শীতকালে সুস্থ্য থাকার টিপস - শীতকালে শরীর সুস্থ্য রাখার ২০টি উপায়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে এই শীতকালে সুস্থ্য থাকার টিপস কি রকম হয়ে থাকে শুষ্ক মৌসুমে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই শীতকালে শরীর সুস্থ্য রাখার ২০টি উপায় গুলো কি কি। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমরা জানি যে এই শীতকাল আসলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছে যে এই শীতকালের শুষ্ক অবহাওয়া।
শীতকালে-সুস্থ্য-থাকার-টিপস |
তাই আসুন জেনে রাখি যে এই শীতকালে সুস্থ্য থাকার টিপস কিভাবে মেনে চলবেন এর সাথে নিজের শরীরের কেয়ার করবেন। ও তার সাথে সাথে এটাও জেনে নিন যে শীতকালে শরীর সুস্থ্য রাখার ২০টি উপায় কীভাবে আপনি মেনে চললে আপনার শরীর ও ঠোঁট স্বস্থ্য থাকবে। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত.........।
শীতকালে সুস্থ্য থাকার টিপসঃ
শীতকালে সুস্থ থাকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস রয়েছে, যা প্রতিদিন মেনে চললে শরীর ভালো ও সক্রিয় রাখা সম্ভব। প্রথমত, শীতে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ শীতকালে আমরা প্রায়ই পানি কম পান করি। এছাড়াও, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন যা শীতের ঠান্ডা থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে মধু খেলে কি কি উপকার হয় আমাদের শরীরের জন্য জেনে নিন?
শীতের মৌসুমে সবুজ শাক-সবজি, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো শরীরের জন্য। শীতকালে শরীর গরম রাখতে উষ্ণ পোশাক পরা এবং বাইরে বের হলে স্কার্ফ, টুপি, এবং মোজা ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া, প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দূর করতে সকাল বেলার সূর্যের আলো গ্রহণ করুন, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মেজাজ উন্নত করে। এ ছাড়া শীতকালে নানা ধরনের সর্দি এবং ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নিয়মিত হাত ধোয়া উচিত। এইসব টিপস মেনে চললে শীতকালে সুস্থ থাকা অনেক সহজ হবে।
শীতকালে শরীর সুস্থ্য রাখার ২০টি উপায়ঃ
শীতকালে শরীর সুস্থ রাখার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে, যা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করলে শরীরকে উষ্ণ ও স্বাস্থ্যবান রাখা সম্ভব। নিচে শীতকালে সুস্থ থাকার ২০টি উপায় উল্লেখ করা হলো পড়ে নিনঃ
- পানি পান করুনঃ শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
- পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুনঃ শীতকালীন সবজি ও ফল, যেমনঃ পালং শাক, কমলা, আপেল ও গাজর খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খানঃ শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে কমলা, লেবু, এবং টমেটোর মতো ফলমূল গ্রহণ করুন।
- উষ্ণ পোশাক পরুনঃ শীতে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে স্কার্ফ, মোজা, টুপি, জাকেট এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- হালকা ব্যায়াম করুনঃ প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন। এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস করুনঃ সর্দি এবং ঠান্ডা থেকে বাঁচতে নিয়মিত হাত পরিষ্কার করে ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুনঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- প্রচুর শাক-সবজি খানঃ শীতকালীন সবজি, যেমনঃ ব্রোকলি, মুলা, এবং ফুলকপি বেশি পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- চিনি কম খানঃ অতিরিক্ত চিনি শরীরের ইমিউনিটি কমায়, তাই মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সূর্যের আলো নিনঃ সকালে কিছুক্ষণ সূর্যের আলো নিন, যা ভিটামিন ডি এর জন্য উপকারী আমাদের শরীরে।
- শরীর আর্দ্র রাখুনঃ শীতে শরীর শুষ্ক হয়ে যায়, তাই লোশন ও ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করুন।
- গরম স্যুপ বা চা পান করুনঃ শীতকালে গরম স্যুপ বা হারবাল চা পান করলে শরীর গরম থাকে এবং ইমিউনিটি বাড়ে।
- প্রতিদিন ফল খানঃ আপেল, কলা, এবং পেয়ারা শীতকালে বেশি করে খাওয়া উচিত।
- পরিমিত ঘরের তাপমাত্রা রাখুনঃ ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম না রেখে পরিমিত রাখুন।
- হাত ও পায়ের সুরক্ষা দিনঃ ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গরম মোজা ও হ্যান্ড গ্লাভস,ম্যাপ্ল্যার,জাকেট ব্যবহার করুন।
- ভেষজ পানীয় পান করুনঃ আদা চা, তুলসি চা, এবং মধু-লেবুর মতো ভেষজ পানীয় শীতকালে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- শীতের ওষুধ নিনঃ সর্দি কিংবা ফ্লু বা ঠান্ডা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকুনঃ শীতকালে শ্বাসকষ্ট বা সর্দি-কাশি বাড়তে পারে। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- আলুর বদলে মিষ্টি আলু খানঃ মিষ্টি আলু পুষ্টিকর এবং শীতকালে শরীরের জন্য উপকারী খাবার।
- হালকা গরম পানিতে স্নান করুনঃ অত্যধিক গরম বা ঠান্ডা পানিতে স্নান না করে হালকা গরম পানিতে স্নান করুন। যাতে আমাদের শরীরে তীব্রতা বজায় থাকে।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে শীতকালে শরীর সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকবে এবং আপনি শীতের শুষ্কতা ও ঠান্ডা থেকে সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
শীতকালে স্বস্থ্য থাকার জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিতঃ
শীতকালে সুস্থ থাকার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি, যা শরীরকে উষ্ণ এবং শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমনঃ কমলা, লেবু, পেয়ারা, এবং টমেটো খাওয়া অত্যন্ত উপকারী, কারণ এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতের সময় সবুজ শাক-সবজি যেমনঃ পালং শাক, সরিষা শাক, এবং ব্রোকলি খেলে আয়রন, ফাইবার, এবং ভিটামিন কের ঘাটতি পূরণ হয় এবং ত্বকও ভালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ শুষ্ক শীতকালে কীভাবে আপনার ঠোঁটের যত্ন নিবেন ও ঠোঁট গোলাপি করবেন জানুন?
