টক দই এর উপকারিতা কি - ও খাওয়ার নিয়ম? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের শরীরের জন্য টক দই এর উপকারিতা কি ভাবে কাজে লাগে থাকে। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে টক দই এর ক্ষতিকারক দিক গুলো কি-কি। সব কিছু বিস্তারিত...।
ভূমিকাঃ
টক দই এর উপকারিতা আমরা হয়তো সবাই জানি না সঠিক ভাবে। এর কাজ কি কি সেটাও হয়তো আমরা জানি না। টক দই এর উপকারিতা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে আমাদের জীবনে।
টক-দই-এর-উপকারিতা |
তাই আজকে আমরা জানবো যে টক দই এর উপকারিতা কি এটি খেলে কি হয়। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে টক দই এর ক্ষতিকারক দিক গুলো কি-কি এবং সেটি থেকে কেন বিরতি থাকতে হবে।
টক দই এর উপকারিতাঃ
টক দই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি, সিল্ক, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের হাড় এবং দাঁতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আমাদের কি-কি উপকার হয়?
এছাড়াও, এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা আমাদের পেশী গঠনে সাহায্য করে। টক দই নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক সুস্থ থাকে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে, টক দই আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টক দই এর ক্ষতিকারক দিকঃ
যদিও টক দই অনেক উপকারী, তবে এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। টক দই অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে, যেমন গ্যাস, ফোলাভাব বা ডায়রিয়া, হাঁপানি, সর্দি-কাশি ইত্যাদি। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যারা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট, তাদের জন্য টক দই খেলে পেটের অস্বস্তি বা ফোলাভাব হতে পারে।
টক দইয়ের অতিরিক্ত খাওয়া রক্তে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়ামের কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এছাড়া, কিছু টক দইয়ে অতিরিক্ত চিনি বা প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর নয়। তাই টক দই খাওয়ার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত এবং পরিমিত মাত্রায় খাওয়াই উত্তম।
টক দই দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়ঃ
টক দই এর উপকারিতা আমাদের অনেক কাজে লেগে থাকে। এই টক দই একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী। টক দই দিয়ে ফর্সা হওয়ার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলঃ
টক দই এবং মধু মিশ্রণঃ
এক চামচ টক দইয়ে এক চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
টক দই এবং লেবুর রস মিশ্রণঃ
এক চামচ টক দইয়ে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রসের ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং দাগ কমায়।
টক দই এবং বেসন মিশ্রণঃ
এক চামচ টক দইয়ে দুই চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল করে।
টক দই এবং শসার রস মিশ্রণঃ
এক চামচ টক দইয়ে এক চামচ শসার রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ঠান্ডা এবং ফর্সা করতে সাহায্য করে।
টক দই এবং হলুদ মিশ্রণঃ
এক চামচ টক দইয়ে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হলুদ ত্বকের দাগ দূর করে এবং টক দই ত্বককে উজ্জ্বল করে।
এই উপায়গুলো নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক ফর্সা এবং উজ্জ্বল হবে। তবে ত্বকে নতুন কিছু লাগানোর আগে সবসময় রেসিপি গুলো টেস্ট করে নেওয়া উচিত, যাতে কোনো ধরনের এলার্জি বা প্রতিক্রিয়া না হয়।
টক দই বানানোর রেসিপিঃ
টক দই এর উপকারিতা আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে থাকি। তাই আজকে আমরা জানবো যে টক দই বানানোর রেসিপি খুব সহজ এবং ঘরেই তৈরি করা যায়। নিচে টক দই বানানোর ধাপগুলো দেওয়া হলঃ
- উপকরণঃ
- দুধঃ ১ লিটার
- টক দইঃ ২-৩ টেবিল চামচ (পুরোনো টক দই)
- চিনিঃ পরিমাণমতো (ঐচ্ছিক)
- প্রণালিঃ
- দুধ গরম করার রেসিপি গুলো এক জাইগা করতে হবে।
- একটি পাত্রে দুধ নিন এবং মাঝারি আঁচে চুলায় বসান।
- দুধ ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিয়ে আরও ৫-১০ মিনিট জ্বাল দিন। এতে দুধ কিছুটা ঘন হবে এবং ভালো মানের দই তৈরি হবে।
- যদি দইয়ে একটু মিষ্টি স্বাদ চান তবে এই সময়ে চিনি যোগ করতে পারেন এবং ভালোভাবে মেশান।
- দুধ ঠান্ডা করাঃ
- দুধ ফুটে উঠলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। দুধের তাপমাত্রা ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হবে, যা গরম অনুভূত হবে কিন্তু খুব বেশি গরম নয়। সাধারণত হাত দিয়ে পরীক্ষা করে গরম বুঝতে হবে।
- টক দই মেশানোঃ
- দুধ ঠান্ডা হলে এতে ২-৩ টেবিল চামচ পুরোনো টক দই যোগ করুন।
- দুধ ও দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন যাতে দই সমানভাবে মিশে যায়।
- দই জমাতে দেওয়াঃ
- মিশ্রণটি ঢেকে একটি গরম স্থানে রেখে দিন। সাধারণত ৬-৮ ঘন্টা বা সারা রাত রেখে দিলে দই জমে যাবে।
- শীতকালে দই জমাতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতে পারে। এজন্য দুধের পাত্রকে একটি মোটা কাপড়ে মুড়ে রাখতে পারেন বা আগুনের কাছাকাছি রাখতে পারেন।
- দই ফ্রিজে রাখাঃ
- দই জমে গেলে এটি ফ্রিজে রেখে দিন যাতে আরও ভালোভাবে তৈরি হবে এবং টক স্বাদ আসে।
- পরিবেশনের সময় ফ্রিজ থেকে বের করে উপভোগ করুন।
এই পদ্ধতিতে তৈরি করা টক দই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হবে। টক দই বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন বা সরাসরি খেতে পারেন।
ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়মঃ
টক দই এর উপকারিতা কি সেটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আজকে জানবো যে কিভাবে টক দই খেয়ে আমরা খুব সহজে আমাদের ওজন কমাতে পারবো। আসুন জেনে নি?
