প্রাচীন বাংলার নদ-নদী? বিস্তারিত জেনে নিন?

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী কেমন হয় সেটি দ্বারা আমরা সবাই পরিচিত। নদী আমাদের জীবনে অনেক দিক দিয়ে সাহায্য করে থাকে। তাই আমরা বাংলাদেশকে একটি নদীমাতৃক দেশ বলে থাকি। বাংলাদেশে অনেক সুন্দর সুন্দর নদী-নালা রয়েছে। নদী নিয়ে জড়িত আরো প্রাচীন মানুষের জীবন নদীর প্রভাব ও মেলা রয়েছে।

তাই আজকে আমরা বাংলাদেশের নদ-নদী নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে বাংলাদেশে কত পরিমানে নদী রয়েছে এবং প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব কি বিস্তারিত...।    

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী
প্রাচীন বাংলার নদ-নদী                


ভূমিকাঃ

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী দক্ষিণ মহা এশিয়ার অন্তভুক্ত বাংলাদেশ যাকে বলা হয় নদী মাতৃক দেশ। বাংলাদেশে ধরা যাই ৭০০টা নদ-নদী রয়েছে। যেটি জলরাশি হিসাবে প্রায় ২২,১৫৫ কি.মি জাইগা নিজের আত্তে নিয়ে তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। প্রাচীন বাংলার নদ-নদী বাংলাদেশের মধ্যে সেরা নদী হিসাবে ধরা হয়।

এই নদী গুলর মধ্যে কিছু নদী পরে ভারতবর্ষের ও কিছু নদী পরে বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলার  নদী-নালা প্রচীর।প্রাচীনকালে  এই নদী গুলো ছিলো খুবই খরস্রোতা ও বৃহৎ। এই নদী গুল ছিলো এক সময় খুবই গতি পরিবির্তনশীলতা। এই নদীর প্রভাবে যে জনপদ নিশ্চিহু হয়েছে। তা বর্তমানে অতীতকে ভাবলে খুব সহজে অনুধাবন করা যাই। এই নদীর ফলে জনপদ নিশ্চিহু হয়েছে। তার বিনিময়ে গড়ে ওঠেছে ভিন্ন ভিন্ন  জনপদ।

সভ্যতার নিদর্শন হারিয়ে আগ্রাসী নদীর গতি পরিবর্তন হয়।নদীবাহিত পলিমাটির ফলে আস্তরণে চাপা পড়ে। ফলে নদীর চিহ্নও লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যায়। নতুন নতুন ভূমি জন্ম নেওয়ার ফলে নদীর গতি পরিবর্তন হয়। এই নিয়মিত নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে বাংলার আধিবাসীরা ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। নিম্নে বাংলার আধিবাসীদের উপর নদ-নদীর প্রভাব ও পরিচয় নিম্নরূপ...। 

প্রাচীন বাংলার ভুূপ্রকৃতিঃ

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী ও তার সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব। এই সব নিয়ে আমাদের নদ-নদী গঠিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের মোট আয়োতন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি। ভুপ্রকৃতির কথা শুনলে মনে পরে যায় ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের গারো, আসাম,ত্রিপুরা পাহাড়ি অঞ্চলের কথা।

ভুপ্রকৃতি কি?

উত্তরঃ সমস্ত অঞ্চলের কি ধরনের অবস্থান,আকার-আকৃতি,জলবায়ু,আয়োতন,আবাহাওয়ার গড় সমষ্টিকে ভুপ্রকৃতি বলে।           

প্রাচীন বাংলার ভুপ্রকৃতিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে?

উত্তরঃ প্রাচীন বাংলার ভুপ্রকৃতিকে মোট ৪ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

জনপদ কি?

উত্তরঃ জনপদ হচ্ছে আগের যুগে বাংলার মানুষ প্রাচীনতম থেকে যে পরিমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু ভৌগোলিক পরিবেশে বসবাস করতো। সেই সমষ্টিকে বলা হয় জনপদ।        

প্রাচীন বাংলার ৮টি জনপদের নাম কি?

উত্তরঃ প্রাচীন বাংলার ৮টি জনপদের নাম হলো...।

রাঢ,গৌড়,বঙ্গ,পুন্ড্র,বরেন্দ্রী,রাঢ়-সুহ্ম,তাম্রলিপ্ত, ও হরিকেল ইত্যাদি

বাংলা নামের আবিষ্কার কোথায় থেকে হয়েছে?

