ধূমপান ছাড়ার উপায় কি - ধূমপান কি? জেনে নিন বিস্তারিত?
আজকে আমরা জানাবো যে ধূমপান ছাড়ার উপায় গুলো কি-কি এবং কিভাবে খুব সহজে এই ধূমপান থেকে মুক্তি পাবো। তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে ধূমপান ছাড়ার ২০টি কৌশল ল রকম। বিস্তারিত...।
ভূমিকাঃ
আমাদের শরীর খারাপ বা নস্ট করার জন্য এই ধূমপান যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া অবলম্বন প্রকাশ করে থাকে। এই ধূমপান দ্বারা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে থাকে।
ধূমপান-ছাড়ার-উপায়-কি |
তাই আজকে আমরা জানবো যে আমরা কিভাবে এই ক্ষতিকারক ধূমপান থেকে মুক্তি পাবো। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে ধূমপান ছাড়ার ২০টি কৌশল কিভাবে আমাদের জীবনে আমরা ব্যবহার করবো। আসুন জেনে নি?
ধূমপান ছাড়ার উপায় কিঃ
ধূমপান ছাড়ার উপায়গুলো সাধারণত ধৈর্য, ইচ্ছাশক্তি এবং সঠিক পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। প্রথমত, ধূমপান ছাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করুন এবং সেই তারিখের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। দ্বিতীয়ত, ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান এবং নিয়মিতভাবে সেই ক্ষতির কথা মনে করিয়ে দিন। তৃতীয়ত, ধূমপানের পরিবর্তে অন্য কোনো সুস্থ অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেমনঃ চুইংগাম চিবানো, পানি পান করা, আপনার পছন্দের কিছু চকলেট বা চিপস খেতে পারেন, বা হাঁটা চলা করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ব্রেম স্ট্রোক করলে আপনার কি-কি করণীয় কাজ জেনে নিন?
চতুর্থত, ধূমপান করতে ইচ্ছা হলে মনোযোগ অন্য কাজে নিয়ে যান, যেমনঃ ব্যায়াম, বই পড়া, বা গান শোনা। পঞ্চমত, ধূমপান ছাড়ার জন্য পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের সমর্থন নিন। অবশেষে, ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা নিন, যেমন: নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা ঔষধ। এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ধূমপান ছাড়ার পথে সফল হওয়া সম্ভব।
ধূমপান ছাড়ার ২০টি কৌশলঃ
ধূমপান প্রায় সব মানুষ করে থাকে। তাদের কাছে হয়তো এটি ফ্যাশন হতে পারে বা তাদের কাছে এই ধূমপান ভাল লাগতে পারে। কিন্তু সব মানুষ ধূমপান করে না। যারা যারা ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছুক তারা এই ধাপ গুলো অনুসরণ করতে পারেন?
- তারিখ ঠিক করুনঃ ধূমপান ছাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করুন।
- প্রত্যাশা জানুনঃ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান।
- পরিকল্পনা করুনঃ ধূমপান ছাড়ার পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং তা অনুসরণ করুন।
- সহায়তা নিনঃ পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সহায়তা নিন।
- বিকল্প অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ ধূমপানের পরিবর্তে সুস্থ অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেমন: চুইংগাম চিবানো বা পানি পান করা।
- হাঁটাহাঁটি করুনঃ ধূমপান করতে ইচ্ছা হলে হাঁটতে বের হন।
- ব্যায়াম করুনঃ নিয়মিত ব্যায়াম করুন যা মনোযোগ অন্য দিকে সরাতে সাহায্য করবে।
- নতুন শখঃ ধূমপান ছাড়ার সময় নতুন শখ গ্রহণ করুন, যেমন: বই পড়া, গান শোনা।
- গভীর শ্বাস নিনঃ ধূমপান করতে ইচ্ছা হলে গভীর শ্বাস নিন।
- মোটিভেশনাল নোটঃ ধূমপান ছাড়ার মোটিভেশনাল নোটস বা বাক্য লিখে রাখুন।
- নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিঃ নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করতে পারেন।
- মেডিকেশনঃ ধূমপান ছাড়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ করুন।
- ডায়েট পরিবর্তনঃ সুস্থ ডায়েট অনুসরণ করুন যা ধূমপান ছাড়ার ইচ্ছা কমাবে।
- ধূমপানের ক্ষতির ছবি দেখুনঃ ধূমপানের ক্ষতির ছবি বা ভিডিও দেখুন যা সচেতনতা বাড়াবে।
- ক্যাফেইন ও নিকোটিন এড়িয়ে চলুনঃ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ও নিকোটিন এড়িয়ে চলুন যা ধূমপানের ইচ্ছা বাড়ায়।
- শক্ত মনোবলঃ ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্তে শক্ত করে রাখতে হবে নিজের মধ্য।
- ধূমপানের জায়গা এড়িয়ে চলুনঃ ধূমপানের অভ্যাসিক জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন।
- আত্মবিশ্বাসঃ নিজেকে বিশ্বাস করুন যে আপনি ধূমপান ছাড়তে পারবেন।
- ধূমপানহীন পরিবেশ তৈরি করুনঃ নিজের চারপাশে ধূমপানহীন পরিবেশ তৈরি করুন।
- সফলতার উদযাপনঃ ধূমপান ছাড়ার প্রতিটি সফল মুহূর্ত উদযাপন করুন।
এই কৌশলগুলো নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ধূমপান ছাড়ার পথে সফল হওয়া সম্ভব।
ধূমপান প্রতিরোধঃ
ধূমপান প্রতিরোধে সচেতনতা ও শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমেই, স্কুল ও কলেজগুলোতে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যমে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো এবং ধূমপানবিরোধী বিজ্ঞাপন দেখানো উচিত। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে ধূমপান বিরোধী আলোচনা করতে হবে আমাদের সবাইকে। সরকারকে ধূমপানের ওপর উচ্চ কর আরোপ এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরি করতে হবে।
