সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলো কি কি - ১০ টি মৌলিক অধিকার? জেনে রাখুন বিস্তারিত?

আজকে আমরা জানবো যে আমাদের দেশের আইন দ্বারা সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলো কি-কি রয়েছে। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে সংবিধান কত প্রকার? আসুন জেনে নি বিস্তারিত?

ভূমিকাঃ

আমাদের এই বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ। এই দেশ আইন দ্বারা সম্পসারিত। আমাদের দেশে আইন আছে বলে অপরাধী অপরাধ করতে একটু হলেও ভয় পায় আইন দ্বারা।  

সংবিধানের-মৌলিক-অধিকার-গুলো
সংবিধানের-মৌলিক-অধিকার-গুলো        

তাই আজকে আমরা জানবো যে সংবিধান এর মৌলিক অধিকার নিয়ে কিছু কথা যেটি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে সংবিধান কত প্রকার ও কি-কি? আসুন জানি।

সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলো কি-কিঃ

বাংলাদেশের সংবিধান মৌলিক অধিকারগুলো সংজ্ঞায়িত করে যা প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে এই অধিকারগুলো বর্ণিত হয়েছে। এখানে মৌলিক অধিকারগুলোর একটি সারসংক্ষেপ দেওয়া হলোঃ

  • জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতাঃ 

প্রতিটি নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া ব্যতীত এই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।

  •  সমতার অধিকারঃ

আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার সবার আছে। কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণীর প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

আরো পড়ুনঃ আইন বিভাগের কার্জলয় ও তার ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নিন?

  •  স্বাধীনতা অধিকারঃ

প্রতিটি নাগরিকের বাকস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকার, সংঘের অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা এবং পেশা বা বৃত্তি অনুসরণের স্বাধীনতা রয়েছে।

  • ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ

প্রতিটি নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার, ধর্মীয় উপাসনা ও ধর্ম প্রচারের অধিকার আছে।

  •  সম্পত্তির অধিকারঃ

প্রতিটি নাগরিকের সম্পত্তি অধিকার রয়েছে এবং আইনানুসারে সম্পত্তি অধিকার ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

  •  বৈষম্য বিরোধী অধিকারঃ

ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান বা অন্য কোনো কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

  •  শিক্ষা অধিকারঃ

প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং রাষ্ট্র সকল নাগরিককে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেবে।

  •  জোর করে কাজঃ

কোনো ব্যাক্তিকে শক্তির বলে কোনো ধরনের কাজ করানো যাবে না।

  •  বিচার পাওয়ার অধিকারঃ

প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং তাদের বিচার প্রাপ্তির পথ বন্ধ করা যাবে না।

  •  মানবাধিকার লঙ্ঘন নিষিদ্ধঃ

নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য কোনো ধরণের অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণ নিষিদ্ধ।

এই মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানে সুরক্ষিত এবং কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ হলে, সে আদালতে এই অধিকারগুলোর লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে পারেন।

সংবিধান কত প্রকারঃ

সংবিধান সাধারণত ভাবে ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে দেশের জনগণের জন্য। এই সংবিধান দ্বারা আইনের শাসন সম্পসারিত। 

  • লিখিত সংবিধান
  • অলিখিত সংবিধান

লিখিত সংবিধানঃ
লিখিত সংবিধান হলো একটি দেশের আইনের প্রধান জমা যা লিখিত আকারে প্রণীত হয়। এটি একক জমা হিসাবে বিদ্যমান থাকে এবং এতে দেশের শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি, প্রশাসনিক কাঠামো, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিবরণ দেওয়া থাকে। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, ভারতের সংবিধান, বাংলাদেশের সংবিধান ইত্যাদি।
সংবিধান-কত-প্রকার
সংবিধান-কত-প্রকার        
অলিখিত সংবিধানঃ
অলিখিত সংবিধান হলো সেই সংবিধান যা কোনো নির্দিষ্ট নথির মধ্যে লিখিত নয় বরং এটি বিভিন্ন আইন, রীতিনীতি, প্রথা ও বিচারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গঠিত হয়। এটি বহু জমার সমষ্টি এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমনঃ যুক্তরাজ্যের সংবিধান অলিখিত।

