বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় - ও - কফ দূর করার উপায়? সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরের জন্য বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি-কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আমাদের বুক থেকে কফ দূর করার উপায় কি। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের শরীরে অনেক সময় দেখা যায় যে যখন আমরা কোনো কিছু ঠান্ডা অতিরিক্তি খেয়ে নি তখন আমাদের ঠান্ডা লেগে যায়। যাতে করে এই ঠান্ডা আমাদের বুকে ও গলাতে কফ হিসাবে বসে যায়। তখন আমরা কাশতে শুরু করি।
বুকের-কফ-বের-করার-ঘরোয়া-উপায় |
তাই এই সব কফ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু থেরাপি আছে যেটি আপনি মেনে চলতে আপনার শরীর থেকে এই কফ নামের রোগ যেতে বাধ্য। তাই জেনে রাখিন যে বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি-কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে কফ দূর করার উপায় কি। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত.........।
বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায়ঃ
বুকের কফ বের করার জন্য কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা সহজেই অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমত, উষ্ণ পানীয় যেমন আদা চা বা মধু ও লেবু মিশ্রিত উষ্ণ পানি পান করলে বুকের কফ কমাতে সাহায্য করে। আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহনাশক উপাদান কফ নরম করে এবং তা সহজে বের হতে সাহায্য করে। ফুটানো পানির বাষ্প নেওয়া একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা বুকের জমে থাকা কফ সরাতে কার্যকর।
আরো পড়ুনঃ কিডনিতে পানি জমলে আপনার যা যা করণীয় কাজ গুলো হবে তা জানুন?
গরম পানির বাষ্পের সাথে ইউক্যালিপটাস তেল বা পুদিনা তেল যোগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি শ্বাসনালী খুলে দেয় এবং শ্লেষ্মা পাতলা করে, ফলে কফ সহজে বের হয়। আপনি নিয়ে গলায় গার্গল করা আরেকটি ভালো উপায়। লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং কফ মুক্ত করতে সহায়তা করে।
এছাড়া, আনারসের রস পান করা যেতে পারে, কারণ এতে ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম থাকে যা কফ কমাতে সাহায্য করে। এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে বুকের কফ দ্রুত বের হতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালীর আরাম আসে।
কফ দূর করার উপায়ঃ
কফ দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে এবং সহজে অনুসরণ করা যায়। যেটি আপনি ঘরে বসে নিজে চেষ্টা করতে পারবেন। নিচে কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ
- উষ্ণ পানীয় পানঃ আদা চা, মধু ও লেবু মিশ্রিত উষ্ণ পানি, বা পুদিনা চা পান করলে গলা আরাম পায় এবং কফ নরম হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান কফ দূর করতে সাহায্য করে।
- বাষ্প থেরাপিঃ গরম পানির বাষ্প নিলে শ্বাসনালী খুলে যায় এবং কফ সহজে বের হয়। এর সাথে ইউক্যালিপটাস বা পুদিনা তেল যোগ করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
- লবণ পানি দিয়ে গার্গলঃ গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার অস্বস্তি কমে এবং কফ নরম হয়ে বের হতে সাহায্য করে।
- আনারসের রসঃ আনারসে ব্রোমেলেইন নামক একটি এনজাইম থাকে যা শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে এবং কফ দ্রুত দূর করতে কার্যকর।
- হালকা ব্যায়ামঃ কফ বের করতে হালকা ব্যায়াম বা শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন করা যেতে পারে, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং জমে থাকা শ্লেষ্মা সরিয়ে দেয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্তি কফ হওয়ার কারণ কিঃ
অতিরিক্ত কফ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং এগুলো সাধারণত শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাড়া হিসেবে ঘটে। প্রথমত, সর্দি-কাশি বা ফ্লু কফ তৈরির অন্যতম কারণ। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে শ্বাসনালী প্রদাহিত হয় এবং শরীর প্রতিরক্ষা হিসেবে শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি করে। অ্যালার্জি, ধুলো বা পরাগরেণুর কারণে শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা উৎপাদন হতে পারে। এ ছাড়া ধূমপান এবং বায়ু দূষণ কফ তৈরির আরেকটি প্রধান কারণ।
এসব কারণে শ্বাসনালীর ঝিল্লিতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় এবং শরীর কফ তৈরি করে তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স (GERD) এর ক্ষেত্রেও কফ হতে পারে, কারণ পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালীতে উঠে শ্বাসনালীকে উত্তেজিত করে এবং শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে। ব্রঙ্কাইটিস বা হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কফ হয়, যা শ্বাসনালীতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে তৈরি হয়।
আরো পড়ুনঃ কি কি ভুলের কারণে আমাদের শরীরে হার্ট আক্যাট হয়ে থাকে তা জেনে সর্কত থাকুন?
