বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় - বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে বাইরের দেশে বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় সব মানুষের। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কীভাবে কাজে লাগে ও বাইরের দেশে যাওয়ার জন্য কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার হয়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
নিজের দেশ ত্যাগ করে মানুষ বাইরের দেশে যাই একমাত্র টাকা ইনকাম করার জন্য। যেন তার ফ্যামেলি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে একটি ছেলে বা প্রবাসীকে অনেক কিছু সহ্য ও কষ্ট নিয়ে থাকতে হয় সব সময়।
বিদেশ-যাওয়ার-জন্য-কি-কি-প্রয়োজন-হয় |
তাই আসুন জেনে রাখি যে বাইরের দেশে বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় মানুষের জন্য। যেটি দ্বারা সে বাইরের দেশে যেতে পারে সহজ উপায়ে। তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে এই বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কি ধরনের দরকার হয়ে থাকে। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত............।
বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন হয়ঃ
বিদেশ যাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা যেকোনো প্রবাসী কর্মী বা পর্যটকের জন্য অপরিহার্য। প্রথমত, পাসপোর্ট হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি যা বৈধ এবং বৈধতার মেয়াদ থাকতে হবে। ভিসা প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে আবেদন করতে হয়। ভিসার ধরন যেমন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বা পর্যটনের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং শর্ত ভিন্ন হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী জীবন কতটা কষ্টকর হয়ে থাকে ও কি কি করতে হয় প্রবাসী জীবনে জানুন?
মেডিকেল টেস্ট প্রয়োজন, বিশেষত কর্মসংস্থানের জন্য মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপে যাওয়ার ক্ষেত্রে। এতে সাধারণত সংক্রামক রোগ পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রাথমিক বিমা এবং বিদেশে থাকা অবস্থায় সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বীমা করাও গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে যাওয়ার আগে অর্থনৈতিক প্রস্তুতি, যেমন পর্যাপ্ত টাকা এবং নির্দিষ্ট মুদ্রা, এবং একটি রিটার্ন টিকেট থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা থাকলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে।
সবশেষে, যাত্রার সময় সঠিক কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করা এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা উচিত, যাতে প্রবাসে যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হয়।
বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণঃ
বিদেশ যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রবাসে যেতে চান। সাধারণত, কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভাষা প্রশিক্ষণ এর ওপর জোর দেওয়া হয়। কারিগরি প্রশিক্ষণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ বিদ্যুৎকর্মী, প্লাম্বিং, নির্মাণ কাজ, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, এবং তথ্যপ্রযুক্তি। এই প্রশিক্ষণগুলোর মাধ্যমে একজন কর্মী বিদেশের কর্মক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে সক্ষম হন।
আরো পড়ুনঃ দুবাই যাওয়ার জন্য আপনার কি কি কাগজ লাগবে ও কত টাকা লাগবে জেনে নিন?
বাংলাদেশে বিএমইটি (বিউরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং) এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) বিদেশগামী কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এর পাশাপাশি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষা প্রশিক্ষণ, বিশেষত ইংরেজি বা গন্তব্য দেশের স্থানীয় ভাষার প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার হয়। যা প্রবাসে যোগাযোগ সহজ করে এবং কাজের পরিবেশে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে।
এই প্রশিক্ষণগুলো বিদেশের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রবাস জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করে।
ফ্রি বিদেশ যাওয়ার উপায়ঃ
ফ্রি বিদেশ যাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে, যা সাধারণত স্কলারশিপ, সরকারি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বা বিশেষ কর্মসংস্থান প্রোগ্রামের মাধ্যমে করা সম্ভব। স্কলারশিপ প্রোগ্রাম যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করে, যা তাদের জন্য বিনামূল্যে বিদেশ যাওয়ার উপায় হতে পারে। সরকারি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম যেমন বিএমইটি (বিউরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং) এর মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ আপনি কি টাকা ইনকাম করার জন্য পোল্যান্ড যাওয়ার কথা ভাবছেন বিস্তারিত?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্য দক্ষ কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে, যা বিদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করে। কিছু দেশে কাজের বিনিময়ে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেও প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়। এই ধরনের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলে নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে ভ্রমণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করা যায়।
বিদেশ যাওয়ার সময় যাত্রাপথে করণীয় কাজঃ
বিদেশ যাওয়ার সময় যাত্রাপথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজ আছে, যা যাত্রা নিরাপদ এবং আরামদায়ক করতে সহায়ক। প্রথমত, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, বিমান টিকেট, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি ভালোভাবে চেক করা এবং সহজে পাওয়া যায় এমন স্থানে রাখা উচিত।সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানো জরুরি, সাধারণত ফ্লাইট ছাড়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে পৌঁছানো ভালো।
আরো পড়ুনঃ কম্বোডিয়া দেশে গিয়ে আপনি কীভাবে সহজ উপায়ে টাকা রোজগার করবেন জানুন?
