একাদশী পালন করার নিয়ম কি - একাদশীর খাদ্য তালিকা? জেনে রাখুন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের সনাতন ধর্মের এই একাদশী পালনের নিয়ম গুলো কি-কি হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই একদশীর জন্য কি-কি খাদ্য তালিকা রয়েছে? আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের সনাতন ধর্মের এই একাদশীর অনেক গুণ রয়েছে। এই একাদশী করলে বিভিন্ন ধরনের পাপ থেকে ও অনেক দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
একাদশী-পালন-করার-নিয়ম |
তাই আসুন জানি যে এই একাদশী পালন করার নিয়ম গুলো কি-কি সনাতন ধর্মে রয়েছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই একাদশীর জন্য খাদ্য তালিকা কেমন হয়। নিম্নে সব কিছু বিস্তারিত......।
একাদশী পালন করার নিয়মঃ
একাদশী পালনের নিয়মগুলো ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একাদশী হলো হিন্দু ধর্মের পবিত্র উপবাসের দিন, যা সাধারণত মাসে দু'বার (শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষে) পালিত হয়। এই দিনে ভক্তরা নিরামিষ খাবার গ্রহণ করেন এবং অনেকেই পূর্ণ উপবাস পালন করেন, অর্থাৎ জল ছাড়া অন্য কিছু খান না। যারা উপবাসে থাকতে পারেন না। তারা ফল বা দুধ জাতীয় খাবার খেয়ে উপবাস পালন করেন।
আরো পড়ুনঃ লক্ষী পূজা করার নিয়ম ও কৌশল গুলো জেনে নিন?
পালনের সময় সকালে উঠে স্নান করে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করা হয়। ভগবদ্গীতা বা ভগবান বিষ্ণুর নামে মন্ত্র পাঠ করা এবং দিনব্যাপী ধর্মচর্চা করার পর সন্ধ্যায় আরতি ও প্রার্থনা করা হয়। ভক্তরা এই দিনে পাপমোচনের জন্য প্রার্থনা করেন এবং দান-ধর্মের কাজ করেন। উপবাস শেষে দ্বাদশীর দিন উপবাস ভঙ্গ করা হয়। একাদশী পালন মানসিক শুদ্ধি এবং আত্মার শান্তি অর্জনের একটি বিশেষ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
একাদশীর খাদ্য তালিকাঃ
একাদশীর দিন নিরামিষ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে উপবাস পালন করা হয়, এবং অনেকেই কঠোরভাবে নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলেন। নিচে একাদশীর জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- ফলমূলঃ একাদশীর দিনে বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া যায়। যেমনঃ কলা, আপেল, আঙুর, পেঁপে, আম ইত্যাদি।
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ, দই, মাখন, ঘি ইত্যাদি খাওয়া যায়।
- সাবু দানাঃ সাবু দানার খিচুড়ি বা পায়েস তৈরি করে খাওয়া যায়।
- সিঙ্গাড়া আটা (কুটু আটা) একাদশীর জন্য সিঙ্গাড়া আটার (বকউইট ফ্লাওয়ার) রুটি বা পরোটা তৈরি করা যায়।
- আলুঃ সিদ্ধ আলু বা ভাজা আলু খাওয়া যায়, তবে এতে মশলা কম ব্যবহার করা হয়।
- শাকসবজিঃ নির্দিষ্ট কিছু শাকসবজি, যেমনঃ কুমড়া, লাউ, শশা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
- মাখানা (ফক্স নাটস) মাখানা ভাজা বা মাখানার খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে।
- নারকেলঃ কুচি করা বা গোটা নারকেল খাওয়া যায়, যা উপবাসের জন্য উপযুক্ত।
- ডাবের পানিঃ হাইড্রেট থাকার জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী।
- পানীয়ঃ দুধ, সরবত, ফলের রস এবং পানি খাওয়া যায়।
একাদশীর উপবাসের সময়ে সাধারণত শস্য, ডাল, চাল এবং মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা হয়। ভক্তরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এই খাদ্য তালিকা মেনে চলে।
একাদশীতে কি সাবু খাওয়া যায়ঃ
হ্যাঁ, একাদশীতে সাবু (সাগু) খাওয়া যায়। একাদশীর উপবাসে অনেকেই সাবু দানার খিচুড়ি, পায়েস বা ভাজা সাবু খেয়ে থাকেন। সাবু হালকা এবং সহজপাচ্য হওয়ায় উপবাসের জন্য এটি বেশ উপযোগী। তবে, একাদশীতে সাবু খাওয়ার সময় সাধারণত বেশি মশলা বা পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করা হয় না। তাই সাবু দানার তৈরি খাবার নিরামিষ ও সহজপাচ্য রেখে খাওয়া যায়। যা উপবাসের সময়ে শরীরকে শক্তি যোগায়।
একাদশী করলে কি কি ফল খাওয়া যায়ঃ