টক দই খাওয়ার নিয়মঃ
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ১ কাপ টক দই খান। এতে হজমশক্তি বাড়ে এবং মেটাবলিজম উন্নত হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- দুপুরের খাবারের আগে ১ কাপ টক দই খেতে পারেন। এটি ক্ষুধা কমায় এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।
- টক দই সালাদের ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে সালাদ আরও সুস্বাদু হবে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
- দুপুরের খাবারের পরে বা বিকেলে টক দই স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন। এতে খালি পেটের ক্ষুধা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রাতে খাবারের আগে ১ কাপ টক দই খেতে পারেন। এটি রাতের খাবারে ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।
বিশেষ কিছু নিয়মাবলিঃ
- ওজন কমানোর জন্য টক দইয়ে চিনি বা মিষ্টি মেশাবেন না। আপনার জন্য ফ্লেভারহীন টক দই খাওয়াই উত্তম।
- অতিরিক্ত টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন ১-২ কাপ টক দই যথেষ্ট।
- বাজারের প্রস্তুত করা দইয়ের পরিবর্তে ঘরে তৈরি টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- টক দই খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
এই নিয়মগুলি মেনে চললে টক দই খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব হবে এবং স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
রাতে টক দই খাওয়ার উপকারিতাঃ
টক দই এর উপকারিতা কি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এটি আপনি খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন, রাতে টক দই খাওয়ার উপকারিতা অনেক। টক দই হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক, তাই এটি রাতে খেলে হজমের সমস্যা কমে যায়। রাতে খাবারের পরে টক দই খেলে পেটের গ্যাস ও অম্বল দূর হয় এবং পরিপাকতন্ত্র ও শরীর সুস্থ থাকে। টক দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিকস এবং স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা রাত্রিকালীন আরামের জন্য সহায়ক।
এছাড়া টক দইয়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ডি, সিল্ক, ম্যাগনেসিয়াম থাকে। টক দই এর উপকারিতা অনুজায়ী আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করে এবং পেশির বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে। টক দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের জন্যও ভালো, এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায় ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। রাতে টক দই খাওয়া মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এইসব উপকারিতার জন্য রাতে টক দই খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
টক দই দিয়ে রুপচর্চা করার নিয়মঃ
টক দই এর উপকারিতা কি এবং কিভাবে কাজে লাগে সেটি আমরা জানলাম। এবার জানবো যে টক দই দিয়ে কিভাবে আপনি খুব সহজে নিজের রুপচর্চা করতে পারবেন? আসুন জেনে নি?
- টক দইয়ের ফেস মাস্কঃ
- দুই টেবিল চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে মসৃণ ও ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
টক-দই-দিয়ে-রুপচর্চা-করার-নিয়ম |
- টক দই ও বেসন ফেস মাস্কঃ
- দুই টেবিল চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- টক দই ও হলুদ ফেস মাস্কঃ
- এক টেবিল চামচ টক দই ও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ব্রণ ও দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- টক দইয়ের স্ক্রাবঃ
- দুই টেবিল চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ ওটমিল মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে গোলাকার ভাবে মৃদু করে ঘষে নিন।
- ৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
- টক দইয়ের হেয়ার মাস্কঃ
- এক কাপ টক দই ও একটি ডিম ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
- টক দইয়ের বডি মাস্কঃ
- এক কাপ টক দই ও দুই টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি সারা শরীরে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
এই নিয়মগুলি নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ত্বক ও চুলে আপনি দ্রুত পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন টক দই এর উপকারিতা কি এবং কিভাবে আমরা এটি ব্যবহার করে থাকি। তার সাথে এটাও জানলেন যে টক দই এর ক্ষতিকারক দিক গুলো কি-কি
ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করে দিবেন আপনার প্রিয় মানুষের কাছে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url