উত্তরঃ বাংলা ভাষার আবিষ্কার সাধারণত বঙ্গ ভাষা থেকে এসেছে।

আইন ই আকবরি গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ ঐতিহাসিকবিদ আবুল ফজল ছিলেন।

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী
প্রাচীন বাংলার নদ-নদী    


নদ-নদীর ঐতিহাসিক রচনাঃ

আমাদের পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রাচীন বাংলার নদ নদী প্রচলোনা রয়েছে। এই প্রাচীন যুগের নদীগুলো ভৌগোলিক  অবস্থান ও প্রকৃতির পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। প্রাচীন বাংলার নদ-নদী পৃথিরীর  বৃহতম বদ্বীপ ও ভারতবর্ষের উত্তর থেকে পূর্ব সন্নিহিত কোণে অবস্থিত। বাংলার উত্তরে রয়েছে হিমালয়। এই হিমালয়ের কোল ঘেষে নেপালের তাবাই অঞ্চল ও শিলং মালভূমি দেখা গেছে।

দক্ষিণ সীমাই রয়েছে বঙ্গপসাগরের জলরাশি। তার পুূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা, গারো ও লুসাই পর্বতমালা। পশ্চিমে রাজমহল ও ছোটনাগপুরের পার্বত্যভুমি। বাংলার বেশীর ভাগ ভুখন্ডই গড়ে ওঠেছে নদী-বিধৌত পলি দ্বারা। গঙ্গা,ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদী এই দেশের বুকচিরে প্রভাবিত হয়ে থাকে। নদ-নদী দ্বারা সমতুল অঞ্চলে শস্য উৎপাদিত হয়।

নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন প্রকৃতির সিমার মধ্যে প্রাচীন বাংলার জনপদ গড়ে ওঠেছে। তাই বোঝা যাই যে প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব অনেক বেশী পরিমানে রয়েছে। তা আমরা ঐতিহাসিক নদ-নদীর বিষয় থেকে জানতে পারি।     

প্রাচীন বাংলার নদ-নদীঃ

বাংলার ইতিহাস ও জনজীবনে নদ-নদীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। নদনদীর গতিপ্রকৃতি ও ভেঙ্গে পরার কারণে আজকের যুগ পরিবর্তনে উত্থান-পতন হয়েগেছে। এই নদী ভেঙ্গে পরার কারণে যুগ যুগ থেকে দেখা যাচ্ছে যে বহু নগর-বন্দর-ঘর-বাড়ি ইত্যাদি সব কিছু ধ্বংস হয়েছে এবং কি নতুন ভাবেও অনেক কিছু গড়ে ওঠেছে। নিম্নে কিছু ঐতিহাসিক নদী নিয়ে আলোচনা করা হলো...।

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী
প্রাচীন বাংলার নদ-নদী        

গঙ্গা,ভাগীরথী,ও পদ্মাঃ

গঙ্গা নদী হছে বাংলার নদী গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম একটি নাম করা নদী। এই গঙ্গা নদী রাজমহলের গিরিবর্ত ভেদ করে বাংলার সমতল ভুমিতে গীয়ে প্রবেশ করেছে। আবার দেখা যাই যে মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানায় অবস্থিত ছবঘটির নিকটে গঙ্গা নদী, ভাগিরথি ও পদ্মা নামে প্রধান দুটি নদীর জলধারা বিভক্ত হয়েছে।

ভাগীরথী নদী সোজা দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে জঙ্গিপুর, লালবাগ, কাটাওয়াও কলকাতার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডায়মন্ডহার্ষারের নিকট বঙ্গপসাগর দিয়ে পতিত হয়েছে। এখন বর্তমানে পদ্মাই গঙ্গার প্রধান ধারা তবে অতীতে ভাগীরথী গঙ্গার প্রধান ধারা হিসাবে পালিত হবে।

ব্রহ্মপুত্রঃ

ব্রহ্মপুত্র নদী পুরো এশিয়ার মধ্যে একটি নাম করা নদী। ইতিহাস থেকে জানা গেছে যে ব্রহ্মপুত্র নদীর অর্থ হলো ব্রহ্মার পুত্র। তাই একে ব্রহ্মপুত্র নদ বলা হয়ে থাকে। এর পুরানো নাম ছিলো লৌহিত্য। বাংলার দ্বিতীয় নদী হচ্ছে এই ব্রহ্মপুত্র নদী। তিব্বতের মানসসরোবর হতে উৎপন্ন হয়ে আসামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় ব্রহ্মপুত্র নদী।

রংপুর ও কুচবিহারের সীমান্ত দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করছে এই ব্রহ্মপুত্র নদী। ১৭৮৭ সালের দিকে একটি ভুমিকম্পনের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদী তলদেশের দিকে যাওয়ার কারণে এর দিক পাল্টে যায়। ব্রহ্মপুত্র নদীর দৈঘ্য পাওয়া গেছে ২৮৫০ কিলোমিমিমিটার এবং এর প্রস্থ্য মেপে দেখা গেছে যে ১০৪২৬ কিলোমিটার। এর সাথে আরো নদী মিলিত রয়েছে।

