দূর্গা পূজা প্রথম কে করেন - শারদীয় দূর্গা পূজার রচনা? জেনে রাখুন?
আজকে আমরা জানবো যে সনাতনি হিন্দুদের শারদীয় দূর্গা পূজা প্রথম কে করেছিলেন। যেটি দ্বারা হিন্দুরা এতো আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তার সাথে এটাও জানবো যে শারদীয় দূর্গা পূজার রচনা কেমন। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
সনাতনি হিন্দুদের এই শারদীয় দূর্গা পূজা সব থেকে বড় পূজা হিসাবে পালন করা হয় পুরো বিশ্ব জুড়ে আনন্দ উৎসবের সাথে।
দূর্গা-পূজা-প্রথম-কে-করেন |
তাই আসুন জানি এই দূর্গা পূজা প্রথম কে করেছিলেন যেটি দ্বারা এই দূর্গা পূজার উৎসব প্রত্যেক সনাতনী হিন্দুরা পালন করে থাকে। তার সাথে এটাও জেনে নিন যে শারদীয় দূর্গা পূজার রচনা কেমন হয়। বিস্তারিত
দূর্গা পূজা প্রথম কে করেনঃ
দুর্গা পূজার প্রথম প্রচলন সম্পর্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মতামত রয়েছে। প্রথমত, পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দেবরাজ ইন্দ্র মহিষাসুরকে পরাজিত করতে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। তবে, মানব সমাজে দুর্গা পূজার প্রচলন সম্পর্কে কথিত আছে। যে রাজা কংসনারায়ণ (১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে) পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় প্রথম দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ একাদশী পালন করার নিয়মাবলী ও পূজার আরতি করার কৌশল জেনে নিন?
এছাড়াও, রাজা ( নবকৃষ্ণ দেব ) ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভা বাজার রাজবাড়িতে প্রথমবার বড় পরিসরে দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সর্বজনীন দুর্গা পূজার প্রচলন ঘটে।
শারদীয় দূর্গা পূজার রচনাঃ
শারদীয় দুর্গা পূজা পুরো বিশ্বজুড়ে সনাতনী হিন্দুদের একটি সব থেকে বড় পূজা হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। এর কিছু রচনা জেনে নিন?
- শারদীয় দুর্গা পূজা
শারদীয় দুর্গা পূজা হলো হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এটি মূলত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী পালিত হয় এবং বাঙালি হিন্দু সমাজের অন্যতম বৃহত্তম উৎসব হিসেবে পরিচিত।
- দেবী দুর্গার পূজা
দুর্গা পূজার পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দেবী দুর্গা অসুর মহিষাসুরের অত্যাচার থেকে স্বর্গ ও পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন। মহিষাসুরকে পরাজিত করে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী দুর্গা শক্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। তার দশ হাতে দশটি অস্ত্র এবং সিংহ বাহনে তিনি শত্রুদের বিনাশ করেন। তাই, এই পূজা শক্তির পূজা হিসেবে সমাদৃত।
- উৎসবের দিনগুলি
দুর্গা পূজার মূল পর্ব শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হয়, যা মূলত দেবীর আগমনের সূচনা। সপ্তমী, অষ্টমী, এবং নবমীতে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিটি দিনই বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। দশমীতে "বিজয়া দশমী" উদযাপিত হয়। যেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় এবং লোকেরা একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে, কোলাকুলি করে বিজয়া জানায় দূর্গা মা'কে। এই দিনটি আনন্দ ও বিষাদের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে আসে, কারণ এটি পূজার সমাপ্তি নির্দেশ করে।
- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক
শারদীয় দুর্গা পূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবও। পূজার দিনগুলোতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব মিলে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। প্যান্ডেলগুলোতে দেবী দুর্গার প্রতিমা স্থাপন করা হয় এবং মানুষ উৎসাহের সাথে প্রতিদিন পূজা দেখতে আসে। বাঙালি সমাজে নতুন পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া পূজার সময়ের একটি প্রধান অংশ। ঢাকের আওয়াজ, ধূপের গন্ধ, এবং শঙ্খধ্বনি এই সময়ে পরিবেশকে আরও পবিত্র করে তোলে।
- দুর্গা পূজার গুরুত্ব
দুর্গা পূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক শক্তি এবং ন্যায়ের প্রতীক। এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এবং অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
- উপসংহার
শারদীয় দুর্গা পূজা বাঙালি হিন্দুদের জীবনে শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি একদিকে যেমন ধর্মীয় মূল্যবোধকে সজীব করে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে আনন্দ ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দেয়। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ ভ্রাতৃত্ব, মঙ্গল এবং শান্তির বার্তা নিয়ে একে অপরের সাথে মিলিত হয়।
দূর্গা পূজার মন্ত্র জপঃ
দুর্গা পূজায় দেবী দুর্গার আরাধনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্র জপ করা হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্গা পূজার মন্ত্র উল্লেখ করা হলো পড়ে নিন?