এতে নিরাপত্তা চেক এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এবং মাস্ক সঙ্গে রাখা উচিত। যাত্রাপথে হাতের ব্যাগে জরুরি আইটেম যেমন ফোন চার্জার, ট্রাভেল ডকুমেন্টস, স্ন্যাকস, এবং পানির বোতল রাখা ভালো। জলবায়ু পরিবর্তন বা দীর্ঘ যাত্রার জন্য আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত।
ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখা জরুরি। সবশেষে, যাত্রাপথে সচেতন থাকা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকল নির্দেশিকা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশ যাওয়ার শপিং লিস্টঃ
বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া জরুরি, যা যাত্রাকে সহজ এবং আরামদায়ক করে তুলতে সহায়ক। নিচে একটি শপিং লিস্ট দেওয়া হলো যেগুলো আপনাকে প্রবাসী পথে যাওয়ার সময় নেওয়া উচিত তাহলোঃ
- নথিপত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকিট, ইমিগ্রেশন পেপার, এবং প্রয়োজনীয় ফটোকপি।
- জরুরি ওষুধঃ ব্যক্তিগত ওষুধ, সাধারণ ব্যথানাশক, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, এবং ফার্স্ট এইড কিট।
- আরামদায়ক পোশাকঃ গন্তব্য দেশের জলবায়ু অনুযায়ী হালকা বা গরম কাপড়, হুডি, স্কার্ফ, এবং আরামদায়ক জুতা।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইসঃ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট, পাওয়ার ব্যাংক, এবং চার্জার।
- টয়লেট্রিজঃ টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী।
বিদেশ-যাওয়ার-শপিং-লিস্ট |
- ব্যাগেজ আইটেমঃ হ্যান্ডব্যাগ, সুটকেস, ট্রাভেল পিলো, এবং লাগেজ ট্যাগ।
- স্ন্যাকস ও পানীয়ঃ যাত্রাপথে হালকা খাবার যেমনঃ স্ন্যাকস এবং পানির বোতল।
- নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রাঃ স্থানীয় এবং গন্তব্য দেশের মুদ্রা।
- জ্যাকেট বা সোয়েটারঃ বিশেষত শীতপ্রধান দেশে গেলে এই গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
- সানস্ক্রিন ও সানগ্লাসঃ সূর্যের প্রখরতা থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করে।
- ব্যক্তিগত ডায়েরি ও কলমঃ জরুরি তথ্য বা নোট রাখার জন্য।
এই শপিং লিস্ট আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে। বাইরের দেশে যাওয়ার সময় এই গুলো জিনিস নিতে ভুল করবেন না কখনো। আসা করি বুঝতে পেরেছেন।
বিদেশ যাওয়ার সময় যেসব ভুল কাজ করবেন নাঃ
বিদেশ যাওয়ার সময় কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলা উচিত, যা যাত্রার সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল কাজ উল্লেখ করা হলো, যা বিদেশ ভ্রমণের আগে এবং সময় থাকতে আপনাকে ভুলগুলো ঠিক করে নিতে হবে। তাহলোঃ
- নথিপত্র ভুলে যাওয়াঃ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকিট ইত্যাদি নিতে ভুলবেন না। এগুলো ছাড়া ভ্রমণ সম্ভব নয়।
- বিমানের সময়সূচি চেক না করাঃ যাত্রার আগে ফ্লাইটের সময়সূচি নিশ্চিত করুন। ভুল সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছালে ফ্লাইট মিস হতে পারে। ২-৩ ঘন্টা আগে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ব্যাগেজ অতিরিক্ত বোঝাই করাঃ অতিরিক্ত ব্যাগেজের জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। তাই ব্যাগেজ ওজনের সীমা মেনে চলা জরুরি।
- প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে না রাখাঃ ব্যক্তিগত ওষুধ এবং ফার্স্ট এইড কিট না রাখলে অসুস্থতার সময় সমস্যা হতে পারে।
- নিরাপত্তা নিয়ম অমান্য করাঃ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চেকিংয়ে ভুল বা অবহেলা করবেন না। সকল নিয়ম মেনে চলুন।
- বৈদেশিক মুদ্রা না নেওয়াঃ গন্তব্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে না গেলে অর্থ লেনদেনে সমস্যা হতে পারে।
- কনফার্মেশন না চেক করাঃ হোটেল বা আবাসনের কনফার্মেশন চেক না করলে পৌঁছে সমস্যায় পড়তে পারেন।
এইসব ভুল এড়িয়ে চললে বিদেশ যাত্রা আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়ে যাবেন খুব সহজে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন বাইরের দেশে বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় একটি মানুষের। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ কি কি দরকার হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url