প্রাচীন বাংলার নদ-নদী
প্রাচীন বাংলার নদ-নদী        

মেঘনাঃ

বাংলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে প্রবাহিত প্রধান নদী হচ্ছে এই মেঘনা। তবে রিসার্চ করে দেখা গেছে যে পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের তুলনায় মেঘনা নদী অনেক ছোট। প্রকৃত পক্ষে সুরমা নদীরই দক্ষিণ প্রবাহের নাম এই মেঘনা নদী। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়ার শৈলমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে শ্রীহট্ট অঞ্চলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাকুলির নিকট মেঘনা নাম ধারন করে দক্ষিণ দিকে চলমান রয়েছে।

মেঘনার নামেই বঙ্গপয়সাগর পাতিত হয়েছে। গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমি এই মেঘনাকেই মেগা বলে আভিহিত করেছেন। এই মেঘনা নদী পূর্বা-দক্ষিনাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ,কুমিল্লা,চাদপুর ইত্যাদি। এই নদীর দৈঘ্য সাধারণত ১৫৬ কিলোমিটার এবং এর প্রস্থ্য ৩৪০০ মিটার হিসাব করা দেখা গেছে। এই নদী অনেক গভীরতম একটি নদী।

অজয়,দামোদর,রুপনারায়োণ,দ্বারকেশ্বর ও কাঁসাই নদীঃ
প্রাচীন বাংলার নদ-নদী বাংলার পশ্চিম অঞ্চল থেকে কিছু ছোট ছোট কয়েকটি নদী জামালপুরের পার্বত্যাঞ্চলে থেকে উৎপন্ন হয়েছে। যেমন অজয়,দামোদর,রুপনারায়োণ,দ্বারকেশ্বর ও কাঁসাই নদী ইত্যাদি। এই নদী হচ্ছে যে কালিদাসের রঘুবংশে বর্ণিত কপিশা নদী। এই বাংলার নদী গুলোর মধ্যে তিস্তা নাম খুবই উল্লেখ্যযোগ্য একটি নদী।

এই তিস্তা নদীর হিমালয় নিয়ে উৎপন্ন ভুটান দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ইত্যাদি। জলপাইগুড়ি থেকে তিস্তা নদীর ৩টি প্রভাব দেখা দিয়েছে যথাঃ করতোয়া,আত্রাই ও পুনভর্বা। প্রাচীন যুগে এই করতোয়া নদী ছিল খরস্রোতা ও প্রশান্ত নদী। এই নদী যথাক্রমে পুন্ড্রনগরে গড়ে ওঠেছিলো।

উপসঙ্গহারঃ

সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে বাংলার নামে অনেক গুলো নদী রয়েছে। এই সমস্ত নদী গুলো ব্যাপক ভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব ও প্রাচীন বাংলার নদ-নদী আদিবাসীদের উপর নদী কষ্টের কারণ হলেও নদী ছিলো তাদের কাছে জমির উবর্তার আশির্বাদের প্রতীক। বাঙ্গালিরা খাদ্যভাষ,যাতায়াত ইত্যাদি নদী থেকে তারা অনেক প্রভাবিত ছিলো।

এ ছাড়া নদীর মাছ বাঙ্গালিকে অনেক আমিষ ও পুষ্টি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া যখন কোনো নদী ভেঙ্গে পরে তখন দেখা যাই যে অনেক মানুষ ভয়াবহ দিকে ঝুকে পড়ে। তাই সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় যে নদ-নদী হলো আদিবাসি ও মানুষের জীবনে অনেক দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

নদ-নদীর প্রয়োজনীতাঃ

নদীর পানি মানুষের  জীবন বাচিয়ে থাকে। এই নদী থেকে বাঙ্গালিরা তাদের জীবন নিধারণ করার জন্য ও তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য তারা নদী থেকে মাছ চাষ করে থাকে। বাংলার জেলেরা এখন প্রজন্ত নৌকায় করে মাছ ধরে। এই মাছ ধরে তারা তাদের জীবন চালাই। এই নদী যথাক্রমে ৭০% শতাংশ মাছের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

আমাদের দেশে কৃষিখাত ও মানুষের যোগান মেটাতে নদী ও কৃষিখাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুুমিকা পালন করে থাকে। এই খাত ও অর্থনিতি দেশ গড়ানোর প্রবৃদ্ধির চলমান একটি শক্তি হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। 

লেখকের মক্তব্যঃ

আজকে আমাদের বিষয় ছিলো  যে প্রাচীন বাংলার নদ-নদী ও তার সাথে আমরা আরো জেনেছি যে প্রাচীন মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব কি এবং কতো ধরনের হয়ে থাকে। তা আমরা জেনেছি। আপনাদের যদি আরো কিছু নদ-নদী নিয়ে জনাতে ইচ্ছা করে । তাহলে আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন । আমি চেষ্টা করবো যে আপনার মতামত অনুযায়ী কাজ করার। তাই আজকের মত এখানেই শেষ। আবার দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে আপনাদের সাথে। আরো কিছু জানতে হলে www.stylishsm.com এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।







( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url