এই কারণগুলো কফের উৎপাদন বাড়ায় এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়। চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি নিয়মিত অনুসরণ করলে কফ দূর করা সহজ হয় এবং শ্বাসনালীর স্বস্তি বজায় থাকে।
কি খেলে কফ ভাল হয়ঃ
কফ ভালো করতে এবং শ্বাসনালীর আরাম পেতে কিছু খাবার বেশ উপকারী হিসাবে কাজ করে থাকে। নিম্নে কিছু খাবারের নাম বলা হলোঃ
- আদা চাঃ আদায় রয়েছে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান, যা কফ নরম করতে এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- মধু ও লেবুঃ মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা গলার অস্বস্তি কমাতে এবং কফ সরাতে সাহায্য করে। লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- গরম স্যুপ বা ব্রথঃ বিশেষত মুরগির স্যুপ শ্বাসনালীর কফ কমাতে কার্যকর, কারণ এটি গলাকে আরাম দেয় এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
কি-খেলে-কফ-ভাল-হয় |
- আনারসঃ এতে ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম থাকে, যা শ্লেষ্মা কমাতে এবং কফ পাতলা করতে সহায়ক করে থাকে।
- গরম পানিঃ উসুম- কুসুম গরম পানি পান করলে শরীরের শ্লেষ্মা নরম হয় এবং কফ বের করতে সহজ হয়।
- লবণ পানি দিয়ে গার্গলঃ এটি গলার অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে এবং জমে থাকা কফ সহজে বের করতে সহায়তা করে।
এছাড়া, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এগুলো কফের সমস্যা বাড়াতে পারে।
বুকের কফ বের করার ঔষুধের নামঃ
বুকের কফ বের করার জন্য সাধারণত এক্সপেকটোরান্ট বা মিউকোলিটিক ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যা শ্লেষ্মা পাতলা করে এবং কফ সহজে বের করতে সাহায্য করে। কিছু জনপ্রিয় ঔষধের নাম নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- অ্যামব্রোক্সল (যেমন Mucosolvan, Ambroxol Syrup)
- এটি শ্লেষ্মা পাতলা করতে এবং সহজে বের করতে সাহায্য করে।
- গুয়াইফেনেসিন (যেমন Tussin, Robitussin)
- এটি একটি এক্সপেকটোরান্ট যা কফ পাতলা করে শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
- ব্রোমহেক্সিন (যেমন Bromhexine Syrup)
- শ্লেষ্মা কমাতে সহায়ক এবং কফ সরানোর জন্য কার্যকর।
- সিনিয়র সিনাপ্রেফ বা ভিক্স
- কিছু হার্বাল বা ঘরোয়া মেডিসিন যেমন সিনাপ্রেফ শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ সরাতে সাহায্য করে।
এই ঔষধগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে সঠিক চিকিৎসা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণঃ
বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণগুলির মধ্যে প্রধানত শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার অনুভূতি থাকে। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুকে ভারীভাব লাগা, এবং ক্রমাগত কাশি দেখা যায়, যা কফ বের করার চেষ্টা করে। শ্বাসের সাথে শোঁ শোঁ শব্দ বা ঘড়ঘড় শব্দ হতে পারে, যা ফুসফুসে শ্লেষ্মার উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া গলা খুসখুস করা, বিশেষ করে রাতে বা শোবার সময় কাশি বেড়ে যাওয়া সাধারণ লক্ষণ। কিছু ক্ষেত্রে, কফ জমে থাকলে বুক ব্যথা হতে পারে এবং কাশি করলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়
শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং কখনো কখনো শরীরের ক্লান্তি এবং দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে। তাহলে এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া। আর যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাতে করে এই বুকে জমে থাকা কফ বেশি না হয়ে যায়।
শিশুর বুকের কফ বের করার সিরাপঃ
শিশুর বুকের কফ দূর করার জন্য কিছু সিরাপ ব্যবহৃত হয় যা কফ নরম করে এবং সহজে বের হতে সহায়তা করে। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে যে কোনো ওষুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু জনপ্রিয় শিশুদের কফ নিরাময়ের সিরাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- অ্যামব্রোক্সল সিরাপঃ
- এটি শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং শ্লেষ্মা পাতলা করে কফ সহজে বের হতে সহায়তা করে।
- গুয়াইফেনেসিন সমৃদ্ধ সিরাপঃ
- এটি এক্সপেকটোরান্ট হিসেবে কাজ করে এবং কফ বের হতে সাহায্য করে।
- ব্রোমহেক্সিন সিরাপঃ
- এটি শ্বাসনালীতে জমে থাকা শ্লেষ্মা কমাতে কার্যকর।
এছাড়া, শিশুদের বুকের কফ কমানোর জন্য গরম পানির বাষ্প নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করানোও উপকারী হতে পারে।
কি খেলে বুকের কফ কমেঃ
বুকের কফ কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার বেশ কার্যকর। প্রথমত, আদা চা বা মধু মিশ্রিত উষ্ণ পানি কফ নরম করতে এবং শ্বাসনালীর আরাম দিতে সাহায্য করে। আদায় থাকা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান এবং মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ কফ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আনারসের রস একটি চমৎকার বিকল্প, কারণ এতে থাকা ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম শ্লেষ্মা পাতলা করে এবং কফ দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে। লেবু, মধু, পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খান যাতে গলায় ঝাল লাগে।
কি-খেলে-বুকের-কফ-কমে |
মধু, লেবু মিশ্রণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কফের সমস্যা কমায়। এছাড়া, গরম স্যুপ বা ব্রথ (বিশেষ করে মুরগির স্যুপ) শ্বাসনালীকে আর্দ্র রাখে এবং কফ বের করতে সহায়তা করে। গরম পানি বা উষ্ণ পানীয় নিয়মিত পান করাও কফ কমাতে সহায়ক। এসব খাবার বুকের জমে থাকা কফ কমাতে এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কার্যকর।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের শরীরে জমে থাকা এই বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি-কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে কফ দূর করার উপায় কি।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন...............www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url