আইনজীবীর কাজ কি - উকিল হওয়ার যোগ্যতা? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে আমাদের দেশের প্রসাশন আইনজীবীর কাজ কি ও কিভাবে এরা আইন দ্বারা কাজ করে থাকে। তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে আইনজীবীর ক্ষমতা কি রকম? আসুন জানি।

ভূমিকাঃ

আমাদের দেশ গণপ্রজাতন্ত্রীর দেশ। আমাদের দেশে আইন দ্বারা সকল প্রকার অপরাধ কাজের শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। আইনজীবী আমাদের দেশের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য করে থাকে।

আইনজীবীর-কাজ-কি
আইনজীবীর-কাজ-কি            

তাই আজকে আমরা জানবো যে এই আইনজীবীর কাজ কি। আইন দ্বারা কিভাবে মানুষ সাহায্য পেয়ে থাকে। এবং আইনজীবীর ক্ষমতা কি ভাবে কাজে লাগানো যায়। আসুন জেনে রাখি?

আইনজীবীর কাজ কিঃ

আইনজীবীর কাজ হলো তাদের বুঝায় যে ব্যাক্তি আইনগত পরামর্শ দেওয়া, আদালতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা এবং আইনের বিভিন্ন শাখায় তাদের সাহায্য করা। একজন আইনজীবী একজন ব্যাক্তির অধিকার রক্ষা করে, মামলা পরিচালনা করে এবং আইনি দলিল প্রস্তুত করে। তারা আদালতে বিভিন্ন মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন, সাক্ষীদের জেরা করেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।

আরো পড়ুনঃ আইনের ধারা কয়টি ও কিভাবে কাজ করে থাকে বিস্তারিত জেনে নিন

আইনজীবীরা ফৌজদারি, দেওয়ানি, পারিবারিক, শ্রম, সংবিধানিক এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক আইনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। এছাড়াও, তারা চুক্তিপত্র, উইল, স্থাবর সম্পত্তি এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো বিভিন্ন আইনি ফাইল পত্র প্রস্তুত করেন। সমাজে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আইনজীবীর ক্ষমতাঃ

আইনজীবীর ক্ষমতা এবং দায়িত্বাবলী আইন এবং আদালতের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন আইনজীবীর প্রধান ক্ষমতাগুলি হলোঃ

  1. আইনগত পরামর্শ দেওয়াঃ আইনজীবীরা যে কোন ব্যাক্তির বিভিন্ন আইনি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেন, তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত করেন এবং আইনানুগ পদক্ষেপের বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
  2. আদালতে প্রতিনিধিত্ব করাঃ আইনজীবীরা অপরাধীর পক্ষ থেকে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন, সাক্ষী ও প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন এবং বিচারকের সামনে তাদের মক্কেলের পক্ষে যুক্তি প্রদান করেন।
  3. আইনি দলিল প্রস্তুত করাঃ আইনজীবীরা বিভিন্ন আইনি দলিল যেমন চুক্তিপত্র, উইল, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি, বিবাহবিচ্ছেদ দলিল ইত্যাদি প্রস্তুত করেন।
  4. আলোচনা ও মধ্যস্থতা করাঃ আইনজীবীরা বিভিন্ন বিরোধের ক্ষেত্রে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করেন যাতে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসা করা যায়।
  5. আইনি গবেষণা করাঃ আইনজীবীরা বিভিন্ন আইনি প্রেক্ষাপট এবং পূর্ববর্তী মামলার রায় বিশ্লেষণ করে, যাতে তারা সঠিকভাবে মামলার প্রস্তুতি নিতে পারেন এবং মক্কেলদের সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।
  6. মামলার স্ট্রাটেজি তৈরি করাঃ আইনজীবীরা মামলা জেতার জন্য কৌশল তৈরি করেন এবং মামলার প্রতিটি ধাপ সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করেন।

আইনজীবীদের এই ক্ষমতাগুলি আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তারা মক্কেলদের অধিকার রক্ষা করেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।

আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতাঃ

আইনজীবী হওয়ার জন্য ও আইনজীবীর কাজ শেখার জন্য আপনাকে কিছু পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

( শিক্ষাগত যোগ্যতা ) একজন আইনজীবী হতে হলে প্রথমে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপর আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি (এলএলবি) অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে এলএলবি ডিগ্রি প্রদানকারী অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

( বার কাউন্সিলের নিবন্ধন ) এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর, বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত হতে হয়।

আরো পড়ুনঃ আইন বিভাগের কার্জলয় ও তার ক্ষমতার কাজগুলো জেনে রাখুন?

( প্রশিক্ষণ ) নিবন্ধনের পর একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যা প্রায় এক বছর ধরে চলে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা ও আদালতে মামলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা যায়।

( ব্যারিস্টার কোর্স ) কেউ যদি বিদেশে ব্যারিস্টার হতে চায়, তাহলে ইংল্যান্ডের বার ভকেশনাল কোর্স (বিভিসি) বা ব্যারিস্টার অ্যাট-ল অব ইনার টেম্পল, মিডল টেম্পল, গ্রেস ইন বা লিঙ্কনস ইন থেকে কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

( কর্মজীবন ) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর, একজন নবীন আইনজীবী হিসেবে আদালতে প্র্যাকটিস শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা ও খ্যাতি অর্জনের মাধ্যমে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হয়ে ওঠা যায়।

এই ধাপগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আইনজীবী হতে পারেন এবং আইন পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।