একাদশীর উপবাসে বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া যায়, যেগুলো সহজপাচ্য এবং শরীরের জন্য পুষ্টিকর। নিচে একাদশীর উপবাসে খাওয়া যায় এমন কিছু ফলের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- কলা
- আপেল
- পেয়ারা
- আঙুর
- পেঁপে
- কমলা লেবু
- আনারস
- ডাবের শাঁস
- আম
- বেদানা (ডালিম)
এছাড়াও অন্যান্য মৌসুমি ফলও খাওয়া যায়। একাদশীর উপবাসে ফল খাওয়া শরীরকে পুষ্টি দেয় এবং উপবাসের সময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
একাদশী পালনের মন্ত্রঃ
একাদশী পালনের সময় ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা ও পূজা করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মন্ত্র পাঠ করা হয়। এই মন্ত্রগুলো ভক্তি এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক। নিচে একাদশী পালনের সময় পাঠ করা একটি জনপ্রিয় মন্ত্র দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃ সনাতনি হিন্দুদের দূর্গা পূজা পালন করার নিয়ম ও কৌশল গুলো জেনে নিন?
"ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়"
এই মন্ত্রটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং একাদশী উপবাসের সময় ভক্তরা এটি উচ্চারণ করে থাকেন। এছাড়া আরও একটি মন্ত্র পড়তে পারেনঃ
একাদশী পালনের মন্ত্র |
"শ্রী বিষ্ণু, শ্রী বিষ্ণু, শ্রী বিষ্ণু"
এই মন্ত্রগুলো একাদশীর সময় ভক্তিভরে জপ করলে পাপ মোচন হয় এবং আত্মার শুদ্ধি ঘটে বলে মনে করা হয়।
একাদশী পালন করলে কি হয়ঃ
একাদশী পালন করলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী অনেক আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মে একাদশীকে অত্যন্ত পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এই দিনে উপবাস করলে পাপ মোচন হয় ও পূণ্য লাভ হয়। ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভের জন্য একাদশী পালন করা হয়। একাদশী উপবাস মানসিক শান্তি এবং আত্মশুদ্ধির একটি উপায়।
শারীরিকভাবে, একাদশীর উপবাস শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং হজমশক্তি বাড়ায়। ফলমূল ও হালকা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীর ডিটক্সিফাই হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আধ্যাত্মিকভাবে, একাদশী পালন করলে আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়, এবং ভক্তরা তাদের জীবনে ধৈর্য ও সচ্চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারেন।
একাদশী পালনের উপকারিতাঃ
একাদশী পালনের ধর্মীয় ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে একাদশী পালনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা আছে তা হলোঃ
- আধ্যাত্মিক উপকারিতাঃ
- পাপ মোচনঃ হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, একাদশী পালন করলে জীবনের পাপ দূর হয় এবং পূণ্য অর্জিত হয়।
- ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভঃ একাদশী পালন করলে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ কৃপা পাওয়া যায়, যা জীবনের মঙ্গল এবং শান্তি আনয়ন করে।
- আত্মশুদ্ধিঃ উপবাস এবং প্রার্থনার মাধ্যমে মনের শান্তি ও শুদ্ধি ঘটে। যা মানসিকভাবে মানুষকে উন্নত করে।
- শারীরিক উপকারিতাঃ
- শরীর ডিটক্সিফাইঃ একাদশীর উপবাস শরীরের অতিরিক্ত শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
- হজমশক্তি উনীরেঃ হালকা খাবার এবং ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় এবং পেটের সমস্যা কমে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ উপবাসের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- মানসিক উপকারিতাঃ
- মানসিক শান্তিঃ একাদশীর দিনে ধ্যান এবং প্রার্থনা করার ফলে মানসিক চাপ কমে এবং মনোসংযোগ বৃদ্ধি পায়।
- আত্মনিয়ন্ত্রণঃ উপবাস এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এই উপকারিতাগুলোর মাধ্যমে একাদশী পালনের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে সনাতন ধর্মের জন্য এই একাদশী পালন করার নিয়ম গুলো কি-কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এই একাদশীর খাদ্য তালিকা কেমন হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন...........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url