আগুন থেকে বাঁচার উপায় - আগুন লাগলে কি করণীয়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আপনি কিভবে আগুন থেকে বাঁচার উপায় গুলো জানবেন খুব সহজে। তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আগুন লাগলে কি করণীয় আপনার নিজের সুরক্ষার জন্য। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমাদের দেশে বেশির ভাগ আগুন লেগে থাকে বাড়ি-ঘরে। এই আগুন লাগলে পড়ে মানুষ যেখানে সেখানে ছুটে বেড়ায়। এই ভুল গুলো কখনো করা যাবে না।
আগুন-থেকে-বাঁচার-উপায় |
তাই আজকে আমরা জেনে নিবো যে আগুন থেকে বাঁচার উপায় গুলো কি-কি হতে পারে। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আমাদে আসেপাশে আগুন লাগলে আমাদের কি করণীয় কাজ? সব বিস্তারিত...।
আগুন থেকে বাঁচার উপায়ঃ
আগুন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানা এবং তা অনুসরণ করা খুবই জরুরি। আগুন লাগলে কীভাবে দ্রুত ও নিরাপদে সরে যেতে হবে, তা জানা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, আগুন লাগলে শান্ত থাকতে হবে এবং দ্রুত বের হওয়ার পথ খুঁজতে হবে। ধোঁয়া ও তাপ থেকে রক্ষা পেতে নিচু হয়ে হাঁটতে হবে, কারণ ধোঁয়া উপরে থাকে। দরজা খোলার আগে দরজার হাতল পরীক্ষা করতে হবে, তা গরম থাকলে অন্য রাস্তায় যেতে হবে।
নিরাপদে বের হতে পারলে জরুরি নম্বরে ফোন করে ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে হবে। যদি বাড়ির ভিতরে আটকে পড়া যান। তাহলে জানালা বা ব্যালকনি দিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে হবে এবং সম্ভব হলে ভিজা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। আগুন লাগার আগেই বাড়ির সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত আগুন থেকে বাঁচার প্র্যাকটিস করা উচিত।
যাতে সবাই জানে কীভাবে নিরাপদে বের হতে হবে। এছাড়া, ঘরে স্মোক ডিটেক্টর এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা উচিত। যা আগুনের সূত্রপাত হলে দ্রুত কাজ করতে পারে। আগুন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও প্রস্তুতি থাকলে জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
আগুন লাগলে কি করণীয়ঃ
আমাদের চারপাশে যখন আগুন লাগে তখন দেখা যায় যে মানুষ এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে থাকে। যেটি করা একদম উচিত নয়। তাই আগুন লাগলে নিরাপদে থাকার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- শান্ত থাকাঃ প্রথমেই শান্ত থাকতে হবে এবং দ্রুত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে।
- আলামের শব্দঃ আগুনের সূত্রপাত হলে প্রথমেই আশেপাশের সবাইকে সতর্ক করতে হবে। বড় ধরনের আগুন হলে আগুনের আলাম বাজাতে হবে বা অন্য কোনভাবে সতর্ক করতে হবে।
- ধোঁয়া থেকে রক্ষাঃ ধোঁয়া থেকে বাঁচতে নিচু হয়ে হাঁটতে হবে। ধোঁয়া উপরে থাকে তাই মাটির কাছে থাকার চেষ্টা করতে হবে। না হলে আপনি বেহোশ হয়ে পরতে পারেন।
- দরজা পরীক্ষা করাঃ দরজা খোলার আগে হাত দিয়ে হাতল পরীক্ষা করতে হবে। যদি হাতল গরম থাকে, তবে দরজা খুলবেন না। অন্য পথ দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- নির্গমন পথঃ দ্রুত নিকটস্থ নির্গমন ও সুরক্ষা পথ দিয়ে বাইরে বের হতে হবে। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে।
- জরুরি নম্বরঃ বাইরে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর পর ফায়ার সার্ভিসের জরুরি নম্বরে (৯৯৯) কল করতে হবে এবং আগুনের অবস্থান জানাতে হবে। যাতে করে সাহাজ্যপাবা যায়।
- বিকল্প রাস্তাঃ যদি দরজা দিয়ে বের হওয়া সম্ভব না হয়। তবে জানালা বা ব্যালকনি দিয়ে সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি সম্ভব হয়, মোটা কাপড় বা ভিজা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা উচিত।
- ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারঃ যদি আগুন ছোট হয় এবং আপনার কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকে। তবে সেটি ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে পারেন।
- ধোঁয়াযুক্ত স্থানে না যাওয়াঃ যদি কোনো কক্ষে ধোঁয়া থাকে। তবে সেই কক্ষে না যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- জরুরি জিনিসপত্র সংগ্রহ না করাঃ আগুন লাগার সময় নিজের জীবন রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জরুরি জিনিসপত্র সংগ্রহ করার জন্য সময় ব্যয় না করে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এই নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করলে আগুনের সময় নিরাপদে বের হতে এবং জীবনের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে।
অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালাঃ
অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালা এমন কিছু নির্দেশিকা ও প্রটোকল নিয়ে গঠিত যা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ, দমন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। বাংলাদেশে অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নরূপ....।।
- নির্বাপণ ব্যবস্থাঃ
- প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) থাকতে হবে।
- অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও চেকিং করতে হবে।
- উচ্চ ভবনগুলিতে ফায়ার হোস, স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম, এবং অটোমেটিক অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন করা আবশ্যক।
- নির্গমন পথঃ
- প্রতিটি ভবনে জরুরি নির্গমন পথ (ইমার্জেন্সি এক্সিট) সঠিকভাবে চিহ্নিত ও স্বচ্ছ রাখা জরুরি।