আইনজীবী হওয়ার বয়সঃ

আইনজীবী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই, তবে সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পর এলএলবি (স্নাতক) ডিগ্রি অর্জন করতে হয়, যা সাধারণত ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগে। এর পর বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

সুতরাং, একজন আইনজীবী হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত ২৪ থেকে ২৬ বছর বয়স লাগে। তবে কেউ যদি ব্যারিস্টার হতে চান, তাহলে বিদেশে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের সময় বিবেচনায় এই বয়সসীমা কিছুটা বাড়তে পারে। সুতরাং, আইনজীবী হতে হলে প্রাথমিকভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং তারপরে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে।

ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেট এর পার্থক্যঃ

ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেট এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নীচে সেই পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

  • ব্যারিস্টারঃ

  1. প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাঃ ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্য বা কমনওয়েলথের কোনো দেশ থেকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (BPTC) সম্পন্ন করতে হয়।
  2. কার্যপরিধিঃ ব্যারিস্টাররা সাধারণত আদালতে সরাসরি মামলার শুনানিতে অংশ নেন এবং উচ্চতর আদালতে মামলা পরিচালনা করেন।
  3. বারস্টার ইন চেম্বারসঃ ব্যারিস্টাররা সাধারণত ব্যারিস্টার চেম্বারসে কাজ করেন, যেখানে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন মামলা নিয়ে কাজ করেন।
  4. পরামর্শঃ ব্যারিস্টাররা আইনগত পরামর্শ দেয় এবং বিশেষ করে মামলা পরিচালনা ও আদালতে যুক্তি প্রদানের জন্য প্রশিক্ষিত হন।

  • অ্যাডভোকেটঃ

  1. প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাঃ অ্যাডভোকেট হতে হলে স্নাতক পর্যায়ে আইন (LLB) ডিগ্রি অর্জন করতে হয় এবং তারপর বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হয়।
  2. কার্যপরিধিঃ অ্যাডভোকেটরা সাধারণত নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সকল পর্যায়ের আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এবং আদালতের বাইরে আইনগত পরামর্শ দেন।
  3. প্র্যাকটিসঃ অ্যাডভোকেটরা স্বতন্ত্রভাবে বা লিগ্যাল ভাবে কাজ করতে পারেন। তারা ফৌজদারি, দেওয়ানি, কোম্পানি ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মামলা পরিচালনা করেন।
  4. পরামর্শ ও প্রতিনিধিঃ অ্যাডভোকেটরা মামলা পরিচালনা ছাড়াও ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন ধরনের আইনগত পরামর্শ দেন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন।

  • তাদের কাজ সমন্ধেঃ

ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেট উভয়েই আইনজীবী হলেও তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কাজের ক্ষেত্রের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ব্যারিস্টার সাধারণত উচ্চতর আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এবং বিশেষভাবে আদালতে যুক্তি প্রদান ও মামলা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত হন। অপরদিকে, অ্যাডভোকেট নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সকল পর্যায়ে মামলা পরিচালনা ও আইনগত পরামর্শ প্রদান করেন।

উকিল হওয়ার যোগ্যতাঃ

উকিল হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নীচে সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ উকিল হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নাগরিকত্ব থাকতে হবে, ২১ বছর এর বেশি হতে হবে, শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (HSC) উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপর আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি ( LLB ) অর্জন করতে হবে। এ ডিগ্রি সাধারণত ৪ বছরের একটি কোর্স। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর, শিক্ষার্থীকে বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

উকিল-হওয়ার-যোগ্যতা
উকিল-হওয়ার-যোগ্যতা            

এ পরীক্ষা পাস করতে হলে আইন, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের উপর দক্ষতা থাকতে হবে। পরীক্ষায় সফল হলে, শিক্ষার্থীকে বার কাউন্সিলের নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে হবে। বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পাওয়ার পর, শিক্ষার্থীকে একটি সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হবে। এই ট্রেনিং সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত চলে, যেখানে শিক্ষার্থী আদালতে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। 

উকিল হওয়ার জন্য কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হয়ঃ

উকিল হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে দেশের নাগরিক হতে হবে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইস,এস,সি পাশ করতে হবে। তার পর কোন একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের স্নাতক ড্রিগি ( Law ) পাশ করতে হবে। তার পরে আপনাকে আইনের বিসয়-বস্তু বইয়ের উপর জ্ঞান রাখতে হবে। আইন শেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায়। সেগুলো আপনাকে পড়ার চেস্টা করতে হবে। এ ছাড়া আপনি কোন ওয়েবসাইট থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নিসন্ধে।

আরো পড়ুনঃ আমাদের দেশের সংবিধানিক মৌলিক অধিকার গুলো জেনে নিন?

এই গুলো শেষ করার পরে আপনাকে কাউন্সিলের আইনজীবী পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এই পরীক্ষাত পাশ করার জন্য আপনার কম করে সময় লাগতে পারে ১২ মাস থেকে ২৪ মাস পর্জন্ত। এই সব কিছু আপনি মেনে চলতে পারলে এক সময় গিয়ে আপনি একজন ভালো মানের উকিল হওয়ার যোগ্যতা রাখবেন।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরছেন যে আইনজীবীর কাজ কি ও এই আইন কিভাবে কাজ করে। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে আইনজীবীর ক্ষমতা কি রকম হয়ে থাকে।

ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার বিচারক প্রিয় মানুষের কাছে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.........www.stylishsm.com






( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url