জমি বিক্রি করলে কি ট্যাক্স দিতে হয় - জমি ক্রয়ের পর কি কি করণীয়? জেনে রাখুন?

আজকে আমরা জানবো যে যেকোনো জায়গার ক্ষেত্রে এই জমি বিক্রি করলে কি ট্যাক্স দিতে হয় সরকারকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই জমি ক্রয়ের পর কি কি করণীয় হয়ে থাকে একটা সাধারণ মানুষের কাজ। আসুন জানি?  

ভূমিকাঃ

জমি ক্রয় - বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোন কিছু করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের কাগজ লাগে দরকার হয়। জমি কিনে রাখলে এটা সময় গিয়ে আপনি যখন এই মাটি উচ্চ দামে বিক্রি করবেন। সেখান থেকে আপনার মুনাফা বেরিয়ে আসবে।

জমি-বিক্রি-করলে-কি-ট্যাক্স-দিতে-হয়
জমি-বিক্রি-করলে-কি-ট্যাক্স-দিতে-হয়    

তাই আসুন জেনে রাখি যে আপনি যদি কোথায় থেকে জমি কিনেন তাহলে কি এই জমি বিক্রি করলে কি ট্যাক্স দিতে হয় সরকারকে বা কি ধরনের ভ্যাট লাগে জমির ক্ষেত্রে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই জমি ক্রয়ের পর কি কি করণীয় কাজ গুলো হয়ে থাকে আমাদের জন্য। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত......। 

জমি বিক্রি করলে কি ট্যাক্স দিতে হয়ঃ

বাংলাদেশে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে ট্যাক্স দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। জমি বিক্রি করলে বিক্রেতাকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সহকারে ট্যাক্স দিতে হতে হবে। যা জমির মূল্য এবং মালিকানা সময়কালের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, জমির বিক্রয় মূল্য থেকে নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয়। এই ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করা হয় জমির অবস্থান (যেমন শহর বা গ্রামাঞ্চল) এবং বিক্রয় মূল্যের ভিত্তিতে।

এছাড়া, জমি বিক্রির সময় স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি সম্পর্কিত ব্যয়ও বিক্রেতার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট ট্যাক্স হার এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে জানতে কর কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সব আইনি দিক সঠিকভাবে পালন করা যায়।

জমি ক্রয়ের পর কি কি করণীয়ঃ

জমি ক্রয়ের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় যা আইনগত এবং নিরাপত্তার জন্য আবশ্যক। প্রথমত, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা গুরুত্বপূর্ণ। জমি ক্রয়ের পর এটি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিবেন। এ ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প কাগজ ও রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হয় আপনাকে। দ্বিতীয়ত, খারিজ বা নামজারি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ভূমি অফিসে নামজারি আবেদন করতে হয়, যাতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা যায় খুব সহজে। 

নামজারি সম্পন্ন হলে মিউটেশন সনদ পেতে যাবেন। যা জমির মালিকানার আইনি স্বীকৃতি। তৃতীয়ত, জমির দাখিলা (খাজনা) পরিশোধ করা উচিত। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি জমির মালিকানা সম্পর্কিত কর নিয়ম মেনে চলছেন। সবশেষে, জমির সঠিক ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট সীমানা নিশ্চিত করতে জমির নকশা ও পরিমাপের কাজ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এই কাজটি করতে ভুলবেন না।

জমি বিক্রির জন্য কি কি কাগজ লাগেঃ

জমি বিক্রির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, যা জমির আইনি এবং সঠিক হস্তান্তর নিশ্চিত করে থাকে। জমি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছেঃ

  1. মূল দলিলঃ (রেজিস্ট্রেশন দলিল)  জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য আসল দলিল দরকার।
  2. খতিয়ানঃ জমির সঠিক মালিকানা এবং পরিমাপের তথ্য নিশ্চিত করতে কাগজ।
  3. মিউটেশন সনদঃ জমির নামজারি করা হয়েছে কি না, তা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন।
  4. দাখিলা (খাজনা) রসিদঃ জমির কর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা তার প্রমাণ দেখে নিবেন।
  5. জমির নকশা/ম্যাপঃ জমির সীমানা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া আছে কি'না তার জন্য।
  6. জাতীয় পরিচয়পত্রঃ (NID) বিক্রেতা এবং ক্রেতার পরিচয় নিশ্চিত করতে।
  7. নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটঃ (NOC)  নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে, যেমন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

এই কাগজপত্র জমি বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে এবং দলিলের সব তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে।

খারিজ ছাড়া জমি বিক্রি করা যায় কিঃ

খারিজ ছাড়া জমি বিক্রি করা সম্ভব হলেও এটি আইনি এবং ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। খারিজ (নামজারি) জমির মালিকানা পরিবর্তনের আইনি প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন না হলে জমির মালিকানার স্বত্ব এবং বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে আদালতে। জমি বিক্রির সময় ক্রেতা সাধারণত খতিয়ান এবং মিউটেশন সনদ দেখতে চান, যা জমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করে থাকে।