সংবিধান কাকে বলেঃ

সংবিধান হলো একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন বা মূল দলিল যা দেশের শাসন ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিবরণ দেয়। এটি দেশের শাসনতন্ত্রের মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে এবং নাগরিকদের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি আইন প্রণয়ন, বিচারিক কার্যক্রম কাজ করে থাকে।
এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি সরবরাহ করে। সংবিধান সাধারণত একটি লিখিত জমা আকারে থাকে, তবে কিছু দেশের ক্ষেত্রে এটি অলিখিত রীতিনীতি ও প্রথার মাধ্যমে গঠিত হতে পারে। সংবিধান একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং এর মাধ্যমে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো স্থাপিত হয়।

সংবিধান ও সুনাগরিক সুরক্ষাঃ

সংবিধান ও সুনাগরিক সুরক্ষা হলো একটি দেশের স্থিতিশীল ও উন্নত সমাজ গঠনের মৌলিক ভিত্তি। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন যা রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি নির্ধারণ করে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এটি নাগরিকদের সমান অধিকার, স্বাধীনতা, এবং নিরাপত্তা প্রদান করে, যা তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করে জনগণের জন্য।

সুনাগরিক সুরক্ষা বলতে বোঝায় নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা, সম্পত্তির সুরক্ষা, এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা। সংবিধান নাগরিকদের এই সুরক্ষা প্রদান করতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব দেয়। সংবিধানে নির্ধারিত আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষিত হয় এবং যেকোনো অন্যায় বা অপরাধের বিরুদ্ধে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারে।

একটি দেশের সংবিধান যত শক্তিশালী এবং হবে, ততই সুনাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সে দেশে। সংবিধান নাগরিকদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে।

১০টি মৌলিক অধিকারঃ

সংবিধানের মৌলিক অধিকার নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। আইন আছে বলে আমরা নিজেকে এতো সুরক্ষিত মনে করতে পারি। এই সংবিধান দ্বারা আমাদের কিছু মৌলিক অধিকার পেয়ে থাকি। তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

  1. জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতাঃ প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে।
  2. আইনের দৃষ্টিতে সমানতনঃ আইন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সবাই সমান হবে এবং বৈষম্য থাকতে হবে না।
  3. বাক স্বাধীনতনঃ প্রত্যেক নাগরিকের বাক স্বাধীনতা থাকবে এবং মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে।
  4. ধর্মীয় স্বাধীনতনঃ প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে এবং নিজের ধর্ম পালন ও প্রচারের অধিকার থাকবে।
  5. সম্পত্তির অধিকানঃ প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তির অধিকার থাকবে এবং তার সম্পত্তি সুরক্ষিত থাকবে।
  6. নির্বাচনের অধিকারঃ প্রত্যেক নাগরিকের নির্বাচনে অংশগ্রহণের এবং ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে।
  7. সমাজকল্যাণের অধিকারঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নের সুযোগ থাকবে সকল জনগণের জন্য।
  8. শিক্ষার অধিকারঃ প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষার অধিকার থাকবে এবং তারা উপযুক্ত শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে।
  9. বিচার লাভের অধিকারঃ প্রত্যেক নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে এবং বিচার বিভাগ তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
  10. সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাঃ প্রত্যেক নাগরিকের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা থাকবে এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা ও প্রচারের অধিকার থাকবে।
এই মৌলিক অধিকারগুলি দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।

হরতাল কি সংবিধানিক অধিকার?

হরতাল একটি রাজনৈতিক কৌশল যা সাধারণত সরকার বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত হলেও, বাংলাদেশের সংবিধানে সরাসরি হরতালের অধিকার নির্দিষ্ট করা নেই। তবে, সংবিধানের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, সমাবেশ ও মিছিলের অধিকার প্রদান করা হয়েছে যা গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
হরতাল, বিশেষ করে শ্রমিক আন্দোলনে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি গণতন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে গণ্য হয় যেখানে জনগণ তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে। তবে, এটি জনগণের দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। যেমনঃ গুলি চালানো, বোমা বাজি করা, পাথর মারা, মারামারি করা, এই সবের কারণে আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের কারণ হতে পারে।

তাই, যদিও হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ, এর প্রয়োগ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সংযম প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, হরতালের সময় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছনে আমাদের দেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলো কি কি এবং কিভাবে কাজ করে। তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে সংবিধান কত প্রকার ও কি-কি?

ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের কাছে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com








( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )


























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url