কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরের জন্য এই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি রয়েছে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি নিত্যদিনের জীবনে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের শরীরের শক্তি ও প্রোটিন যোগান দেওয়ার জন্য এই কিসমিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। আমাদের নিত্যদিনের জীবনে এই কিসমিস প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
কিসমিস-খাওয়ার-উপকারিতা-কি |
তাই আসুন জেনে রাখি যে এই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি আমাদের শরীরের জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি ও কীভাবে এই কিসমিস খাওয়া উচিত। বিস্তারিত।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কিঃ
কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়াতে, রক্তশূন্যতা দূর করতে, এবং হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে থাকে। কিসমিস রক্ত পরিষ্কার করে থাকে।
আরো পাড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে আমাদের শরীরে কি উপকার হয় জানুন?
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি হার্টের জন্যও অনেক ভালো। কারণ কিসমিসে থাকা পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং ক্লান্তি দূর হয়।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কিঃ
কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে এর পুষ্টিগুণ থেকে সর্বাধিক উপকার পাওয়া যায়। নিচে কিসমিস খাওয়ার কিছু সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলোঃ
- পানি ভিজিয়ে খাওয়াঃ রাতে ঘুমানোর আগে ৮-১০টি কিসমিস এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই ভেজানো কিসমিস খেয়ে নিন এবং সেই পানি পান করুন। এতে কিসমিসের পুষ্টিগুণ ভালোভাবে শরীরে শোষিত হয়।
- সরাসরি খাওয়াঃ যদি ভিজিয়ে খেতে না চান, তবে দিনে ১০-১৫টি কিসমিস সরাসরি খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরের শক্তি বাড়াবে এবং হজমশক্তি উন্নত করবে।
- খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াঃ কিসমিস বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।যেমনঃ দই, দুধ, ওটমিল, সালাদ বা মিষ্টান্ন। এতে খাবারের পুষ্টিমান বাড়ে এবং স্বাদও উন্নত হয়।
- অতিরিক্ত না খাওয়াঃ অতিরিক্ত কিসমিস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে কিসমিস থেকে পুষ্টি এবং উপকারিতা সঠিকভাবে পাওয়া যাবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়মঃ
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীরে পুষ্টি শোষণ সহজ করে। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে যে রাতে ৮-১০টি কিসমিস পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তার পর ধোয়া কিসমিস এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কিসমিস পুরো রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
আরো পাড়ুনঃ কাঁচা হলুদ খেলে আমাদের শরীরের কেন উজ্জ্বলতা বেড়ে ওঠে জেনে নিন?
যাতে করে এগুলো নরম হয়ে যায় এবং পুষ্টি উপাদান পানিতে মিশে যায়। সকালে খালি পেটে সেই ভেজানো কিসমিসগুলো খান এবং যে পানি তাতে ভিজিয়ে রেখেছিলেন, সেটাও পান করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়, রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরে শক্তি বাড়ে। এই নিয়মে কিসমিস খেলে শরীর কিসমিসের পুষ্টিগুণ ভালোভাবে শোষণ করতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হয়ে থাকে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিতঃ
প্রতিদিন সাধারণত ২০ থেকে ৩০ গ্রাম, অর্থাৎ প্রায় ৮-১০টি কিসমিস খাওয়া উচিত। এটি শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কমায়। নিয়মিত এই পরিমাণে কিসমিস খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়, রক্তশূন্যতা কমে, এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যের সমস্যা থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিসমিসের পরিমাণ নির্ধারণ করা ভালো।
কিসমিস খেলে কি মোটা হয়ঃ
হ্যাঁ, কিসমিস খেলে ওজন বাড়তে পারে, তবে তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে এবং কতটুকু দিনে কিসমিস খাচ্ছেন তার উপর। কিসমিসে প্রাকৃতিক শর্করা ও ক্যালোরি বেশি থাকে, যা শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করতে পারে। নিয়মিত ও পরিমাণে বেশি কিসমিস খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে যদি আপনি শারীরিক পরিশ্রম কম করেন।
কিসমিস-খেলে-কি-মোটা-হয় |
তবে, সঠিক পরিমাণে খেলে কিসমিস পুষ্টি সরবরাহ করে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাওয়া উচিত দিনে।
কিসমিস খাওয়ার অউপকারিতাঃ
কিসমিস খেলে আমাদের শরীর ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই গুলো পেয়ে থাকে কিসমিস থেকে। কিন্তু কিসমিস খাওয়া সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও অতিরিক্ত খাওয়ার কিছু অপকারিতা থাকতে পারে। নিচে কিসমিস খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- রক্তে শর্করা বৃদ্ধিঃ কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধিঃ কিসমিসে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি, তাই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত কিসমিস।
- অম্বল বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যাঃ কিসমিসে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে আমাদের শরীরে।
- দাঁতের ক্ষতিঃ বেশি কিসমিস খেলে দাঁতের ফাঁকে চিনি আটকে থাকতে পারে, যা দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটির কারণ হতে পারে।
- অ্যালার্জিঃ কিছু মানুষের কিসমিস খাওয়ার পর অ্যালার্জি হতে পারে। যেমনঃ ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি।
এ কারণগুলো বিবেচনা করে, কিসমিস নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়ঃ
কিসমিস খাওয়া ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে সরাসরি ত্বক ফর্সা করে না। কিসমিসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং খনিজ রয়েছে, যা ত্বকের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়, রক্ত পরিষ্কার করে, এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে। নিয়মিত কিসমিস খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়তে পারে।
ও ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যাগুলো কমে যেতে পারে আমাদের শরীর থেকে। তবে ত্বক ফর্সা করার জন্য কিসমিসের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক যত্ন গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন কিসমিস খেলে কি হয়ঃ
প্রতিদিন কিসমিস খেলে শরীরে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিসমিসে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া কিসমিসে আয়রন এবং কপার থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আরো পাড়ুনঃ পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অউপকারিতা জেনে নিন?
কিসমিস খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ও কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে। কিসমিস থাকা পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরে শক্তি যোগান দিয়ে থাকে। তাই আমরা যদি নিয়মিত কিসমিস খাই, তাহলে আমরা এই সব উপকার পাবো।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে এই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি আমাদের শরীরে জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি সারাদিনে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url