শরীরের দুর্বলতা দূর করতে ও শরীরে শক্তি বাড়াতে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা?

তবে, স্বাভাবিকভাবে সবার জন্য খালি পেটে মাল্টা খাওয়া বিপজ্জনক নয়। এটি হজম প্রক্রিয়াকেও উন্নত করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। যদি আপনার পেট দুর্বল বা অম্বল প্রবণতা থাকে, তাহলে খালি পেটে মাল্টা না খেয়ে অন্য খাবারের সাথে খাওয়া ভালো। এছাড়া, মাল্টা খাওয়ার পর পরিমাণমতো পানি পান করলে তা হজমে সহায়ক হবে এবং পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করবে না।

মাল্টা খেলে কি গ্যাস বাড়েঃ

মাল্টা খাওয়ার ফলে সাধারণত গ্যাসের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম, কারণ এটি হালকা এবং সহজপাচ্য ফল। তবে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মাল্টার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাসিড পেটে অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা গ্যাস বা পেটের অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। বিশেষত, যদি মাল্টা অতিরিক্ত খাওয়া হয় বা খালি পেটে খাওয়া হয়। তখন এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে খেঁজুর খেলে কীভাবে শরীরে পুষ্টি ও শারীরিক শক্তি বাড়ে জেনে নিন?

এছাড়া, যাদের হজমজনিত সমস্যা বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে মাল্টার ফাইবার এবং অ্যাসিড পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে। সমস্যা এড়ানোর জন্য মাল্টা খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে মাল্টা খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে, যদি কোনো অস্বস্তি অনুভূত হয়। তবে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীরের পুষ্টি ও ভিটামিন মাত্রা বাড়ানোর জন্য এই মাল্টা খাওয়ার নিয়ম কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই মাল্টা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে আমাদের শরীরে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.....................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url