- দুর্গা ধ্যান মন্ত্রঃ
"ওঁ সার্বমঙ্গল মাঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোস্তুতে।।"
অর্থঃ তুমি সব মঙ্গলের উৎস, সর্বশক্তিময়ী, এবং সকল দুঃখ-দুর্দশা নাশ করো। হে গৌরী মা, তোমাকে প্রণাম জানাই।
আরো পড়ুনঃ লক্ষী পূজা পালন করার নিয়মাবলী ও মন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন?
- দুর্গা সপ্তশতী মন্ত্রঃ
"ওঁ জয়ন্তী মাঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দূর্গা ক্ষমা শিবা ধাত্রী স্বाहा স্বধা নমোষ্তুতে।।"
অর্থঃ হে মা, আপনি জয়ন্তী, মাঙ্গলা, কালী, ভদ্রকালী, এবং কপালিনী। আপনি দয়াশীল, শক্তিশালী, এবং সকল জীবের রক্ষাকারী। আপনাকে প্রণাম জানাই।
- অষ্টাক্ষরী দুর্গা মন্ত্রঃ
"ওঁ দুর্গায়ै নমঃ"
অর্থঃ আমি দেবী দুর্গার চরণে প্রণাম জানাই।
- দুর্গা गायত্রী মন্ত্রঃ
"ওঁ কাত্যায়নায় বিদ্মহে, কান্যকুমারী ধীমহি।
তন্নো দুর্গা প্রচোदयাৎ।"
অর্থঃ আমরা কাত্যায়নী দেবীকে জানি, কুমারী দেবীর ধ্যান করি। সেই দেবী আমাদের পথ দেখান।
মহালক্ষ্ম্যাস্তক মন্ত্রঃ
বা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তেশায়ে নমস্তেষে নমস্তেয় নমো নমঃ
এই মন্ত্রগুলো দুর্গা পূজার সময় দেবীর প্রতি ভক্তি নিবেদন করার জন্য জপ করা হয়। এগুলো জপ করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয় এবং দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভ হয়।
শক্তিশালী দূর্গা মন্ত্রঃ
সনাতনীদের হাজার হাজার শ্লোক ও মন্ত্র রয়েছে। তারা বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ধরনের মন্ত্র ব্যবহার করে থাকে দুষ্ঠের দমন করার জন্য। তার মধ্য একটি শক্তিশালী দূর্গা মন্ত্র নিম্নে দেখে নিন?
"ওঁ ঐং হ্রীং ক্রীং চামুণ্ডায়ৈ विच্চে"
অর্থঃ এই মন্ত্রটি দেবী দুর্গার অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি। মন্ত্রটি দেবী চামুণ্ডার শক্তিকে জাগ্রত করে এবং ভক্তদের সুরক্ষা ও শক্তি প্রদান করে। এটি অন্যায় এবং বিপদের সময় দেবী দুর্গার আশীর্বাদ ও সাহায্য পাওয়ার জন্য জপ করা হয়।
এটি নিয়মিত জপ করলে মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস, এবং সমস্ত বিপদ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
দূর্গা প্রণাম মন্ত্রঃ
সনাতনীরা এই দূর্গা মা'কে প্রণাম করার জন্য একটি প্রচালিত মন্ত্র ব্যবহার করে থাকে। যেটি পড়লে দূর্গা মা তার উপরে অনেক সন্তুষ্ঠ হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিন সেই মন্ত্রটি।
"সর্বমঙ্গল মাঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোস্তুতে।।"
আরো পড়ুনঃ সরস্বতী পূজা করে কীভাবে দেবীকে খুশি করবেন ও তার নিয়ম কানুন জেনে নিন?
অর্থঃ যিনি সর্বমঙ্গলের উৎস, যিনি সর্বার্থসাধিনী, শিবের স্ত্রী, তিন চোখওয়ালা গৌরী, এবং নারায়ণীর রূপে পূজিতা, সেই দেবী দুর্গাকে আমি প্রণাম জানাই।
এই মন্ত্রটি দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রণামের জন্য জপ করা হয়, যা ভক্তদের মঙ্গল এবং সমৃদ্ধি প্রদান করে।
দূর্গা পূজার ছবিঃ
অনেক ক্ষেত্রে দূর্গা পূজা তৈরি করার জন্য তার ছবি প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেটি সবার কাছে হয়তো ভাল ছবি থাকে না। তাই দেখে নিন দূর্গা পূজার ছবি।
দূর্গা পূজার ছবি |
দূর্গা পূজা সনাতনীদের একটি মনের মিলন ও আনন্দ উৎসবের প্রতীক। যেটি সবাই মানিয়ে থাকে। এটি প্রত্যক বছর হয়ে থাকে। আর সবাই আনন্দের সাথে এই পূজা পালন করে থাকে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে এই সনাতনীদের দূর্গা পূজা প্রথম কে করেছিলেন। তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে শারদীয় দূর্গা পূজার রচনা কেমন করে পড়তে ও পাল করতে হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url