শরীরে কালো দাগ তোলার উপায় কি - শরীরে কালো দাগ কেন হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে শরীরে কালো দাগ তোলার উপায় কি কিভাবে তুলতে হয়। এবং তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে শরীরে কালো দাগ কেন হয়। সব কিছু বিস্তারিত নিম্নে দেওয়া হলো?
ভূমিকাঃ
আমাদের এই পরিশ্রম করা শরীরে অনেক সময় দেখা যায় যে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ থাকে। এটি আমাদের কিছু ভুল-ভাল কাজে ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
শরীরে-কালো-দাগ-তোলার-উপায় |
তাই আজকে আমরা জানবো যে কিভাবে এই আমাদের শরীর থেকে কালো দাগ দূর করার উপায় কি ও শরীরে কালো দাগ কেন হয়? আসুন শুরু করা যাক।
শরীরে কালো দাগ তোলার উপায়ঃ
শরীরে কালো দাগ সমস্যা খুবই সাধারণ কারণ এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন, ব্রণ, কাটাছেঁড়া, র্যাস, সূর্যের আলো, ইত্যাদি এগুলো দাগ তোলার কিছু ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা সেবা রয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত...।
ঘরোয়া উপায়?
- লেবুর রস
- লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে।
- লেবুর রস সরাসরি দাগের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
- অ্যালোভেরা জেল
- অ্যালোভেরা জেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- তাজা অ্যালোভেরা জেল দাগের উপর প্রতিদিন দুইবার লাগিয়ে রাখুন।
- এটি ত্বকের পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করবে।
- হলুদ পেস্ট
- হলুদে অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ থাকে।
- হলুদের গুঁড়ো দুধের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং দাগের উপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
- মধু
- মধু ত্বককে নরম এবং মসৃণ করে।
- মধু এবং দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাগের উপর লাগিয়ে রাখুন।
- সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
শরীরে কালো দাগ তোলার চিকিৎসা উপায়ঃ
আমাদের শরীরে কালো দাগ হয়তো জন্মগত হয়ে থাকে। আর না হলে বিভিন্ন ধরনের কারণে এই কালো দাগ আমাদের শরীরে হয়ে থাকে। যেটি চিকিৎসা দ্বারা তোলা সম্ভব। আসুন জেনে নি যে কিভাবে কালো দাগ তুলেবন চিকিৎসা দ্বারা।
- ভিটামিন সি সিরাম
- ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের দাগ হালকা করতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন ত্বকের পরিচর্যার রুটিনে ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুন।
- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
- গ্লাইকোলিক অ্যাসিড পিল মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করুন।
- হাইড্রোকুইনোন ক্রিম
- হাইড্রোকুইনোন একটি প্রমাণিত স্কিন লাইটেনিং এজেন্ট।
- ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে এই ক্রিম ব্যবহার করুন।
- সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান।
এই নিয়ম অনুসারে আপনি যদি চিকিৎসা করে নিয়মাবলি মেনে চলতে পারেন। তাহলে দেখাবেন যে আপনার শরীর থেকে এই কালো দাগের সমস্যা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।
শরীরে কালো দাগ কেন হয় ঃ
শরীরে কালো দাগ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এই দাগগুলো সাধারণত ত্বকের ক্ষত, ব্রণ, সূর্যের রশ্মি, ইনফেকশন বা অন্যান্য চর্মরোগের ফলাফল হতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ কারণ দেওয়া হলোঃ
- ব্রাণ
- ব্রণের সংক্রমণ এবং ক্ষত থেকে কালো দাগ হতে পারে।
- ব্রণের সঠিক চিকিৎসা না করলে ত্বকে স্থায়ী দাগ রয়ে যেতে পারে।
- সূর্যের রশ্নি
- অতিরিক্ত সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শ ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা ত্বকে কালো দাগের সৃষ্টি করে।
- সানস্ক্রিন না ব্যবহার করলে এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- কাটা ও আঘাত
- শরীরে কাটা বা আঘাত লাগলে সেখানেও কালো দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
- বিশেষত যদি আঘাতের জায়গাটি সঠিকভাবে সেরে না ওঠে।
- প্রতিরোধের সমাধান
- প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- ত্বক পরিষ্কার রাখুন এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- প্রচুর পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- যদি দাগ গাঢ় হয় বা বাড়তে থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই গুলো নিয়ম আপনি যদি মেনে চলতে পারেন। তাহলে দেখবেন যে কিছু দিনের মধ্য আপনার রোগের সমাধান হয়ে যাবে। আপনার চেহেরা ও রঙ আগের মত হয়ে যাবে।
শরীরে কালো দাগ দূর করার লোশনঃ
শরীরে কালো দাগ দূর করার জন্য লোশন বা ক্রিম অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। এই ধরনের লোশনগুলো সাধারণত ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লোশন ও ক্রিম পাওয়া যায় যা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, পন্ডস হোয়াইট বিউটি ক্রিম, ওলেই হোয়াইট রেডিয়েন্স লাইট পারফেক্টিং সিরাম, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি অ্যাডভান্সড মাল্টি ভিটামিন ক্রিম, নিউট্রোজেনা র্যাপিড টোন রিপেয়ার ডার্ক স্পট করেক্টর, এবং ল্যাকমে পারফেক্ট রেডিয়েন্স সিরাম অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকরী।
এসব লোশন প্রতিদিন সকালে ও রাতে পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে ত্বকের দাগ হালকা হয়ে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। এছাড়া, ত্বকের সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। যাতে করে সূর্যের রশ্মি ত্বকের দাগ আরো গাঢ় না করে। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে এবং উপযুক্ত লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করলে শরীরের কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