যদি জমির খারিজ না করা থাকে, তাহলে বিক্রির পর নতুন মালিকের পক্ষে জমির মালিকানা নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে এবং আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তাই জমি কিনার ক্ষেত্রে আগে কাগজপাতি ভাল করে ঠিক করে নিবেন।

জমি ক্রয় বিক্রিয় আইনঃ

বাংলাদেশে জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত আইন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম এবং শর্তাবলীর মধ্যে পড়ে। জমি ক্রয়-বিক্রয় আইন অনুসারে, জমির মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ১৯৭২ সালের রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট এবং ১৯৭৪ সালের ট্রান্সফার অব প্রপার্টি অ্যাক্ট প্রযোজ্য। জমি বিক্রির সময় মূল দলিল (রেজিস্ট্রেশন দলিল), মিউটেশন সনদ, এবং খাজনার রসিদ জমির সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হয়। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার উচিত জমির খতিয়ান এবং নকশা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়।

যাতে জমির প্রকৃত সীমানা এবং মালিকানা নিশ্চিত করা যায়। আইন অনুযায়ী, জমি ক্রয়ের সময় দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং দলিলের স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। যাতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড হয়। এই আইনগুলো সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ না করলে জমির মালিকানা নিয়ে ভবিষ্যতে জটিলতা এবং আইনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জমি ক্রয় বিক্রয় ব্যবসাঃ

জমি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা বাংলাদেশে একটি লাভজনক এবং বহুল প্রচলিত ব্যবসা, তবে এটি পরিচালনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় মাথায় রাখা প্রয়োজন। এই ব্যবসায় সাফল্য অর্জনের জন্য জমি ক্রয়ের আগে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করতে হয়। জমির খতিয়ান, মিউটেশন সনদ, দাখিলা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঠিকভাবে আছে কি'না সেটি পরীক্ষা করা জরুরি। 

জমি-ক্রয়-বিক্রয়-ব্যবসা
জমি-ক্রয়-বিক্রয়-ব্যবসা    

যা নিশ্চিত করা যায় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে। রেজিস্ট্রেশন এবং দলিল প্রস্তুত করার সময় স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। এছাড়া, ব্যবসার সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক পরিকল্পনা, জমির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

জমির রেজিস্ট্র খরচ কতঃ

বাংলাদেশে জমির রেজিস্ট্রেশনের খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ জমির অবস্থান, জমির ধরণ, এবং স্থানীয় সরকারের নির্ধারিত ফি। সাধারণত, জমি রেজিস্ট্রেশনের খরচের মধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি, এবং ডকুমেন্টেশন চার্জ অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্ট্যাম্প ডিউটি সাধারণত জমির ঘোষিত মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ, যা প্রায় ৭% থেকে ৮% হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন ফি প্রায় ১.৫% এবং স্থানীয় সরকারি কর বা ফি প্রায় ২% থেকে ৩% পর্যন্ত হতে পারে।

অতিরিক্ত খরচ হিসেবে আইনজীবীর ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ হতে পারে। দলিলের মূল্য যদি ২৪,০০০ এর কম থাকে তাহলে সেটি নগদ অর্থে দিতে হবে। আর যদি ২৪,০০০ এর বেশি হয় তাহলে যেকোনো সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে ফলস্বরূপ, জমি রেজিস্ট্রেশনের মোট খরচ জমির মূল্যের প্রায় ১২% থেকে ১৪% ভাগ দিতে হবে।

জমির পরিমাপ শতাংশ হিসাবঃ

বাংলাদেশে জমির পরিমাপের জন্য শতাংশ একটি প্রচলিত একক। ১ শতাংশ সমান ৪৩৫.৬ বর্গফুট। জমির পরিমাপের সময়, যদি জমির আয়তন বর্গফুটে দেওয়া থাকে, তবে তা শতাংশে রূপান্তর করা সহজ। যেমনঃ যদি আপনার জমির আয়তন ৮,৭১২ বর্গফুট হয়, তবে শতাংশে তা হবেঃ


                                             জমির মোট বর্গফুট     ৮,৭১২

                          শতাংশ= ..........................................= ........................= ২০

                                             ৪৩৫.৬                ৪৩৫.৬

অর্থাৎ, ৮,৭১২ বর্গফুটের জমি সমান ২০ শতাংশ। জমির পরিমাপের ক্ষেত্রে স্থানীয় নিয়ম এবং পদ্ধতি অনুযায়ী এই হিসাব প্রয়োগ করা হয়।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যেকোনো জমির ক্রয় বিক্রয় ক্ষেত্রে জমি বিক্রি করলে কি ট্যাক্স দিতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই জমি ক্রয়ের পর কি কি করণীয় কাজ হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.....................www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )





















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url