এছাড়া, মিষ্টি আলু, গাজর, এবং বিট রুটের মতো রুট ভেজিটেবল বা মূলজাতীয় সবজি খেলে শরীর উষ্ণ থাকে এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ এবং পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বাদাম এবং বীজ যেমনঃ কাজু, বাদাম, আমন্ড, এবং সূর্যমুখীর বীজ শীতে অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এগুলোতে ভালো চর্বি এবং প্রোটিন থাকে যা ত্বক এবং শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
শীতের খাবারের তালিকায় আরও থাকে মধু এবং আদা চা, যা ঠান্ডা এবং সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে গরম রাখে। এইসব খাবার শীতকালে নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং ঠান্ডা ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
শীতকালে স্বস্থ্য থাকার জন্য যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেনঃ
শীতকালে সুস্থ থাকতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি, কারণ এ সময় শরীর তুলনামূলকভাবে শুষ্ক এবং ঠান্ডা পরিবেশে সংবেদনশীল থাকে। শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এটি শরীরের তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিতে পারে এবং সর্দি-কাশির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে মেকাপ করে কীভাবে আপনি আপনার উজ্জ্বলতা বাড়াবেন জেনে নিন?
অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করলেও শীতে এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শীতকালে অতিরিক্ত ক্যাফেইন যেমনঃ চা ও কফি বেশি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, ফলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। এছাড়া, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
কারণ এটি শরীরের উষ্ণতা বাড়ায় ঠিকই, তবে অতিরিক্ত মশলার কারণে পেটের সমস্যা হতে পারে। ফ্রাইড ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এসব খাবার ওজন বাড়ায় এবং শীতে শরীরকে আরও অলস করে তুলতে পারে। এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চললে শীতে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে এবং সুস্থ ও সক্রিয় থাকা যায়।
শীতকালে স্বস্থ্য থাকার জন্য কতটুকু পানি পান করা উচিতঃ
শীতকালে শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক ও শরীরের আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে যায়। শীতে সাধারণত ঘাম কম হয়, তাই আমরা প্রায়ই কম পানি পান করি, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। যদিও ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এ পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
শীতকালে-স্বস্থ্য-থাকার-জন্য-কতটুকু-পানি-পান-করা-উচিত |
শীতকালে কেবল পানি নয়, বরং স্যুপ, হারবাল চা, বা ফলের রসের মতো তরল খাবার গ্রহণ করাও শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়ক। পর্যাপ্ত পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখে। এর ফলে হজমে সহায়ক হয় এবং ত্বককে শুষ্ক ও ফাটা থেকে রক্ষা করে। সুতরাং, শীতকালেও নিয়মিত পানি পান করলে শরীর আর্দ্র থাকবে এবং শুষ্কতা ও অসুস্থতা দূর করা সম্ভব হয়ে ওঠবে।
শীতকালে লিভার স্বস্থ্য রাখার উয়ায়ঃ
শীতকালে লিভার সুস্থ রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস মেনে চলা জরুরি, কারণ শীতে শরীরের বিপাক ক্রিয়া ধীরগতি হয়ে যায় এবং লিভারে চর্বি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিয়মিত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শীতে ডিহাইড্রেশন হলে তা লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ শুষ্ক শীতকালে কীভাবে শিশুর ত্বকের যত্ন নিবেন ও সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখবেন?
এছাড়াও, সবুজ শাক-সবজি যেমনঃ পালং শাক, ব্রোকলি এবং বিট রুট লিভারের জন্য বিশেষ উপকারী, কারণ এগুলো শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়ক করে। শীতকালে মধু, আদা এবং লেবু মেশানো গরম পানীয় লিভারকে সুস্থ রাখতে এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়ক হয়। মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার লিভারে ফ্যাট জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমনঃ কমলা, পেয়ারা এবং লেবু লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়ামও লিভারের চর্বি কমাতে এবং এর কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক। এই অভ্যাসগুলো শীতে লিভারকে সুস্থ রাখতে কার্যকর এবং শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে এই শীতকালে সুস্থ্য থাকার টিপস কি ধরনের আমাদের শরীরের জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই শীতকালে শরীর সুস্থ্য রাখার ২০টি উপায় গুলো কি কি।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন...............www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url