মুখে ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায়ঃ
মুখে ব্রণের কালো দাগ দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় আছে যা আপনাকে সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে সহায়তা করতে পারে। নিচে কিছু ঘরোয়া এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ
- লেবুর রস
- লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। একটি তুলার আংশ নিয়ে তাতে লেবুর রস ভিজিয়ে মুখে লাগান। এবং ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে ব্যবহারের আগে ত্বকের সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে নিন।
মুখে-ব্রণের-কালো-দাগ-দূর-করার-উপায় |
- মধু ও দারুচিনি
- মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং দারুচিনিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে। ১ চা চামচ মধু ও ১/২ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- অ্যালোভেরা জেল
- অ্যালোভেরা জেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং হিলিং গুণ রয়েছে যা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন মুখে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন এবং ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- টমেটো ও বেসন
- টমেটোর রসে থাকা লাইকোপিন অ্যাসিড ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। টমেটোর রস ও বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- শসার রস
- শসার রসে থাকা ভিটামিন সি এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। শসার রস মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এই পদ্ধতিগুলি মেনে চললে এবং নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে মুখের ব্রণের কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
এলার্জির কালো দাগ দূর করার উপায়ঃ
এলার্জির কারণে ত্বকে সৃষ্ট কালো দাগ দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমেই, এলার্জির উৎস সনাক্ত বা আপনার যেসব জিনিসে এলার্জি আছে সেটি থেকে দূরে থাকুন। এরপর প্রাকৃতিক উপাদান এবং কিছু ঔষধি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এলার্জির দাগ হালকা করার জন্য লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিস হলে আপনার কি কি করা উচিত?
কারণ, এতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তুলার বল বানিয়ে তাতে লেবুর রসে ভিজিয়ে দাগের ওপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন তার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একইভাবে, অ্যালোভেরা জেল ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে, এটি দিনে ২ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মধু এবং দারুচিনির মিশ্রণও এলার্জির কালো দাগ দূর করতে পারে, এটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও, ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী, রেটিনয়েড ক্রিম, বা ভিটামিন সি সিরা্ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ত্বকের কোষ পুনর্জন্ম ত্বরান্বিত করে এবং দাগ কমায়। ত্বক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। যাতে সূর্যের রশ্মি দাগ আরও গাঢ় না করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে ত্বক হাইড্রেটেড রাখুন। সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত এই পদ্ধতিগুলি মেনে চললে এলার্জির কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ কেন হয়ঃ
শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ত্বকের রঙের পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হল, মেলানিন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। মেলানিনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমাদের ত্বকে কালো দাগ এবং ছোপ ছোপ দেখা দেয়। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে এবং মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় যার ফলে কালো ছোপ ছোপ দাগ সৃষ্টি হতস
এলার্জি একজিমা বা বিভিন্ন ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা থেকেও কালো দাগ হতে পারে। ত্বকের আঘাত বা ক্ষত যদি সঠিকভাবে না সারানো হয় তাহলে সেখানে দাগ পোড়া ছোপ ছোপ থাকতে পারে। কিছু ঔষধি আছে যেগুলো আমাদের গায়ে যদি না ধারে তাহলে প্রতিক্রিয়া থেকেও আমাদের ত্বকে কালো ছোপ দাগ দেখা দিতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন কারণে বিশেষ করে, গর্ভাবস্থা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষুধের ব্যবহারের সময় ত্বকে কালো দাগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বয়সের সাথে সাথে ত্বকে কালো দাগ বা ছোপ দেখা দেয়, যা সাধারণত লিভার স্পট বা এজ স্পট হিসেবে পরিচিত। সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা না করলে এসব দাগ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
লেখকের মক্তব্যঃ
শরীরে কালো দাগ তোলার উপায় কি আসা করি আপনেরা বুঝতে পেরেছেন। তার সাথে সাথে এটাও বুঝতে পেরেছেন যে শরীরে কালো দাগ কেন হয়। এই গুলো আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু কারণে হয়ে থাকে।
ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন ও সবার মাঝে এই ব্লগটি শেয়ার করে দিবেন।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন......www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url