কীভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে হয় - কীভাবে ব্লাড প্রেসার কমানো যায়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরে কীভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে হয় ও নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আমাদের শরীরে কীভাবে ব্লাড প্রেসার কমানো যায় সহজ উপায়ে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে যেটি আমরা হয়তো খুব সহজে চিকিৎসা করে নি। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে ডাক্তার দ্বারা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
কীভাবে-ব্লাড-প্রেসার-মাপতে-হয় |
তাই আসুন আমরা জেনে রাখি যে আমাদের শরীরে কীভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে হয় সহজ উপায়ে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে আমাদের শরীরে কীভাবে ব্লাড প্রেসার কমানো যায়। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত।
কিভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে হয়ঃ
ব্লাড প্রেশার মাপার জন্য সাধারণত স্ফিগমোম্যানোমিটার এবং স্টেথোস্কোপ অথবা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন ব্যবহার করা হয়। প্রথমে ব্যক্তিকে আরামদায়ক অবস্থায় বসতে দিন এবং হাত টেবিলের উপর সমানভাবে রাখুন। মেশিনের কাফ (এক ধরনের ব্যান্ড) উপরের বাহুর চারপাশে মুড়িয়ে লাগান, যেন এটি ত্বকের সাথে ফিট থাকে। মেশিন চালু করলে কাফ বাতাস দিয়ে ফুলে উঠবে এবং চাপ তৈরি করবে।
এরপর মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাপ কমিয়ে ব্লাড প্রেসার মাপা শুরু করবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্ক্রিনে সিস্টোলিক (উচ্চ চাপ) এবং ডায়াস্টোলিক (নিম্ন চাপ) রিডিং দেখাবে। ডিজিটাল মেশিনে রিডিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া যায়। কিন্তু ম্যানুয়াল যন্ত্র ব্যবহার করলে স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্টবিট শুনে রিডিং নেয়া হয়।
কীভাবে ব্লাড প্রেসার কমানো যায়ঃ
ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। নিচে কয়েকটি কার্যকরী উপায় উল্লেখ করা হলোঃ
- নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা অন্য কোনো শারীরিক ব্যায়াম করুন। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। শাকসবজি, ফলমূল, এবং ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান। লবণ, তেল, এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- লবণ গ্রহণ কমানঃ অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, তাই খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিন। প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, তাই সঠিক ওজন বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং পরিমিত খাবার খান।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুনঃ ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায়, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
- স্ট্রেস কমানঃ মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায়, তাই ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমানঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খানঃ কলা, পালং শাক, টমেটো, আলু ইত্যাদি পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ক্যাফেইন কমানঃ অতিরিক্ত ক্যাফেইন (যেমন: চা, কফি) রক্তচাপ বাড়াতে পারে, তাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন।
- নিয়মিত রক্তচাপ মাপুনঃ আপনার রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্রের নাম কিঃ
ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্রের নাম হলোঃ স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphygmomanometer)। এটি ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল উভয় ধরনের হতে পারে। ম্যানুয়াল স্ফিগমোম্যানোমিটারে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে রক্তচাপ মাপা হয়। যেখানে ডিজিটাল যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তচাপ মেপে স্ক্রিনে রিডিং দেখায়।
ব্লাড প্রেসার কোন হাতে মাপতে হয়ঃ
ব্লাড প্রেসার সাধারণত যে কোনো হাতে মাপা যায়, তবে সাধারণত বাম হাতে মাপা হয়, কারণ এটি হৃদয়ের কাছাকাছি। তবে, যাদের ডান হাতে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ডান হাতেও মাপা যেতে পারে। রক্তচাপ নিয়মিত মাপার সময় প্রথমে দুই হাতে মাপা উচিত, এরপর যে হাতে রক্তচাপ বেশি পাওয়া যায়, সেই হাতে নিয়মিত মাপার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেশিন ছাড়া ব্লাড প্রেসার মাপার উপায়ঃ
মেশিন ছাড়া সঠিকভাবে ব্লাড প্রেসার মাপা বেশ কঠিন, তবে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে আপনি উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের ধারণা পেতে পারেন। নিচে কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলোঃ
- উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ
- মাথা ব্যথা, বিশেষ করে ঘাড়ের পেছনে।
- মাথা ঘোরা বা ভারী অনুভব করা।
- বুক ধড়ফড় করা বা হার্টবিট বেড়ে যাওয়া।
- চোখের সামনে ঝাপসা দেখা।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ।
- নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণঃ
- দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা।
- দাঁড়ালে হঠাৎ মাথা ঘুরে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব।
- শরীর ঠান্ডা ও হাত-পা ঘামে ভিজে যাওয়া।
- মনোযোগের অভাব ও ক্লান্তি।
তবে, রক্তচাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য স্ফিগমোম্যানোমিটার বা ডিজিটাল মেশিন সবচেয়ে কার্যকর। যদি ব্লাড প্রেসার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে চান, তবে একটি ব্লাড প্রেসার মেশিন ব্যবহার করা বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরিমাপ করা উচিত।
স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার কত হয়ঃ
স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার সাধারণত ১২০/৮০ mmHg হয়। এখানে, ১২০ হলো সিস্টোলিক চাপ, যা হৃদপিণ্ড যখন রক্ত পাম্প করে তখন ধমনীতে সৃষ্ট চাপ, এবং ৮০ হলো ডায়াস্টোলিক চাপ, যা হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকাকালীন ধমনীতে সৃষ্ট চাপ নির্দেশ করে।
তবে, বয়স ও শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে রক্তচাপ কিছুটা ওঠানামা করতে পারে। সাধারণত সিস্টোলিক ৯০-১২০ mmHg এবং ডায়াস্টোলিক ৬০-৮০ mmHg এর মধ্যে থাকলে তাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
ব্লাড প্রেসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ২০টি দিকঃ
ব্লাড প্রেসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। নিচে ব্লাড প্রেসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ২০টি কারণ বা দিক উল্লেখ করা হলোঃ
- মানসিক চাপঃ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়াঃ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ রক্তচাপ বাড়ায়। সেটি থেকে বিরতি থাকতে হবে।
- স্থূলতাঃ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রক্তচাপ বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাবঃ নিয়মিত ব্যায়াম না করলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- ধূমপানঃ ধূমপানের ফলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, যা রক্তচাপ বাড়ায়।
- অতিরিক্ত মদ্যপানঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- জেনেটিক বা বংশগত কারণঃ পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসঃ সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য না খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- চর্বিযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার রক্তচাপ বাড়ায়।
- হৃদরোগঃ বিভিন্ন হৃদরোগের কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে।
- বয়স বৃদ্ধির কারণেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ বাড়ে।
- ঘুমের অভাবঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
- ক্যাফেইনঃ অতিরিক্ত ক্যাফেইন (যেমন চা, কফি) রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- অপর্যাপ্ত পানি পানঃ শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- হার্টবিটের অনিয়মঃ হার্টের সঠিক কাজ না করলে রক্তচাপ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোন সমস্যার কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে।
- কিডনি রোগঃ কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে।
- অতিরিক্ত কাজের চাপঃ কাজের অতিরিক্ত চাপ বা ওভারটাইমের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে।
- বাতাসের দূষণঃ দূষিত পরিবেশে দীর্ঘসময় থাকার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এগুলো ব্লাড প্রেসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার কিছু প্রধান কারণ। এসব কারণ নিয়ন্ত্রণে রাখলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের শরীরের জন্য কীভাবে ব্লাড প্রেসার মাপতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে আমাদের শরীরে কীভাবে ব্লাড প্রেসার কমানো যায়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url