ধূমপান প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। যাতে করে তারা ধূমপানবিরোধী সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি চালাতে সক্ষম হতে পারে। সর্বোপরি, ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা ধূমপান প্রতিরোধে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
ধূমপান ছাড়ার নতুন ঔষুধঃ
ধূমপান ছাড়ার জন্য কিছু নতুন ঔষুধ বাজারে এসেছে যা প্রমাণিতভাবে কার্যকরী হতে পারে। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঔষুধ হলোঃ
- ব্যারেনিক্লিন (Varenicline) এটি একটি প্রেসক্রিপশন ঔষুধ যা ধূমপান ত্যাগে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্কে নিকোটিনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে, ফলে ধূমপানের ইচ্ছা কমে যায় এবং প্রত্যাহারের লক্ষণগুলো হ্রাস পায়।
- বুপ্রোপিওন (Bupropion) এটি একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষুধ যা ধূমপান ত্যাগে সহায়তা করে। এটি ধূমপানের ইচ্ছা কমায় এবং প্রত্যাহারের লক্ষণগুলোকে হ্রাস করে।
- নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT) এ ধরনের থেরাপি নিকোটিনযুক্ত প্যাচ, গাম, লজেঞ্জ, ইনহেলার এবং ন্যাসাল স্প্রে এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এটি শরীরে নিকোটিনের লেভেল বজায় রাখে এবং ধূমপানের অভ্যাস ছাড়তে সাহায্য করে। যেটি আপনি ব্যবহার করলে অবশ্যই ভাল ফল পাবেন।
এই ঔষুধগুলো গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ প্রত্যেকের শরীর ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ঔষুধের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া, ঔষুধের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতা, পারিবারিক সহায়তা এবং মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে পারে।
ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকঃ
ধূমপান একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। এটি ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রধান কারণ। ধূমপান থেকে নিকোটিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে যা ধমনী সংকীর্ণ করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং রক্তনালীতে চর্বি জমা করে। ফলে হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ হার্ট আট্যাক করলে আপনার সঙ্গে সঙ্গে যা যা করণীয় কাজ?
এছাড়াও, ধূমপানের কারণে মুখের ক্যান্সার, গলা ও খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, বরং আশেপাশের মানুষের জন্যও ক্ষতিকর, যা প্যাসিভ স্মোকিং বা পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে ঘটে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এছাড়া, ধূমপান ত্বকের দ্রুত বয়স বাড়ায় এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।
ধূমপানের-ক্ষতিকারক-দিক |
ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তাই আমরা যদি এই ধূমপান ছাড়তে পারি। তাহলে এটি আমাদের ও আমাদের আসেপাশে থাকা মানুষের জন্য ভাল হবে। আমাদের শরীর নিকোটিন মুক্ত থাকবে।
ধূমপান কিঃ
ধূমপান হলো তামাকজাত দ্রব্য যেমন সিগারেট, বিড়ি, সিগার ইত্যাদি পোড়ানো এবং এর ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা। ধূমপানের ফলে তামাকের নিকোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে, যা নেশা সৃষ্টি করে এবং ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। ধূমপান করার ফলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ।
যেমনঃ ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটি শুধু ধূমপায়ীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না আমাদের রক্তের প্রভাব নস্ট করে ফেলতে পারে। এবং আশেপাশের মানুষের স্বাস্থ্যেরও ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর থেকে বিরত থাকা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সহজে ধূমপান ছাড়ার টিপসঃ
সহজে ধূমপান ছাড়তে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। ধূমপান দ্বারা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। এই ধূমপান ছারতে হলে আপনাকে নিকোটিন আসত্তিকে কমানোর চেষ্টা করতে হবে। আর এটি ছাড়ার জন্য আপনাকে মুখের মধ্য মিন্ট নামের একটি চুইংগাম পাওয়া যায় সেটি ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ব্লাড ক্যান্সার হলে আপনি কি করবেন জেনে নিন বিস্তারিত?
এই চুইংগাম আপনার মুখের মধ্য থাকলে আপনার সিগারেটের প্যারা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এই রকম চুইংগান পাওয়া যায়। আপনি চাইলে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটা ব্যবহার করতে পারেন। নিকটিনের ধোয়া এড়িয়ে শুদ্ধ আক্সিজেনের মাত্রা বাড়ান নিজের জীবনে ও নিজের স্বাস্থ্যর জন্য।
কিন্তু আপনি ধূমপান ছাড়ার জন্য যে যে খাবার হোক না কেন সব কিছু লিমিট ভাবে ব্যবহার করবেন। যাতে করে আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য সব কিছু ভাল থাকে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন ধূমপান ছাড়ার উপায় কি ও কি-কি নিয়ম মানতে হবে এই ধূমপান ছাড়ার জন্য। তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে ধূমপান ছাড়ার ২০টি কৌশল কি রকম।
ধূমপান অভিযোগ গুলো আপনার কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করবেন ও ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url