- নির্গমন পথ এবং সিঁড়িগুলি সবসময় খালি রাখতে হবে। যাতে জরুরি অবস্থায় তা ব্যবহার করা যায়।
- নির্গমন পথ এবং সিঁড়ির কাছে আলো এবং সাইনবোর্ড থাকতে হবে যা সহজেই দৃশ্যমান।
- ফায়ার ট্রেনিংঃ
- নিয়মিত ফায়ার ট্রেনিং এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা আবশ্যক। যাতে করে সবাই জানে কিভাবে অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরাপদে বের হতে হয়।
- ফায়ার ড্রিলের সময় কর্মীদের করণীয় এবং সঠিক প্রটোকল শেখানো জরুরি।
- অগ্নি সনাক্তকরণ ও সতর্কীকরণঃ
- ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ফায়ার ডিটেক্টর ও অ্যালার রাখা উচিত। জেননা বিপদ কখনো বলে আসে কারো জীবনে। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
অগ্নি দুর্ঘটনা কিঃ
অগ্নি দুর্ঘটনা হলো এমন একটি অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক ঘটনা যেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের জীবন, সম্পত্তি ও পরিবেশের জন্য গুরুতর ক্ষতি করে। এটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। যেমনঃ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, গ্যাস লিক, রান্নার সময় অসাবধানতা, বা রাসায়নিক পদার্থের অপ্রয়োজনীয় মিশ্রণ।
অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সতর্কতা, সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠতে পারে। তাই অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রম সময়মতো পরিচালনা করা অপরিহার্য।
আগুন থেকে বাঁচার দোয়াঃ
অনেকেই বলে থাকে যে মানুষের জীবনে বিপদ আসে থাকে। আর বিপদ আসবেই এটাই স্বাভাবিক। যেমন আসতে পারে আগুন। আর এই আগুন থেকে বাঁচার জন্য কিছু দোয়া রয়েছে। ইসলামে বিভিন্ন বিপদ ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। আগুন থেকে বাঁচার জন্য একটি দোয়া হলোঃ
আগুন-থেকে-বাঁচার-দোয়া |
দোয়াঃ
اللّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّار
(উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান-নার")
বাংলা অর্থঃ
হে আল্লাহ, আমাকে আগুন (জাহান্নামের) থেকে রক্ষা করুন।
এটি একটি সংক্ষিপ্ত এবং সহজ দোয়া যা আপনি যেকোনো সময় পড়তে পারেন। এছাড়াও, সাধারণত নামাজের পরে বা যেকোনো বিপদের সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়া করা যায়। নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করার পাশাপাশি। বাস্তব জীবনে আগুন প্রতিরোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে কি করণীয়ঃ
আগুন থেকে বাঁচার জন্য ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে। যেটি আপনি মেনে চললে আগুন থেকে ও অগ্নিকান্ড থেকে রক্ষা পেয়ে পারেন খুব সহজে। তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- আগুন প্রতিরোধক সরঞ্জাম স্থাপনঃ প্রতিটি বাড়ি, অফিস, এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগুন নির্বাপক (fire extinguisher), ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র (smoke detector) এবং অগ্নি-নিরাপত্তা অ্যালার্ম স্থাপন করা উচিত। যাতে কোনো কিছু হলে মানুষ সতর্ক হতে পারে।
- বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহারঃ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে এবং নিরাপদে ব্যবহার করুন। কোনো পুরোনো বা ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করবেন না। বৈদ্যুতিক সার্কিটের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রদান করবেন না। না হলে শর্টসার্কেট হতে পারে।
- গ্যাসের নিরাপত্তাঃ গ্যাস সিলিন্ডার বা চুলা ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন। ব্যবহারের পর গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করুন এবং নিয়মিতভাবে গ্যাসের পাইপ এবং সিলিন্ডার পরীক্ষা করুন।
- প্রশিক্ষণঃ পরিবারের সকল সদস্য, কর্মী, এবং কর্মচারীদের আগুন লাগলে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিন। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিন।
- প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাঃ একটি অগ্নিকাণ্ডের সময় কি করণীয় তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং তা পরিবারের সকল সদস্য বা কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করুন। নিয়মিতভাবে অগ্নি-মহড়া (fire drill) পরিচালনা করুন।
- আলোচনার উপকরণঃ বাড়িতে, অফিসে এবং প্রতিষ্ঠানে অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ক পোস্টার ও নির্দেশিকা ঝুলিয়ে রাখুন যাতে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
- দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণঃ দাহ্য পদার্থ, যেমন পেট্রোল, ডিজেল, এবং কেমিক্যাল, নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন এবং এদের ব্যবহার সম্পর্কিত সঠিক নির্দেশিকা মেনে চলুন।
- পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ রান্নাঘর, গ্যারেজ, এবং অন্যান্য স্থান যেখানে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেখানে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং দাহ্য পদার্থ জমতে দেওয়া যাবে না।
এসব পদক্ষেপ মেনে চললে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দ্রুত আগুন নেভানোর উপায় এবং নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
লাখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পরেছেন যে আগুন থেকে বাঁচার উপায় গুলো কি-কি হয়ে থাকে। তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে আগুন লাগলে কি করণীয় সাধারণ জনগণের।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url